মুহিত

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, সরকারি ৮ ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমান ২৮ হাজার ৫৪০ কোটি ৬৭ লাখ। ২০১৬ সালের ৩১ মার্চ স্থিতিভিত্তিক শ্রেণিকৃত ঋণ বিবরণী অনুযায়ী সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে মোট ঋণের পরিমান ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। এ মধ্যে খেলাপীর ঋণের পরিমাণ ২৮ হাজার ৫৪০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।বৃহস্পতিবার বিকেলে দশম জাতীয় সংসদের একাদশ (বাজেট) অধিবেশনে লক্ষীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য এমএ আউয়ালের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী সংসদকে এ তথ্য দেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ব্যাংকে জালিয়াতি রোধে এবং আর্থিক শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কার্যক্রমকে আধুনিকীকরণ করার পাশাপাশি আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।তিনি বৃহস্পতিবার সংসদে সরকারি দলের সদস্য মোহাঃ গোলাম রাব্বানীর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, এর ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও অক্ষুণœ রাখা হবে।।মন্ত্রী বলেন, প্রচলিত পরিদর্শন কার্যক্রমের পরিবর্তে ঝুঁকি ভিত্তিক পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এতে করে ব্যাংকগুলোর যে কোন ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রমকে আগেভাগেই সনাক্তকরণ করে প্রতিকারের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে। যার ফলে ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম বা জালিয়াতির সুযোগ কমে আসবে।মুহিত বলেন, তবে জালিয়াতি বা অনিয়ম সনাক্তকরণ এবং তা প্রতিরোধের প্রাথমিক দায়িত্ব মূলতঃ সংশি¬ষ্ট ব্যাংকগুলোর উপর বর্তায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও এরূপ নির্দেশনা জারি করা হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আর্থিক খাতের অনিয়ম বা জালিয়াতি রোধে এবং এ খাতের সার্বিক শৃংখলা বজায় রেখে আমানতকারীদের স্বার্থ অক্ষুণœ রাখতে সময়ে সময়ে বিভিন্ন নীতিমালা প্রণীত হচ্ছে এবং ব্যাংকগুলো এসব নীতিমালা পরিপালন করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।তিনি বলেন, প্রযোজ্য আইন এবং নীতিমালা পরিপালনে কোন ব্যাংক ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সে ব্যাংকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, নতুন করদাতা শনাক্ত ও আয়কর প্রদানে উৎসাহী করতে সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।তিনি সংসদে ওয়ার্কার্স পার্টির বেগম হাজেরা খাতুনের এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।অর্থমন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্যে ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে সম্মানিত করদাতাগণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন/রি-রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে আয়কর অফিসে না এসেই ঘরে অথবা বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকেই করদাতা হিসেবে নিবন্ধিত হচ্ছেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে টিআইএন সনদের প্রিন্ট নিতে পারছেন।তিনি বলেন, করদাতাদের ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ৭টি বিভাগীয় শহরসহ কুমিল্লা ও বগুড়াতে‘কর তথ্য ও সেবা কেন্দ্র’ চালু করেছে। করদাতাদের সুবিধার্থে আরো ২টি ‘কর তথ্য ও সেবা কেন্দ্র’ যথাক্রমে কর অঞ্চল-৯ ঢাকা’র উত্তরা অফিস এবং যশোহরে চালুর প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।অর্থমন্ত্রী বলেন, কর বিভাগের ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে এবং ৮৬টি উপজেলায় আয়কর অফিস ইতোমধ্যে স্থাপিত হয়েছে এবং সকল উপজেলাতে আয়কর অফিস স্থাপনের বিষয় সরকারের বিবেচনায় রয়েছে।

তিনি বলেন, করদাতাগণকে কর সচেতন ও উৎসাহী করার লক্ষ্যে ২০০৮ সাল থেকে প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় আয়কর দিবস উদযাপন করে আসছে। দিবসটিতে প্রতিটি জেলা ও সিটি কর্পোরেশনের সর্বোচ্চ ৩ জন এবং দীর্ঘমেয়াদী ২ জন করদাতাকে সম্মাননা প্রদানসহ দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তি ও কোম্পানি পর্যায়ের ১০ জন করে মোট ২০ জন করদাতাকে ট্যাক্স কার্ড প্রদান করা হয়।অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, ২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর দেশের প্রতিটি বিভাগ ও জেলায় সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো আয়কর মেলাকে উপজেলায় পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হয়। ওই বছর ৮৬টি উপজেলাসহ মোট ১৫০টি স্পটে আয়কর মেলার আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, এছাড়াও প্রথমবারের মতো ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে ভিন্ন পরিসরে দেশব্যাপী ৭টি বিভাগীয় শহরের ৮টি স্পটে ৩ দিনব্যাপী শীতকালীন আয়কর মেলার আয়োজন করা হয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, করদাতাগণের অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল এবং সঠিকভাবে কর পরিগণনার জন্য বাস্তবায়নাধীন আয়কর সংক্রান্ত এসজিএমপি প্রকল্পটি নির্ধারিত ডিসেম্বর ২০১৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন হলে করদাতাগণ বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে তার আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করতে পারবেন। এছাড়া সহজে অনলাইনে আয়কর প্রদান করার লক্ষ্যে ই-পেমেন্ট কার্যক্রমও চালু রয়েছে।