bangladeshi-26হিযবুত তাহরীরের প্রধান সমন্বয়কারী শেখ ওমর শরীফ গত ৩০ মে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। একইদিনে জামিনে বেরিয়েছেন হরকাতুল জেহাদ-হুজি নেতা আবুল কালাম। শহীদ হামজা ব্রিগেডের অর্থদাতা হিসেবে অভিযুক্ত ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা বেরিয়ে গেছেন গত ৭ জুন।

এভাবে গত দুই মাসে চিহ্নিত বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের কমপক্ষে ১৪ জন সদস্য জামিন পেয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছে। জঙ্গি ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান চালালেও জামিনে মুক্ত হওয়া জঙ্গিদের দিকে নজর নেই তাদের।

দেশজুড়ে একের পর এক গুপ্তহত্যার ঘটনায় জঙ্গিদের মাথাচাড়া দিয়ে উঠার বিষয়টি এখন আলোচনার শীর্ষে। চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু আক্তারকে হত্যার পর ১০ দিনের সাঁড়াশি অভিযানও চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু আইনের ফাঁকফোকরে চিহ্নিত কয়েকজন জঙ্গি সদস্য জামিনে বেরিয়ে যাওয়ার তথ্য জানতে পারলেও এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি পুলিশ।

চিহ্নিত জঙ্গিদের জামিনের জন্য চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন আহমেদ দায়ী করেছেন পুলিশকে। তিনি বলেন, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো হয় সন্ত্রাস দমন আইনে। তারাই মামলার এজাহার দাখিল করে, অভিযোগপত্র প্রস্তুত করে, আসামিদের জন্য ফরোয়ার্ডিং দাখিল করে। একমাত্র বিচারের জন্য প্রস্তুত হওয়ার পরই সেটা কৌসুলিদের কাছে যায়। সুতরাং জামিনের দায়টাও পুলিশেরই। তবে নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, জামিন হলেও চিহ্নিত জঙ্গিদের কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে। তারা নিয়মিত থানায় এসে হাজিরা দেবে, এই মর্মে তাদের জামিনে মুক্ত করা হচ্ছে। তাদরে স্থায়ী-অস্থায়ী ঠিকানা থানায় সংরক্ষিত আছে। সুতরাং তারা নজরদারিতে থাকছে।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের আটক ও জামিনে মুক্ত হওয়া জঙ্গিদের নিয়ে ৫৯ জনের একটি তালিকা তৈরি করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। তালিকা পর্যবেক্ষণে ১৪ জনের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ৮ জন, জেএমবির একজন ও হরকাতুল জেহাদের আছে দুজন। জঙ্গি কার্যক্রমে অভিযুক্ত শহীদ হামজা ব্রিগেডের আছে তিনজন।

সূত্রমতে, হিযবুত তাহরীরের জামিনে মুক্ত হওয়া সদস্যরা হল বোয়ালখালীর রায়হানুল ইসলাম ও হাবিবুন্নবী প্রকাশ আশিকুর রহমান, কক্সবাজারের পেকুয়ার আরিফুল ইসলাম ও কুতুবদিয়ার ইফতেখারুল ইসলাম, সীতাকুণ্ডের আব্দুল কাদির, হাটহাজারীর মো.ইসমাইল, জামালপুরের মো.আবুল কালাম এবং চাঁদপুরের শেখ ওমর শরীফ (সাবেক বিচারক, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়ক)।

হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা ৪ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে গেছেন। এর মধ্যে ২০ এপ্রিল একদিনেই বেরিয়ে গেছে হিযবুত তাহরীরের তিন সদস্য। হুজির সদস্য পাবনার মো.আবদুল্লাহ আল আমিন গত ১৩ এপ্রিল এবং জামালপুরের মো.আবুল কালাম ২০ এপ্রিল মুক্তি পেয়েছেন। ৪ মে জেএমবির নীলফামারির মো.আবু হাফিজ চট্টগ্রাম কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে গেছে। শহীদ হামজা ব্রিগেডের হালিশহরের মোছাম্মৎ রহিমা আক্তার ৭ মে, ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা ৭ জুন এবং এনামুল হক ২০ জুন জামিনে বেরিয়ে গেছেন।

কারা কর্মকর্তাদের সূত্রে ‍জানা গেছে, চিহ্নিত প্রত্যেক জঙ্গি সদস্য জামিনে মুক্ত হওয়ার আগে জেলা ও নগর পুলিশের বিশেষ শাখাকে অবহিত করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোন মামলায় পরোয়ানা কিংবা গ্রেফতার দেখানোর প্রয়োজন আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে এসব অভিযুক্ত জঙ্গি সদস্যদের বিষয়ে জোরালো কোন পদক্ষেপ দেখেননি কারা কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এস এম জাহেদ বীরু বলেছেন, চিহ্নিত জঙ্গিরা জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই পুলিশের গাফেলতি আছে। কিন্তু রাষ্ট্রের যারা আইন কর্মকর্তা আছেন তারাও এর দায় এড়াতে পারেন না। পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সারা দেশে জঙ্গিদের পরিচিত স্টাইলে মোট ৪৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যাতে নিহত হয়েছেন ৪৮ জন৷