স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

এখন থেকে এক মোটরসাইকেলে যাতে তিন জন চলাফেরা করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে কোনো পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।আগের দিন চট্টগ্রামে একটি মোটরসাইকেলের তিন আরোহীর হামলায় এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি। কোনো ধর্মেই হত্যাকাণ্ডের বিধান নেই দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল প্রশ্ন তুলেছেন, আইএসের নাম করে যারা মানুষ হত্যা করছে, তারা আসলে কী চায়? কোন ধরনের রাষ্ট্র কায়েম করতে চায় তারা?

সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে যে পুলিশ অফিসারের স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে সে পুলিশ অফিসার ছিলেন একজন চৌকস অফিসার। জঙ্গি দমনে তার ভূমিকা রয়েছে।এ হত্যাকাণ্ডকে টার্গেট কিলিং দাবি করে মন্ত্রী বলেন, পুলিশের মনোবল ভেঙে দিতেই দুর্বৃত্তরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। কোনো নারীর ওপর এ ধরনের হামলা হবে, সেটা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল।

তিনি বলেন, ঘটনার পর পুলিশ ওই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। আশা করছি, খুব দ্রুত এ ঘটনা জড়িতদের আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।পুলিশ ও পুলিশের পরিবারের লোকজনের নিরাপত্তার ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন,এ ঘটনার পর পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারকে কিভাবে নিরাপদে রাখা যায় সে ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে।এত ঘটনার পরও আপনারা কীভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে দাবি করেন, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যে সমস্ত হত্যার ঘটনা ঘটছে সবই টার্গেট কিলিং। আমেরিকা বা লন্ডনেও এ ধরনের টার্গেট কিলিংয়ের ঘটনা ঘটছে। দেশে ব্যবসা চলছে, রাস্তাঘাট ঠিকমতো চলছে, মানুষ শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সব ডাটাই পজেটিভ রয়েছে।

মন্ত্রী জানান, সম্প্রতি যেসব জঙ্গি হামলা হয়েছে তার মধ্যে ৩৭ মামলার মধ্যে ৩৫ মামলার আসামি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩টির বিচার হয়েছে। ৬টির চার্জশিট দেয়া হয়েছে। আর গ্রেপ্তারকৃত ৪৯ জন দোষ স্বীকার করেছেন। বাকিগুলোরও চার্জশিট দেয়া হচ্ছে।এর পর মন্ত্রী উল্টো সাংবাদিকদেরই প্রশ্ন করেন, তাহলে কী করে বলেন, জঙ্গি হামলার বিচার হচ্ছে না?এসব হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আমেরিকায়ও তো বন্ধ হচ্ছে না।এদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই দাবি করে বলেন, ‘এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে বাংলাদেশের একটা গোষ্ঠীর মদদ রয়েছে। একটা দলের নেতাকে ইতোপূর্বে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ষড়যন্ত্রে অনেক রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ মানুষও জড়িত। প্রমাণ পেলেই আমরা তাদের ধরব।জঙ্গি প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রতিও জোর দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কতগুলো বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছি। তিনজন আরোহী যে মোটরসাইকেলে চলবে তাকে আমরা বাধা দেব, ধরব, চেক করব।

তিন জন নিয়ে মোটরসাইকেল চালাতে দেব না বলে জোর দিয়ে কামাল বলেন, অনেকে ফ্যামিলি নিয়ে যায় এজন্য পুলিশ কিছুটা রিল্যাক্স থাকে।কিন্তু এখন পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়ে দেব, তিন জন কোনো মোটরসাইকেলে কোনোভাবেই উঠতে পারেবেন না।কারণ যতগুলো ঘটনা হচ্ছে, এই মোটরসাইকেলে করেই যাচ্ছে। আমরা অগ্নি-সন্ত্রাসের সময় বলেছিলাম, দুই জনও কোনো মোটরসাইকেলে উঠতে পারবে না। তখন অগ্নি-সন্ত্রাস কমেছিল। এখন আমরা আবার মোটরসাইকেলের উপর কড়াকড়ি আরোপ করছি।

রোববার ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে করে আসা তিন হামলাকারী চট্টগ্রামের জিইসি মোড় সংলগ্ন একটি মিষ্টির দোকানের সামনে এসপি বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে প্রথমে ছুরি মারে এবং পরে মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।ওই মোটরসাইকেলটি এর মধ্যে জব্দ করা হয়েছে বলে পুলিশ যে দাবি করছে, তার কথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বললেন, ওই মোটরসাইকেলটি এর মধ্যেই আমরা উদ্ধার করত সক্ষম হয়েছি।কার নামে মোটরসাইকেলটির নিবন্ধন আছে, কারা এটি ব্যবহার করেছেন সবই পেয়ে যাব। গোয়েন্দা বাহিনী সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়েছে এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনের জন্য। পুলিশপতœী হত্যাকাণ্ডের মোটিভ থেকে শুরু করে এর সঙ্গে জড়িত এবং পরিকল্পনাকারীদের বের করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।