তুরস্কে ৮ হাজার পুলিশ অফিসার বরখাস্ত

তুরস্কে সোমবার নতুন করে গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়েছে। দেশটিতে শুক্রবার ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর এ পর্যন্ত ছয় হাজার লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অব্যাহত এ গ্রেফতার অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে,ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে জড়িত সন্দেহে তুরস্ক পুলিশ বাহিনীর অন্তত ৮ হাজার কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ।এছাড়াও দেশটির বিচার বিভাগের সদস্য ও সেনাবাহিনীর জেনারেলসহ আরো অন্তত ৬ হাজার জনকে আটক করা হয়েছে।দেশটির সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে সোমবার (১৮ জুলাই) আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এদিকে, অভ্যুত্থানকারীদের ‘ভাইরাস আখ্যা দিয়ে তাদের মুছে ফেলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান।তিনি এ অভ্যুত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেন জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন। তবে অভ্যুত্থানে নিজের সব ধরনের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেছেন গুলেন।

অপরদিকে, ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর হেলিকপ্টারে করে গ্রিসে পালিয়ে যাওয়ার পথে ৮ তুর্কি সেনা কর্মকর্তাকে আটক করেছে গ্রিস। অনুপ্রবেশের দায়ে সোমবার তাদের গ্রিসের এক আদালতে তোলা হয়।

অন্যদিকে, এরইমধ্যে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান অভ্যুত্থানে জড়িতদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড পাসের বিধান তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছেন।দেশটির প্রেসিডেন্ট অভ্যুত্থানের জন্যে দায়ী রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়া‘ভাইরাস’ নির্মূল করার অঙ্গীকার করেন।গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের শীর্ষ সামরিক সহযোগী কর্ণেল আলী ইয়াজিসি রয়েছেন।তুরস্কের পররাষ্ট্রদপ্তর বলছে, অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় মোট ২৯০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে একশ জনেরও বেশি রয়েছেন যারা অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছে।

গ্রেফতারকালে অভ্যুত্থানের পরিকল্পনাকারী কারো কারো কাছ থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে।

ইস্তাম্বুলে অভ্যুত্থানে নিহতদের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে শোকার্ত অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে এরদোগান বলেন, রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা ভাইরাস নির্মূল করার কাজ অব্যাহত রাখবো। কারণ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ক্যান্সারের মতো ভাইরাসটি রাষ্ট্রকে গ্রাস করেছে।

ব্যর্থ এই অভ্যুত্থানের পেছনে ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেন রয়েছেন বলে এরদোগান তার অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করেন। একইসঙ্গে তাকে বহিষ্কারের জন্যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। তবে গুলেন এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এদিকে এরদোগান মৃত্যুদন্ড পুনর্বহালের বিষয়টি তুরস্ক বিবেচনা করবে বলে জানান। তিনি বলেন, গণতন্ত্রে জনগণ কি বলে তার ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আমি মনে করি সিদ্ধান্তে আসতে আমাদের সরকার বিরোধীদের সঙ্গে কথা বলবে।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা আর দেরি করতে পারি না। কারণ যারা অভ্যুত্থান শুরু করেছে তাদেরকে চড়া মূল্য দিতে হবে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়ার অংশ হিসেবে তুরস্ককে ২০০৪ সালে মৃত্যুদন্ডের বিধান বাতিল করতে হয়েছে। দেশটিতে ১৯৮৪ সালের পর থেকে কারো প্রাণদন্ড কার্যকর করা হয়নি।

সর্বশেষ যেসব গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে সেখানে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় ইনসারলিক বিমান ঘাঁটির কমান্ডার রয়েছেন। এই ঘাঁটি থেকে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিমান হামলা চালানো হয়।

খবরে জানা গেছে, এ পর্যন্ত মোট ৩৬ জেনারেলকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার বার্তা সংস্থা দ্য দোগান বলছে, এদের মধ্যে ১০ জনকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।এরদোগান অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়ার কৃতিত্ব যে জনগণের তাদেরকে রাস্তায় থাকারই আহ্বান জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ একে গণতন্ত্রের জন্যে সতর্কাবস্থা হিসেবে বর্ণনা করেছে।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ তুরস্ককে আইনের শাসন অনুসরণের আহ্বান জানান।ইইউ’র পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান ফেদেরিকা মোঘারিনি সোমবার বলেন, দেশটির সুরক্ষায় আইনের শাসন প্রয়োজন।