মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের উপর জাতিগত নিপীড়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু অপরাধীর অপরাধের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে এখানে (বাংলাদেশ) যারা সর্বহারা হয়ে চলে আসছে, তাদের স্থান দেয়া হচ্ছে। শিশুদের খাদ্য দেয়া হচ্ছে, চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ সব রকমের সাহায্য করা হচ্ছে। কিন্তু, আমরা দুয়ার (সীমান্ত) খুলে দিয়ে তাদের এখানে আসার অবারিত সুযোগ দিতে পারি না। কারণ তারা আলাদা রাষ্ট্র, এটা (বাংলাদেশ) আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র।

বুধবার বিকালে জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখানে (ঢাকায়) নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এ ব্যাপারে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা সেখানে এমন কিছু সৃষ্টি করবে না, যাতে সেখানকার লোকজন বাংলাদেশে চলে আসে।তিনি সংসদে বলেছেন, আমরা দুয়ার খুলে দিয়ে কাউকে ¯্রােতের মতো আসার সুযোগ করে দিতে পারি না।মিয়ানমারে নির্যাতিত মুসলিম জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দিতে দেশে-বিদেশে আহ্বানের মধ্যে একথা বললেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্েয তিন মাসে আগে সেনা অভিযান শুরুর পর বহু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিতে বাংলাদেশ সীমান্তে ভিড় করলেও প্রতিদিনই বিজিবি তাদের ফেরত পাঠাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ঢুকতে না দিতে বসানো হয়েছে কড়া পাহারা।জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপিও মানবিক কারণে রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

গত শতকের ৮০ এর দশকের শেষ ভাগে মিয়ানমারে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশে আশ্রয় পায়। এরপর কয়েক দফায় আরও রোহিঙ্গা ঢুকে পড়ে বাংলাদেশে।শরণার্থী হিসেবে থাকা রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়া এবং জালিয়াতি করে বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণেœর বিষয়টিতে জোর দিয়ে ২০১২ সালে নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের আর ঢুকতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শেখ হাসিনার সরকার। এবারও একই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।সংসদে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের এক প্রশ্নে রোহিঙ্গা প্রশ্নে সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।নানা ফাঁক-ফোকর গলে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গাদের জীবনধারণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আসার মতো পরিস্থিতি যেন না হয়, সেই পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলবের বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, তাকে বলা হয়েছে, তারা এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি যেন না করে, যাতে ওখান থেকে রিফিউজি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে।বাংলদেশের বিজিবি এবং মিয়ানমারে বর্ডার পুলিশের মধ্যে বৈঠকের কথাও জানান সরকার প্রধান।আমরা যেটুকু করণীয় তা করে যাচ্ছি। মানবতার দিকে আমাদের তাকাতে হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশে (মিয়ানমার) যেন কোনো অঘটন না ঘটে, সেজন্যও ব্যবস্থা নিচ্ছি।রোহিঙ্গাদের সাম্প্রতিক দমন-পীড়নের আগে মিয়ানমারে সীমান্ত চৌকিতে হামলাকারীদের কেউ বা কারা বাংলাদেশে পালিয়ে এলে তাদের ধরে ফেরত দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশে একটা ঘটনা ঘটেছে। নয়জন বর্ডার পুলিশকে হত্যা করেছে। আর্মি ট্রাকে হামলা করেছে। তারপর এই ঘটনাটা (সেনা অভিযান) ঘটেছে।গত ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের তিনটি সীমান্ত পোস্টে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের’ হামলায় সে দেশের নয় সীমান্ত পুলিশের মৃত্যুর পর রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা-অধ্যুষিত জেলাগুলোয় শুরু হয় সেনাবাহিনীর অভিযান।যারা মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশ হত্যা এবং সেনাবাহিনীর উপর হামলার ঘটনায় জড়িত, তাদের মধ্যে কেউ বাংলাদেশে আত্মগোপন করে থাকলে তাদের আটক করে সেদেশে ফেরত পাঠাতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।যারা এই ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা আমাদের এখানে কোথায় লুকিয়ে আছে কি না, তাদের আমরা মিয়ানমার পুলিশের হাতে হস্তান্তর করব। তাদের কোনো স্থান হবে না। আমাদের বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে, আমাদের প্রতিবেশেী দেশে কোনো অঘটন ঘটাক, এটা আমরা মেনে নেব না।মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সেনাবাহিনীর অভিযানে রাখাইন প্রদেশে ১২শ’র বেশি ঘর জ¦ালিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বিচারে হত্যা-ধর্ষণ চলছে।এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার জন্য সন্ত্রাসীদের দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা এই ধরনের (পুলিশ-সেনাদের উপর হামলা) ঘটনা ঘটাল, তাদের জন্য হাজার হাজার নারী-পুরুষ কষ্ট পাচ্ছে।এই অসহায় নারী-পুরুষের কোনো অপরাধ ছিল না। অপরাধ যারা এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটিয়েছে, যারা এই ধরনের অবস্থাটা তৈরি করেছে।