রাজধানীতে সকাল থেকেই মেঘের আড়ালে ছিলো সূর্যের লুকোচুরি। তবে প্রহর গড়াতেই শুরু হয়েছে অঝোর ধারা। বৃষ্টিতে রাজধানীর অনেক এলাকায় রাস্তায় পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে দেখা গেছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে শুক্রবারের মতো শনিবারও সারাদিন থেমে থেমে বৃষ্টি হয়। তবে রোববার থেকে কমে যাবে বৃষ্টিপাত। সকাল থেকে ঢাকায় সামান্য বৃষ্টিপাত হলেও দুপুর সোয়া একটার দিকে বৃষ্টির তেজ বেড়েছে। দুপুরের পরও রাজধানী জুড়ে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টির কারণে রাস্তা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। তবে রিকশাচালক এবং কিছু নিম্নআয়ের মানুষ নিজ নিজ কাজে নিয়োজিতদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে গণপরিবহনে উঠতে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হতে হয়। ঢাকেশ্বরী রোড, আজিমপুর রোড, চাঁনখারপুল এলাকার দুপুর ১টার দিকে বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। এদিকে মন্দির ও আশপাশ এলাকায় বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েন বিজয়া দশমী পালন করতে আসা ভক্তরা। বৃষ্টিতে ব্যাঘাত ঘটে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের পালা। রাজধানীর সদরঘাটের ওয়াইজ ঘাটের প্রতিমা বিসর্জনের জন্য প্যান্ডেল তৈরি করার কাজ বিলম্বিত হয়।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, বেলা ৩টার পর প্রতিমা বিসর্জনের কাজ শুরু হয়। আগে ভাগে যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদেরকে বৃষ্টির জন্য নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে দেখা যায়। সকালের এই ভারি বৃষ্টিতে পানি জমার সঙ্গে সঙ্গে যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয় রাজধানবাসীকে। বিকাল নাগাদ অধিকাংশ এলাকায় পানি নেমে গেলেও যানজটও ছিল প্রায় সবখানে।চলতি মৌসুমে এ নিয়ে পাঁচবার ভারি বর্ষণ দেখল রাজধানীবাসী। এসময় জলমগ্নতায় নাগরিক দুর্ভোগও ছিল চরমে।এতে মতিঝিল, পল্টন, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, মালিবাগ, তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, গ্রিনরোড, ইন্দিরা রোড, সোবহানবাগ, ধানমন্ডি ২৭, পুরান ঢাকার আদালতপাড়া ও মিরপুরের অনেক এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।

আজিমপুরের চাপড়া মসজিদ এলাকার বাসা থেকে মিন্টু রোডে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে যাওয়ার পথে আজিমপুর, আজিমপুর মোড় থেকে পলাশী সড়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে জলাবদ্ধতা দেখেছেন বলে জানান তিনি। শাহবাগ মোড়ে জলাবদ্ধতা তৈরি না হলেও তীব্র যানজট ছিল। থেমে থেমে গাড়ি চললেও বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়অফিসগামীদের।সকালের বৃষ্টিতে মিরপুর ১০ থেকে শুরু করে কাজিপাড়া, শেওড়াপাড়ার সব ছোট-বড় রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়।
বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় মিরপুর থেকে ফার্মগেটে যাওয়ার পথে ভোগান্তিতে পড়ার কথা জানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সায়মা আক্তার।তিনি সাধারণত বাসেই চলাচল করেন, তবে বৃষ্টির ফলে প্রতি বাসে উপচেপড়া ভিড়ের কারণে উঠতে পারেননি। অগত্যা তিনগুণ বেশি ভাড়ায় রিকশায় ফার্মগেইটের পথ ধরেন।বৃষ্টি হলেই বাসে জায়গা পাওয়া যায় না। আর এ সুযোগে রিকশাওয়ালারা দাম বাড়িয়েছে, বলেন সায়মা।নিউ মার্কেট ও পিলখানার বিডিআর গেইট এলাকায় প্রায় কোমর পানি জমার কথা জানান বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ফজলুর রহমান।তিনি বলেন, নীলক্ষেতে থেকে বিজিবি গেইট পর্যন্ত কোমর পরিমাণ পানি। নিউ মার্কেটের ভেতরেও মার্কেটের ভেতরেও পানি ঢুকছে।যানবাহনের অভাবে অতিরিক্ত ভাড়ায় রিকশা ও ভ্যানে চড়ে রমনার পুলিশ কনভেনশন হলে যাওয়ার কথা জানান ফজলুর।দুইবার রিকশা পরিবর্তন করে পশ্চিম রাজাবাজারের বাসা থেকে আগারগাঁওয়ে যান এটুআই কর্মকর্তা নাজমুল আলম।

তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণে পশ্চিম রাজাবাজার, পূর্ব রাজাবাজার ও ইন্দিরা রোডের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। জাতীয় সংসদ এলাকার পূর্বদিকের সড়কের একটি অংশেও জলাবদ্ধ হয়। রাস্তায় পানি জমে থাকায় মিরপুর রোড, মগবাজার থেকে মহাখালীগামী সড়ক, ডিআইটি রোড ও প্রগতি সরণিতে যানজট সৃষ্টি হয়।ট্রাফিক দক্ষিণের উপ-পুলিশ কমিশনার রিফাত রহমান শামীম বলেন, “মৎস্য ভবনের সামনে, শাহবাগ, বেইলি রোড, শান্তিনগর, আজিমপুর চৌরাস্তা, আজিমপুর, নাজিম উদ্দিন রোড এসময় এলাকায় পানি ছিল। তবে গাড়ির গতি শ্লথ। তবে একেবারে থেমে থাকে না।সেপ্টেম্বর মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, চলতি মাসে বাংলাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে মাসের দেশের পূর্বাঞ্চলে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে।এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২ টি মৌসুমী নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে বলেও পূর্বাভাস রয়েছে বলে জানান তিনি।