গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে শনিবার ফুলে ফুলে বিন¤্র শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে চলছে গত বছরের ১ জুলাই জঙ্গি হামলায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ। সকাল থেকেই থমথমে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়ক। একের পর এক আসছেন বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠনকর্মী ও কূটনীতিকেরা।শনিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে হোলি আর্টিজানের ভেতরে গেছেন জাপানের রাষ্ট্রদূত। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের কিছুক্ষণ পর তিনি চলে যান।গুলশানের কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনরত পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) মো. জসীমউদ্দিন বলেন, জাপানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে জাইকার প্রতিনিধিরাও ছিলেন। ইতালির রাষ্ট্রদূতেরও আসার কথা। তাঁদের দলের সঙ্গে নিহত একজনের স্বজন থাকার কথা রয়েছে।

৭৯ নম্বর সড়কে যাওয়ার তিনটি পথেই ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। পুলিশের গাড়ি ও সীমিত কয়েকটি গাড়ি ছাড়া আর কোনো গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সড়কের মোড়ে গণমাধ্যমকর্মীরা রয়েছেন। তবে তাঁদের ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি।শ্রদ্ধা জানানোর পর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হোলি আর্টিজানের ঘটনা আমাদের জীবন বদলে দিয়েছিল। আমাদের আতঙ্কগ্রস্ত করেছিল। সেদিন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে কেউ ভাবেনি, বাংলাদেশ ওই অবস্থা থেকে ফিরে আসতে পারবে। আমি আজকে গর্ববোধ করিÑশেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের পুলিশ বাহিনী অসমসাহসিকতায় এই উগ্রবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীকে মোকাবিলা করছে। সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফ্রান্সের পুলিশ যা করতে পারেনি, লন্ডনের পুলিশ যা করতে পারেনি, আমাদের পুলিশবাহিনী তা-ই করতে পেরেছে। ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে হবে বলে তিনি জানান।একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ সফল। কিন্তু জঙ্গি নির্মূলে আদর্শিক লড়াই চালাতে হবে। শক্তি দিয়ে জঙ্গিবাদ নির্মূল সম্ভব নয়। সাময়িকভাবে সম্ভব হলেও জামায়াত-শিবির, মওদুদীবাদী, ওয়াহাবিবাদী ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এরাই আসলে মানুষকে ধর্মের বিষয়ে ভুল বার্তা দিচ্ছে।বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী হোলি আর্টিজান বেকারিতে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। উগ্রবাদীদের হাত আছে এখানে। প্রগতির ক্ষেত্রে এটি একটি কলঙ্কজনক তিলক। সারা দেশে উগ্রবাদীদের নেটওয়ার্ক চেপে বসেছে। এটি নস্যাৎ করতে সরকারের সামগ্রিক ও সমষ্টিগত পদক্ষেপ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল এগিয়ে আসছে না বলে অভিযোগ করেন রিজভী।বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) আছাদুজ্জামান মিয়া, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন ও অপারেশনস) মো. মোখলেসুর রহমান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অসাম্প্রদায়িক চেতনার। সেই জায়গাটিতে হোলি আর্টিজানের ঘটনা বড় আঘাত। আমরা কখনই ভাবিনি এ রকম একটি ঘটনা ঘটতে পারে। জাতি এ জন্য প্রস্তুত ছিল না।

এদিকে, গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে চিহ্নিত হামলাকারীরা গুলি ও বোমায় নিহত হয়েছিলেন বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।বাংলাদেশে নজিরবিহীন এই হামলার ঠিক এক বছর পর শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করে।ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, নিহত ছয়জনের প্রত্যেকের শরীরে গড়ে দুই থেকে তিনটি গুলির জখম পাওয়া গেছে। এছাড়া দুজনের শরীরে এবং একজনের বাম হাত ও গালে বোমার আঘাত রয়েছে।২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত পাঁচজনের সঙ্গে সন্দেহভাজন হিসেবে রেস্তোরাঁটির পাচক সাইফুল ইসলাম চৌকিদারের লাশও পাঠানো হয়েছিল ঢাকা মেডিকেলে।চিহ্নিত হামলাকারীরা হলেন- নিবরাজ ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পিয়াল, মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।ময়নাতদন্ত শেষে কিছু নমুনা রেখে দেওয়ার পর বেওয়ারিশ হিসেবে তাদের লাশ জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।হামলার আগে তারা কোনো উত্তেজক দ্রব্য নিয়েছিল কি না- জানতে চাইলে সোহেল মাহমুদ বলেন, এ ধরনের কোনো ড্রাগ বা উত্তেজক পদার্থ নেওয়ার প্রমাণ মেলেনি।নিহতদের মধ্যে তিনজন ঢাকার ধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন। এদের মধ্যে নিবরাজ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। রোহান পড়তেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। মোবাশ্বের স্কলাস্টিকার ছাত্র ছিলেন।বাকি দুজন খায়রুল ও উজ্জ্বল বগুড়ার নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। এর মধ্যে খায়রুল পড়তেন মাদ্রাসায়।গুলশান হামলার বার্ষিকীতে যখন হলি আর্টিজানে নিহতদের স্মরণ করা হচ্ছে, তখনই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেল মামলার ততন্তকারী কর্তৃপক্ষ কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।এত দেরির কারণ জানতে চাইলে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, বিদেশি সংস্থাগুলোর কিছু প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তারা।আমাদের কাছ থেকে এফবিআই ও ভারতের একটি সংস্থা কিছু নমুনা নিয়েছিল। আমরা সেগুলোর প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।কিন্তু ওই প্রতিবেদন পাওয়া না যাওয়ায় আর অপেক্ষা না করে গত বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “আজ তা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করেছি।”এই জঙ্গি হামলায় নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন ভারতীয়, একজন ছিলেন বাংলাদেশি আমেরিকান। বাকিদের মধ্যে নয়জন ছিলেন ইতালির, সাতজন জাপানি।

অন্যদিকে, জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকদের বিচার চেয়েছেন গুলশান হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিতদের স্বজনরা।বাংলাদেশে নজিরবিহীন ওই হামলার প্রথম বার্ষিকীতে বগুড়ার শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল এবং খায়রুল ইসলাম পিয়ালের বাবা ও মা এই দাবি জানান।২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর কমান্ডো অভিযানে নিহত হন উজ্জ্বল ও খায়রুল। এরা দুজনই বগুড়ার নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। চিহ্নিত হামলাকারী অন্য তিনজনও নিহত হয়েছিলেন অভিযানে। তারা হলেন নিবরাজ ইসলাম, মীর সামেহ মোবাশ্বের ও রোহান ইমতিয়াজ। ঢাকার ধনী পরিবারের এই তিনজন পড়াশোনা করেছিলেন নামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।এই পাঁচজন সেদিন সশস্ত্র অবস্থায় হলি আর্টিজান বেকারিতে হানা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আইএসের নামে ইন্টারনেটে তাদের ছবিসহ হামলার দায় স্বীকারের বার্তা আসে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অভিযানে এই পাঁচজন নিহত হওয়ার পর দেখা যায়, সেখানে জিম্মি ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যা করা হয়েছিল।পাঁচ হামলাকারীকে আইএস নিজেদের সৈনিক দাবি করলেও পুলিশসহ বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এরা দেশীয় জঙ্গি দল জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। একে নব্য জেএমবি বলছে পুলিশ।

জঙ্গিদের সঙ্গে কীভাবে সন্তান জড়িয়ে পড়ল, তা এখনও প্রশ্ন বগুড়ার ধুনট উপজেলার বানিয়াজান চল্লিশপাড়া এলাকার উজ্জ্বলের বাবা বদিউজ্জামান বদি এবং মা আছিয়া খাতুনের কাছে।একই উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের কৈয়াগাড়ী গ্রামে ছিল বদির বাড়ি। প্রায় ৩০ বিঘা জমি ছিল তার। যমুনার ভাঙনে সব হারিয়ে ৯ শতক জায়গা কিনে বানিয়াজান খালের পশ্চিম পাশে ঘর তোলেন তিনি।এক সময় ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা বদি বলেন, সে (উজ্জ্বল) কীভাবে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হল, তা ভাবতে অবাক লাগে।

আমি যদি কোনো ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকতাম, তাহলে হয়ত বা আমার কাছ থেকে ধর্মীয় দীক্ষা পেয়ে জঙ্গি হত। কিন্তু আমি তো বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করি। তাহলে আমার ছেলে কীভাবে জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হল?এটা সরকারকে খুঁজে বের করা উচিৎ। যারা উজ্জ্বলকে এপথে নিয়েছে তাদের বিচার চাই, বলেন বদি।স্থানীয় গোসাইবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর গোসাইবাড়ী ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ পাস করেছিল উজ্জ্বল।এরপর বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হন তিনি।এরমধ্যেই চাকরির সন্ধানে যান ঢাকায়, ওঠেন আশুলিয়ায়। সেখানে শাজাহান মার্কেট এলাকায় মাদবী মাতব্বর কেজি স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। সেখানেই তার জঙ্গিবাদের দীক্ষার সূচনা বলে মনে করেন বাবা বদি।গুলশান হামলার সাত মাস আগে সর্বশেষ বাড়ি ফিরেছিলেন উজ্জ্বল। চার মাসের জন্য তাবলিগ জামাতের চিল্লায় যাওয়ার কথা বলে বিদায় নিয়েছিলেন তিনি।আছিয়া খাতুন বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসত উজ্জ্বল। কখনও তার আচার-আচরণে বোঝা যায়নি যে সে ভয়ঙ্কর কোনো জঙ্গি দলে যোগ দিয়েছে।সর্বশেষ বার যাওয়ার সময় আমাকে বলল, ‘মা আমাকে খোঁজাখুঁজি করবে না। আমি চার মাসের জন্য চিল্লায় যাব’। আমি বললাম, বাবা অতদিন কেন? ৪০ দিনের চিল্লায় যাও। তখন সে বলল, মা তুমি আমাকে পিছনে টানছ কেন?’ একথা বলেই সে বাড়ি ছেড়ে চলে গেল।আমার ছেলেকে যারা ভুল পথে নিয়ে গিয়ে আমার কোল খালি করেছে, তাদের বিচার চাই,” বলেন আছিয়া। বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার চুপিনগর ইউনিয়নের বৃ-কুস্টিয়া গ্রামের দক্ষিণ ম-লপাড়ায় খায়রুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের একটি ঘরে তার অসুস্থ বাবা-মা এখনও ছেলের কা-ের জন্য আতঙ্কিত থাকেন।খায়রুলের মা পিয়ারা খাতুন ভয় থেকে প্রথমে কথাই বলতে চাননি। অভয় দেওয়ার পর রাজি হন।

তিনি বলেন, আমরা তো কিছুই জানতাম না। মানুষের কাছে শুনেছি বগুড়ার দুজন মারা গেছে। তাদের নামের সাথে আমার ছেলের নামের মিল নাই। কিন্ত মোবাইলের (ফেইসবুক) মধ্যে ছবি দেখিয়ে অনেকেই আমাকে বলে তোমার ছেলে জঙ্গি, ঢাকায় মারা গেছে। পরে ছবি দেখে বুঝি ওটা আমার খায়রুল।ওই ঘটনার পর কেউ আমাদের ভালো চোখে দেখে না। আমরা তো কোনো দোষ করিনি,” বলেন সন্তানহারা এই নারী।বিহিগ্রাম মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেছিলেন খায়রুল। পরে চাকরির সন্ধানে ছিলেন বলে জানান তার স্বজনরা।পিয়ারা বলেন, গরিব হলেও ভালোই ছিলাম। ছেলে মারা যাওয়ার পর মা হিসেবে কষ্ট তো লাগেই। তবে আমার ছেলেকে যারা এপথে নিয়ে গিয়েছিল, আমি তাদের বিচার চাই। সরকার তাদের খুঁজে বের করুক।গুলশান হামলার বছর পূর্তিতে চিহ্নিত হামলাকারী অন্য তিনজনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন বলে স্বজনরা জানান।

জঙ্গি মীর সামেহ মোবাশ্বেরের বাবা মীর হায়াত কবিরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। রোহান ইমতিয়াজের বাবা ঢাকার মোহাম্মদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা ইমতিয়াজ খান বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। নিরবাজ ইসলামের বাবা নজরুল ইসলাম ফোন ধরেননি।নিবরাজ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। রোহান পড়তেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। মোবাশ্বের স্কলাস্টিকার ছাত্র ছিলেন।গুলশান হামলার ঘটনায় যে মামলাটি হয়েছে, তার বিচার এখনও শুরু হয়নি। অভিযোগপত্র এখনও দিতে পারেনি পুলিশ।তবে নব্য জেএমবির শীর্ষনেতা হিসেবে চিহ্নিত কয়েকজন গত এক বছরে বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন।জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকদের মোকাবেলায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে লড়াইয়ের কথা বলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একাজে সমন্বিতভাবে কাজের আহ্বান রেখেছে বিএনপি।

কবরে বেষ্টনি দিতে এসেছিল কারা?গুলশান হামলার ৮৩ দিন পর চিহ্নিত পাঁচ হামলাকারীর লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল।কয়েক মাস আগে তিনজন লোক এসে কবরগুলো বেষ্টনি দিতে টাকা দিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন গোরখোদক মো. রতন। তবে তাদের পরিচয় তিনি জানেন না বলে জানিয়েছেন।রতন গত সপ্তাহে বলেন, “তিন-চার মাস আগে তিন জন লোক এসেছিল। তাদের দুজনের মুখে দাড়ি ছিল, তারা ছিল বেশ লম্বা।কবরের সামনে এসে কবরগুলো বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখতে ও সবুজ রং করে দিতে তারা ৩ হাজার টাকা দিয়ে যায়। কবরের ঘাস তুলতে নিষেধ করে।এর আগে কিংবা পরে তাদের আর দেখেননি বলে জানান রতন।চিহ্নিত পাঁচ হামলাকারীর সঙ্গে বেওয়ারিশ হিসেবে হলি আর্টিজানের পাচক সাইফুল ইসলাম চৌকিদারকেও সেখানে দাফন করা হয়েছিল।সাইফুলের পরিবারের সদস্যরা ছাড়া আর কেউ কবর জিয়ারতে যাননি বলে জানান কবরস্থানে দায়িত্বরত কর্মকর্তা মো. শোয়াইব হোসেন।শ্যামপুর থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ওখানে জঙ্গিদের পরিবারের কেউ আসে না। পুলিশ প্রতিদিন ওই এলাকায় নিয়মিত টহল দেয়। জঙ্গিদের পরিবারের কেউ এলে কবরস্থানের রেজিষ্ট্রার খাতায় তাদের নাম থাকত।

তবে শোয়াইব বলেন, অন্য পাঁচজনের কবর কেউ জিয়ারত করতে আসেননি, এটা শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাবে না। কারণ অনেকে নিজেদের পরিচয় দেন না।বিশেষ বিশেষ দিনে হাজার হাজার লোকজন আসায় তখন নিবন্ধন খাতায় সবার নাম তোলা হয় না বলে জানান শোয়াইব।লাশ দাফনের সময় ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছিলেন, লাশগুলোর দাবি নিয়ে স্বজনদের কেউ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।উজ্জ্বলের বাবা বদি বলন, লাশ নিয়ে আসার কথা পুলিশ বলেছিল। কিন্ত ঢাকা থেকে নিয়ে আসার টাকা ছিল না। তাছাড়া বাড়িতে এনে কোথায় কবর দেব? তাই লাশ নিয়ে আসিনি।অন্যদিকে খায়রুলের মা পিয়ারা বলেন, পুলিশের কাছে ছেলের লাশ চেয়েছিলাম, লাশ দেয়নি।একই কথা বলেন শরীয়তপুরের সাইফুলের স্ত্রী সোনিয়া আক্তারও।গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে চিহ্নিত হামলাকারীরা গুলি ও বোমায় নিহত হয়েছিলেন বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।বাংলাদেশে নজিরবিহীন এই হামলার ঠিক এক বছর পর শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করে।এই জঙ্গি হামলায় নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন ভারতীয়, একজন ছিলেন বাংলাদেশি আমেরিকান। বাকিদের মধ্যে নয়জন ছিলেন ইতালির, সাতজন জাপানি।