একেএম শহীদুল হকের

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, আটক জঙ্গিদের কাছ থেকে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। কোনো জঙ্গিকে আটক করলে বলে, আমাকে মেরে ফেলেন। আমি জান্নাতে যাব।শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় এ কথা জানিয়ে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা থেকে তরুণসমাজকে বাঁচাতে আলেমসমাজের প্রতি আহ্বান জানান আইজিপি। আমার কাগজ নামের একটি দৈনিক পত্রিকার ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস দমন: কমিউনিটি পুলিশিং ও গণমাধ্যমের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য দেন সাংবাদিক আশফাকুজ্জামান। এতে অংশ নেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শ্যামসুন্দর শিকদার, তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা এ কে এম শামীম চৌধুরী, একুশে টিভির নির্বাহী সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল প্রমুখ।

শহীদুল হক বলেন, একটি দেশে অন্য কোনো ধর্মের মানুষ থাকতে পারবে নাÑএটি অপপ্রচার। ইসলামি ব্যক্তি, আলেমসমাজ, মাদ্রাসার শিক্ষকদের এ ধরনের অপপ্রচার বন্ধে কাজ করতে হবে।আইজিপি বলেন, জঙ্গিবাদ কোনো স্থানীয় সমস্যা না। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। জঙ্গিরা মানবতার ওপর আঘাত হানে আর ব্লগাররা ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করে।গত মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশান, কল্যাণপুর ও শোলাকিয়া হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী ও ব্লগার হত্যায় সন্দেহভাজন চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল হককে ধরিয়ে দিলে ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কার দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন আইজিপি। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, তামিম ও জিয়া যেখানেই থাকুক, কেউ দেখলে বা সন্ধান পেলে যেন সরাসরি পুলিশকে জানায়। প্রয়োজনে তাঁর (আইজিপি) সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্যদাতাকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। পরিচয় গোপন রাখা হবে।রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার পরে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মানুষের সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান আইজিপি। যে যে অবস্থানে আছে, সেখান থেকে জঙ্গিদের প্রতিহত করার আহ্বান জানান তিনি।জঙ্গিবাদের বিস্তারের কথা বলতে গিয়ে ধর্ম নিয়ে কথা বলাকেও দায়ী করেছেন পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হক।অনুষ্ঠানে বলেন, অতিরিক্ত মুক্তচিন্তা করতে গিয়ে ব্লগাররা আবার বিপদ ডেকে আনছে।ব্লগাররা ধর্মকে-ইসলামকে তারা তাদের মুক্তচিন্তার বিষয় হিসেবে নিয়ে যেভাবে ধর্মের বিরুদ্ধে এবং নবীজীর বিরুদ্ধে কটূক্তি, কদাচার… যেগুলো ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, পড়া যায় না, এগুলো তারা করছে।

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে জঙ্গিদের হামলায় নিহত লেখক,প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা লেখালেখির জন্য আগে থেকে হুমকি পেয়ে আসছিল।অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অনেকের অভিযোগ, সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে লেখালেখির সমালোচনা করে প্রকারান্তরে ধর্মান্ধ জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলাকে বৈধতা দিয়েছে।ব্লগার হত্যাকান্ডগুলোকে সরকার গুরুত্ব দেয়নি বলে গুলশান হামলার মতো ঘটনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে বলে সম্প্রতি বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক আইজিপি শহীদুল বলেন,ব্লগাররা লেখনীর মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানছে, আর জঙ্গিরা মানুষ হত্যা করে সমাজের, রাষ্ট্রের, মানবতার ক্ষতি করছে।

বাংলাদেশের তরুণরা তথপ্রযুক্তি খাতে নিজেদের মেধার স্বাক্ষর রাখার পাশাপাশি কেউ কেউ আবার জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ছে, বলেন তিনি।ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা প্রতিরোধে ইমাম এবং আলেম সমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান পুলিশ মহাপরিদর্শক।আমার কাগজ আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল তরুণদের বিপথে যাওয়ার জন্য বর্তমান সামাজিক অবস্থাকেই অনেকাংশে দায়ী করেন।তারুণ্য বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না, নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে তাদের মধ্েয হাহাকার তৈরি হচ্ছে।সুস্থ রাজনীতি, সুস্থ সংস্কৃতির চর্চার অভাবে তরুণদের মধ্েয জঙ্গিবাদ ঢুকে পড়েছে বলে মন্তব্য করেন বুলবুল।সন্ত্রাসীরা, জঙ্গিরা তাদের (তরুণদের)এই শূন্যতার জায়গাগুলো পূরণ করছে। সুস্থ ধারার কেউ যদি প্রবেশ না করতে পারে, সুস্থ ধারার রাজনীতি যদি প্রবেশ করতে না পারে, সুস্থ ধারার সংস্কৃতি যদি প্রবেশ করতে না পারে, তাহলে সেখানে অসুস্থরা ঢুকে পড়ে। শুধু পুলিশি অভিযান দিয়ে জঙ্গিবাদ দমন করা যাবে না মত জানিয়ে সাংবাদিক ইউনিয়নের এই নেতা বলেন, এজন্য সমাজকে জাগতে হবে। আর সমাজকে জেগে ওঠায় গণমাধ্যমও ভূমিকা রাখতে পারে।