ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম

২০১৬-১৭অর্থবছরের তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। যা গত অর্থবছরে ছিলো দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরের বাজেট গত অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৪৫ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা বেশি। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকা এবং প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘দিবাস্বপ্ন’ উল্লেখ করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, এতে জনগণের মাথায় করের বোঝা অনেক বেশি হবে। যা এনবিআর সফলভাবে তুলতে পারবে না। ফলে জিডিপিও ৭ দশমিক ২ শতাংশ পূরণ হবে না।সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রিট্রোসপেক্টিভ অন বাজেট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, বাজেটে সরকারের অনেক বিষয় সাংঘর্ষিক। এতে রাজস্ব আহরণের যে টার্গেট ধরা হয়েছে, তা কখনও পূরণ হওয়ার না। এনবিআরের সে সক্ষমতাও নেই। জনগণের মাথায় বেশি করের বোঝ চাপলে কাঙ্খিত বিনিয়োগ আসবে না। ফলে বাজেট বাস্তবায়নও হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর সালেহ উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ১১২টি সংস্থা আছে যেখান থেকে ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যায়, সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই। এগুলো আদায়ের কোনো নামগন্ধ নেই। শুধু জনগণের পকেট থেকে কিভাবে আদায় করা যায় সে ব্যাপারে ব্যস্ত সরকার।

বাজেটে গুড গর্ভনেন্সেরও অভাব রয়েছে। আইনেরও শাসন নেই। পুলিশের বেতন-ভাতা বাড়ানো হচ্ছে অথচ জজদের সেভাবে বাড়ছে না। এভাবে চলতে থাকলে আইনের শাসন কোথা থেকে আসবে?

তিনি আরও বলেন, শিক্ষায় অধিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বাজেটের প্রায় ১৪ শতাংশ। এটা খুব ভালো দিক। কিন্তু এ টাকার বেশিরভাগই বেতন-ভাতায় চলে যাচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে সেভাবে ব্যয় হচ্ছে না। স্বাস্থ্যখাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা হাস্যকর, মাত্র ৫ দশমিক ১ শতাংশ।

স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়ানোর প্রস্তাব করেন সাবেক এই গর্ভনর।

ব্যাংকিং খাত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ খাত থেকে টাকা চুরি হচ্ছে। অথচ বাজেটে অধিক বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। বরাদ্দ বাদ দিয়ে ব্যাংকগুলোকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে হবে। যদি তা না করা যায়, তবে এই আর্থিক খাত বছর বছর লোকসানে পড়বে। বছর বছর ব্যাংক থেকে টাকা চুরি হবে। ব্যাংকগুলোর জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে।

বাজেটে রুটিনমাফিক কিছু কাজ দেখছি। উন্নয়ন রুটিনমাফিক কাজ নয়। রুটিনের বাইরে থেকেও সফলতা আনতে হবে’- মন্তব্য করেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

তিনি আরও বলেন, বাজেটের সুফল যেন দরিদ্র মানুষের কাছে পৌঁছায়, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। দরিদ্র মানুষ আর্থিকসহ সরকারি সেবাগুলো পেলেন কি-না সরকারের সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। বাজেটের আউটকাম জিডিপি প্রবৃদ্ধি যারা ভাগ করবেন, তারা যেন বেশি না নিয়ে নেন সেটি খেয়াল করতে হবে। জনগণ যেন জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঠিকভাগ পায় সেটিও খেয়াল রাখা জরুরি।

বাজেট আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রহিম বি তালুকদার ও রেজাউর রাজ্জাক প্রমুখ।