মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার কার্যালয়ের মন্ত্রী ইউ কিয়াও টিন্ট সুয়ের নেতৃত্বে একটি কূটনীতিক দল চলতি সপ্তাহে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা করতে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে।মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা করতে দলটি আসছে বলে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান।কূটনীতিক দল কবে আসবেন, সে ব্যাপারে দেশটির সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী ড. উইন মিয়াত আয়ে মিয়ানমার টাইমসকে বলেছেন, ‘আমরা এখনো দিনটা ঠিক জানি না। তবে আগামী দুয়েক দিনের মধ্যেই যাবেন।

মিয়াত আয়ে জানান, এই সফরের পরিকল্পনায় গুরুত্ব পেয়েছে রাখাইন রাজ্যের জন্য আনান অ্যাডভাইজরি কমিশন এবং মংডু ইনভেস্টিগেশন কমিশনের প্রস্তাবিত সুপারিশসমূহ। সুপারিশগুলো মাথায় রেখে ১৯৯৩ সালের মিয়ানমার-বাংলাদেশ চুক্তির ভিত্তিতে যত দ্রুত সম্ভব পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে আলোচনায় বসা হবে।১৯৯৩ সালের মিয়ানমার-বাংলাদেশ যৌথ বিবৃতি অনুসারে, মিয়ানমার বাংলাদেশে শরণার্থীদের আসা ঠেকানোর ব্যবস্থা নেবে এবং উপযুক্ত পরীক্ষা ও যাচাই-বাছাইয়ের পর পরিচয়পত্রধারী অথবা যাদের কাছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দেয়া কাগজপত্র বা মিয়ানমারের অধিবাসী হওয়ার প্রমাণপত্র আছে, এমন রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করবে।বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে আটকা পড়েছে প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা। তারা না পারছে নিজ দেশে ফিরে যেতে, না পারছে বাংলাদেশের ভেতর অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিশে যেতে।মিয়ানমারের তমব্র“, পানির ছড়া, টেকিবুনিয়া, মংডুসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নোম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন এসব রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশ থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করেছে ছোট্ট একটি নদী। সেখানেই অমানবিকভাবে বসবাস রোহিঙ্গাদের।

মিয়ানমারের এই অংশের সব রোহিঙ্গা নোম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়ার পরও এখনও কড়া পাহাড়ায় ওই দেশের সেনারা। নতুন করে কাঁটা তাতের বেড়া দেয়া হয়েছে বিভিন্ন অংশে। এ কারণে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন নোম্যান্স ল্যান্ডের রোহিঙ্গারা।রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব মিয়ানমার সরকার মেনে নিলে জিরো পয়েন্টে আশ্রয় নেয়া সব রোহিঙ্গা নিজ দেশে ফিরে যাবেন বলে জানান তারা।এছাড়া বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম এলাকার পাশের জিরো পয়েন্টেও আশ্রয় নিয়েছেন আরও কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। সেখানেও অনাহারে অর্ধাহারে দিন পারছেন করছেন তারা।বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গাসহ কক্সবাজারের সংশ্লিষ্ট এলাকায় কলেরার ঝুঁকির মুখে থাকা মানুষের জন্য নয় লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাঠাচ্ছে স্বাস্থ্য বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর একটি জোট।

বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে বুধবার অনুরোধ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই জোটের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে।ডব্লিউএইচওর সঙ্গে ইউনিসেফ, মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রঁতিয়েসে (এমএসএফ) ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব দ্য রেড ক্রস (আইএফআরসি) মিলে ইন্টারন্যাশনাল কোঅর্ডিনেটিং গ্র“প ((আইজিসি) অন ভ্যাকসিন প্রভিশন নামের এই জোটের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

ডব্লিউএইচওর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অক্টোবর থেকে শুরু করে দুই বিশেষ অভিযান চালিয়ে খাওয়ার উপযোগী এসব কলেরা ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।এই অভিযানে ভ্যাকসিন বিষয়ক জোট গ্যাভি সহায়তা করবে।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ বলেন, প্রতিরোধযোগ্য কলেরার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতেই সতর্কতামূলক এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।জরুরি অনুরোধের পর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা ও উদ্যোগের এই দ্রুততাকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা ভ্যাকসিনের অপেক্ষায় আছি।গত ২৫ অগাস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-নিপীড়নের মুখে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।তাদের অনেকেই প্রবল বর্ষণের মধ্যে শরণার্থী শিবির বা অস্থায়ী বসতিতে রয়েছেন, যেখানে জীবানুমুক্ত পানি ও স্যানিটেশনের সংকট তৈরি হয়েছে। এর ফলে কলেরার মতো পানিবাহিত রোগ ছড়ানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে।বাংলাদেশে ডব্লিউএইচওর প্রতিনিধি ড. নবরতœস্বামী প্রনিথেরান বলেন, রোগ ও পানির গুণমানের উপর নজরদারিসহ প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সম্ভাব্য সবকিছু করছি।ভ্যাকসিন অভিযান ঝুঁকিপূর্ণ এসব মানুষকে কলেরা থেকে রক্ষায় সহায়তা করবে।