অপহৃত সাতজনকে নেয়া হয়েছিল গাজীপুরের‌্যাব সদস্য এমদাদুল ও পুর্ণেন্দু বালুকে দড়ি পাকাতে দেখেছেন সৈনিক মিলন মিয়া আর কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের সাদা রঙয়ের প্রাইভেটকারটি গাজীপুরে গাজীপুর-কাপাসিয়া সড়কের রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা এলাকাতে রেখে চলে আসেন হাবিলদার নাজিম উদ্দিন।

সোমবার (২৭ জুন) নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে ওই দুইজন প্রত্যক্ষদর্শী এসব কিছু জানিয়েছে বলে জানান বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন। যিনি একই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ছিলেন।

তাদের মধ্যে হাবিলদার নাজিম উদ্দিন সাক্ষ্য প্রদানের সময়ে আদালতকে জানিয়েছেন তিনি ছিলেন টহল টিমের দায়িত্বে। তার ডিউটি ছিল ফতুল্লায় খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে লিংক রোডে। সেখান থেকে ৭ জনকে অপহরণের পর কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের সাদা রঙয়ের প্রাইভেটকারটি গাজীপুরে গাজীপুর-কাপাসিয়া সড়কের রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা এলাকাতে রেখে চলে আসেন।

অন্যদিকে সৈনিক মিলন মিয়া আদালতে জানান, তিনি আদমজী ক্যাম্পে দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে তাদের সাদা পোশাকে একটি টিম প্রস্তুত ছিল। আদমজী ক্যাম্পের এক কোনায় ওইদিন ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারকৃত র‌্যাব সদস্য এমদাদুল ও পুর্ণেন্দু বালুকে দড়ি পাকাতে দেখেছেন তিনি।

সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা হতে দুপুর ১২টা পযর্ন্ত সাত খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ২৩ আসামির উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে ওই দুইজনের সাক্ষ্য ও জেরা গ্রহণ করা হয়। পরে শুনানি শেষে আদালত আগামী ১১ জুলাই পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, সোমবার র‌্যাব-১১ এর হাবিলদার নাজিমউদ্দিন ও সৈনিক মিলন মিয়ার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ১১ জুলাই পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, সাত খুনের ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ে জামাতা বিজয় কুমার পাল ও অপর বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। দুটি মামলাতেই অভিন্ন সাক্ষী হলো ১২৭জন করে।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন। পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্ত শেষে প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাত খুনের দুটি মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। আর চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে এখনো ১২ জন পলাতক রয়েছে।