বিএনপি ভাইস-চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, এক থেকে দেড় বছরের মধ্যেই বিএনপি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবে এটা স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। কারণ বিএনপি ক্ষমতার দিকে ক্রমশও অগ্রসর হচ্ছে, পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে।শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন আয়োজিত ভারতের সঙ্গে সার্বভৌমত্ব বিরোধী চুক্তির প্রতিবাদে এবং তিস্তাসহ ৫৪ টি অভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্যার দাবিতে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

দুদু বলেন, বিএনপি দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জয় লাভ করেছে। সর্বশেষ ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও জয় লাভ করতো যদি না ১/১১ এর সরকার ক্ষমতায় না আসতো।ভারতের সেনা প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতের এক মাসে দুই দফা ঢাকা সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি।মানববন্ধন কর্মসূচিতে বলেন, ভারতের সেনা প্রধান মি. রাওয়াত আগামী ২৭ এপ্রিল আবারও আসছেন। গতমাসেই তিনি ঘুরে গেছেন। এত ঘন ঘন ভারতের সেনাপ্রধানের কেন আসা লাগছে?প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের আগে গত ৩১ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল ঢাকা সফর করেন জেনারেল বিপিন রাওয়াত। আর এবার ২৭ থেকে ৩০ এপ্রিল তার এই সফর হবে বলে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার খবর।

প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। বাংলাদেশকে সামরিক সরঞ্জাম কিনতে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে ভারত, যার বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি। শামসুজ্জামান দুদু বলেন,তিনি পুরাতন অস্ত্র আমাদের কাছে চাপিয়ে দেয়ার জন্য আসবেন? নাকি অন্য কোনো শলা-পরামর্শ করার জন্য আসবেন? এই যাওয়া-আসা, এই প্রতিরক্ষা সমঝোতা আমাদেরকে শঙ্কিত করছে।তিনি বলেন, এই শঙ্কা বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র’ নিয়ে।ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতাসহ যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলো আগামী সংসদ অধিবেশনে উপস্থাপনের দাবি জানান সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির এই নেতা।তিনি বলেন, এসব সমঝোতা বা চুক্তি প্রকাশ না করলে মানুষ যে এসবকে গোলামীর চুক্তি মনে করছে, সেই ধারণা আরও দৃঢ় হবে।

ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারক সাক্ষরের প্রতিবাদে এবং তিস্তাসহ ৫৪টি নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।ভারত থেকে আসা পানির ঢল ও অতিবৃষ্টিতে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোণার হাওর অঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি নেতা দুদু বলেন, সকালেও তিনি সুনামগঞ্জে দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। পসখানে এক ধরনের মড়ক লেগে গেছে। হাঁস থেকে শুরু করে মাছের মৃত্যু এবং প্রাকৃতিক যে বিপর্য্য় ওখানে দেখা দিয়েছে, হয়ত তা মহামারী আকারে মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।

হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তারপরও ত্রাণমন্ত্রী ও ত্রাণ সচিব গিয়ে উপহাস ও মানবতাবিরোধী কথা-বার্তা বলেন, তাদের তো আইনে সোপর্দ করা ছাড়া আর কোনো পথ আছে বলে আমার মনে হয় না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সাংবাদিকদের সামনে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করেন।তিনি বলেন, এতদিন ধরে সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জে অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ। খালেদা জিয়া ঢাকায় বসে বড় বড় কথা বলছেন।আওয়ামী লীগ সরকার সত্যিই দেশের উন্নয়ন করে থাকলে কেন তারা আগাম নির্বাচন দিতে চায় না- সেই প্রশ্ন তোলেন দুদু।তিনি বলেন, সর্বশেষ নির্বাচনেও বিএনপি জয়ী হত যদি ১/১১ এর মধ্য দিয়ে একটি ভারত আশ্রিত শক্তি না থাকত।আওয়ামী লীগ নেতারা আবারও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মত নির্বাচন করতে চাইলে তা দুঃস্বপ্নে’ পরিণত হবে বলে হুঁশিয়ার করেন এই বিএনপি নেতা।

স্বাধীনতা অধিকার আন্দোলন’ এর সভাপতি কাজী মনিাংজ্জামানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ন্যাপ মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, কল্যাণ পার্টির সহসভাপতি শাহিদুর রহমান তামান্না মানববন্ধনে বক্তব্য দেন।