বিএনপি সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের নাম প্রস্তাব করেনি বলে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার নিরপেক্ষ, যোগ্য ও সাহসী নির্বাচন কমিশন।আর এ ধরনের কমিশন গঠনের জন্য নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি করতে হবে। সে প্রস্তাবই বিএনপি নেত্রী রাষ্ট্রপতিকে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ইয়ুথ ফোরাম আয়োজিত আরাফাত রহমান কোকো’র ২য় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।সার্চ কমিটি গঠনে রাষ্ট্রপ্রতির কাছে বিএনপি কে এম হাসানের নাম প্রস্তাব করেছে বলে যে কথা ছড়ানো হচ্ছে তা সত্য নয় বলে দাবি করেন নজরুল ইসলাম খান।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে সার্চ কমিটি গঠনে কে এম হাসানের নাম প্রস্তাব করেনি বিএনপি। অথচ ওবায়দুল কাদের বলেছেন আমরা ওই নাম প্রস্তাব করেছি। এটা সত্য নয়।

প্রসঙ্গত, ওবায়দুল কাদের, মির্জা ফখরুলসাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটিতে রাখতে বিএনপি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রস্তাব দিয়েছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।রোববার ঢাকায় মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত যুবলীগের এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের এ দাবি করেন।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা ও অনভিপ্রেত। এটি একেবারেই ঠিক নয়। বিএনপির চেয়ারপারসন রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো নাম দিয়েছেন কি দেননি, সেটা তো রাষ্ট্রপতিই বলতে পারবেন। অন্য কেউ নয়।শনিবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী ও মেরুদ-হীন লোক দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।এর জবাবে ওবায়দুল কাদের গতকাল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের অন্তর্গত ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আপনার সঙ্গে আমি দ্বিমত করছি না। সবিনয়ে বলছি, আপনি যে আজিজ মার্কা ইসি করেছিলেন, সেই এম এ আজিজ কি বিএনপির লোক ছিলেন না? আপনি যাঁকে প্রধান উপদেষ্টা করতে চেয়েছিলেন, সেই সাবেক বিচারপতি কে এম হাসানকে সার্চ কমিটিতে রাখার জন্য নাম প্রস্তাব করেছেন। সেই হাসান সাহেব কি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন না? তাহলে কোনটা পক্ষ, কোনটা নিরপেক্ষ?এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই বক্তব্যে সন্দেহ জাগা অমূলক নয় যে তিনি রাষ্ট্রপতিকে বিতর্কিত করতে, রাষ্ট্রপতির সুনাম ক্ষুণœ করতে এমন কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের এ কথা বলার কেউ নন। রাষ্ট্রপতি নিশ্চয়ই তাঁর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেননি। ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।যুবলীগের ওই অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকার হস্তক্ষেপ করবে না। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে গত ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির আলোচনা হয়। বিএনপির পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই দিন বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র থেকে জানা যায়, বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের প্রস্তাবের আলোকে নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটির জন্য ১০ জনের একটি তালিকা রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দলটি চায় না কোনোভাবে নামগুলো এখনই প্রকাশ হোক। কারণ, বিএনপি মনে করে, নাম প্রকাশ হলে তাঁদের নিয়ে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হবে। এতে যাঁদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে, তাঁরা বিব্রত হতে পারেন। এ জন্য প্রস্তাবিত নামগুলোর বিষয়ে বিএনপি গোপনীয়তা অবলম্বন করছে।এ বিষয়ে ওই দিন সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সরাসরি কোনো উত্তর দেননি। তিনি বলেছিলেন, এ বিষয়ে খালেদা জিয়া সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছেন।

তবে দলটির একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, বিএনপির প্রস্তাব অনুযায়ী, বাছাই কমিটি হবে পাঁচ সদস্যের। এর আহ্বায়ক হবেন অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মক্ষম একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি (জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে)। অন্য সদস্যরা হবেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি, সরকারের অবসরপ্রাপ্ত একজন সচিব (তবে অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন, এমন কোনো কর্মকর্তা বাছাই কমিটির সদস্য হতে পারবেন না), বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত একজন অধ্যাপক বা দলনিরপেক্ষ সর্বজনশ্রদ্ধেয় একজন বিশিষ্ট নাগরিক এবং সর্বজনশ্রদ্ধেয় দলনিরপেক্ষক্ষ একজন জ্যেষ্ঠ নারী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক প্রধান বিচারপতিদের যাঁরা বেঁচে আছেন তাঁদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে আছেন কে এম হাসান ৫ নম্বরে। তাঁর আগে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে আছেন সাহাবুদ্দীন আহমদ, এ টি এম আফজাল, লতিফুর রহমান ও মাহমুদূল আমীন চৌধুরী।এ সময় তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের একটি বক্তব্যের কথা তুলে ধরে বলেন, ওবায়দুল কাদের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন- ক্ষমতা হারালে জানে বাঁচবেন না। তার এই কথায় প্রমাণ হয়, আওয়ামী লীগ সীমাহীন দুর্নীতি করেছে। আওয়ামী লীগ নিজেরাই জানে তারা অন্যায় করেছে, নির্যাতন করছে, দুর্নীতি করেছে, জুলুম করেছে। আর ক্ষমতা হারালে তা প্রমাণ হয়ে যাবে।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন ভয়ে ও অস্থিরতায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কোথায় কী কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। যদি আমরা কে এম হাসানের নাম প্রস্তাব করেও থাকি তাহলেও তো তাদের বিষয়টি জানার কথা নয়।

এ বিষয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, কে এম হাসান প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের যা বললেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমাদের কাছেও খবর আছে তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে সবচেয়ে অসভ্য নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. জাবেদ আলীর নাম প্রস্তাব করেছে। সেসব বিষয় নিয়ে তো হৈচৈ করছি না। কারণ, রাষ্ট্রপতির প্রতি আমাদের আস্থা আছে। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপতিকে বিতর্কিত করতে এসব কথা বার্তা ছড়াচ্ছে।জিয়াপুত্র আরাফাত রহমান কোকো প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম খান বলেন, কোকো ছিলেন সাধারণ নাগরিক। রাজনীতির অঙ্গনের কেউ না হয়েও সরকারের রোষাণলে পড়েছিলেন। কোকোর অবদানের কথা স্মরণ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘কোকো বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে বিরাট পরিবর্তন এনে দিয়ে গেছেন। আজ দেশে ক্রিকেটের যে বিশ্বব্যাপী নাম তার প্রথম ধাপই শুরু হয়েছে প্রচার বিমুখ কোকোর হাত ধরে।ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ, জাতীয়তাবাদী তাঁতী দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বীর উত্তম শহীদ জিয়া শিক্ষা ও গভেষণা পরিষদের সভাপতি কাজী মনিরুজামান মনির প্রমুখ।