পচেফস্ট্রুমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে ৩৩৩ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে পঞ্চম দিনের মধ্যাহ্ন বিরতী পর্যন্তও টেনে নিতে পারেনি ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসের স্কোরের সঙ্গে মুশফিকদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স একেবারেই বেমানান। পচেফস্ট্রুমে টস জিতে ফিল্ডংয়ে নেমে দেখা গেলো এটা ‘ব্যাটিং সহায়ক’ উইকেট। আবার সেই উইকেটেই ব্যাটিংয়ে নেমে গলদঘর্ম বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। দুই ইনিংসে মিলিয়ে প্রোটিয়াদের ৯ উইকেট নিতে পেরেছে বাংলাদেশের বোলাররা। সেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে একশ রানও পূর্ণ করতে পরেনি বাংলাদেশ।

প্রথম ইনিংসে লড়াইটা তাও মন্দ করেনি। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে ৪২৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে খেই হারিয়ে ফেলে টাইগার ব্যাটসম্যানরা। প্রথম ইনিংসে বলার মতো কয়েকটি ব্যক্তিগত স্কোর থাকলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ৭ জন ব্যাটসম্যানই ছুঁতে পারেননি দুই অংক। বাকি যে তিনজন দুই অংক ছুয়েছেন সেগুলো বলার মতো কিছুই না। ফলাফলও তাই প্রত্যাশিত, বড় হারের লজ্জায় পড়তে হয়েছে মুশফিক বাহিনীকে।

পঞ্চম দিনের শুরুতেই বাংলাদেশ হারায় অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। গত দিনের ব্যক্তিগত ১৬ রানের সঙ্গে কোন রান যোগ না করেই রাবাদার বলে আমলার তালুবন্দি হন মুশি। চার ওভার পরেই মাহমুদুল্লাহর (৯) স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেন রাবাদা। লিটন, সাব্বিররাও আসলেন আর গেলেন। ইনিংসে রাবাদার তৃতীয় শিকার হওয়ার আগে লিটন করেন ৪ রান। সাব্বিরকে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন কেশভ মহারাজ। তাসকিনকেও (৪) একইভাবে মাঠছাড়া করেন মহারাজ। বাংলাদেশের কফিনে শেষ পেরেকটা বসিয়ে মহারাজ। মোস্তাফিজকে কট এন্ড বোল্ড করে ৩৩৩ রানের হারের লজ্জায় ডোবান। মেহেদি মিরাজ অপরাজিত থাকেন ১৫ রানে।

স্কোর- দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৯৬/৩ডি. এবং ২৪৭/৬ডি. বাংলাদেশ: ৩২০/১০ এবং ৯০/১০; দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৩৩ রানে জয়ী।

বড় হার দেখছে বাংলাদেশ

৫৫ থেকে ৭১, ১৬ রান নিতেই বাংলাদেশের নেই ৫ উইকেট। দিনের শুরুতে কোন রান যোগ না করেই রাবাদার বলে আমলার হাতে ক্যাচ তুলে দেন মুশফিকুর রহিম। এরপর মাহমুদুল্লাহ (৯), লিটন দাস (৪), সাব্বির (৪) কিংবা তাসকিন (৪), কেউই ছুঁতে পারেননি দুই অংক। আর তাতেই বড় হারের শঙ্কায় বাংলাদেশ।

চতুর্থ দিন শেষে চালকের আসনে দক্ষিণ আফ্রিকা

পচেফস্ট্রুম টেস্টে চতুর্থ দিন শেষে চালকের আসনে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪২৪ রানের বিশাল টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে দিন শেষে স্কোর বোর্ডে ৪৯ রান তুলতেই ৩ উইকেট হারিয়েছে টাইগাররা। পঞ্চম ও শেষ দিনে জিততে হলে বাংলাদেশের দরকার আরো ৩৭৫ রান। আর প্রোটিয়াদের প্রয়োজন ৭ উইকেট। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ৪৯৬ রানের জবাবে, ৩২০ রান করে বাংলাদেশ।

টেস্ট ক্রিকেট বাংলাদেশের সর্ব্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম ইকবাল আর সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান মুমিনুল হককে প্রথম ওভারে দুই বলের ব্যবধানে প্যাভিলিয়নে ফেরান মর্নে মরকেল। অথচ ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের সামনে ৪২৪ রানের পাহাড় সমান টার্গেট। এমন বিশাল লক্ষ্যের ব্যাটিংয় নেমে স্কোর বোর্ডে কোন রান যোগ করার আগেই নেই মহামূল্যবান দুই উইকেট।

দারুণ এক ইনসুইংয়ে ভেঙ্গে ছিলো মুশফিকের স্ট্যাম্পও। কিন্তু, ভাগ্যদেবী সহায় ছিলেন। কারণ মরকেলের বলটি নো ছিলো। স্নায়ু চাপে মাঝে ব্যাটিং করে ভাল কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন ইমরুল। কিন্তু, টানা ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙ্গতে পারেন নি। ৪৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে বাংলাদেশ। লাল সবুজের সমর্থকদের হৃদয়ে কষ্টটা আঁচ করতে পেরেছিলো হয়তো পচেফষ্ট্রুমের আকাশ। তাই আবারো বৃষ্টি হানা দিলো চতুর্থ দিনের খেলায় ইতি টানে।

এর আগে সকালের শুরুটা মন মতো করতে পারেনি। এ টেস্টে চালকের আসনে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা। কাটারের শিকারে দ্রুতই ড্রেসিং রুমে ফেরেন হাশিম আমলা। তবে, পরের সময়ে টাইগার বোলাদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছেন অধিনায়ক ডু প্লেসি ও বাভুমা। এই জুটিতে ১৪২ রান যোগ করে ৮১ রানে আউট ডু প্লেসি। ব্যাট হাতে দলকে টেনে তোলার পর ব্যাটসম্যান মুমিনুল বল হাতেও দলের ত্রাতা হন এদিন। ডু প্লেসির মতো বিগ ফিস শিকারের পর ৭১ রান করা বাভুমা আর ডি কর্কের উইকেট তুলে নেন ঐ মুমিনুল। স্বস্তিতে ফেরে বাংলাদেশ আর অস্বস্তি নিয়ে ৬ উইকেটে প্রোটিয়ারা ইনিংস ঘোষণা করে ২৪৭ রানে। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের ১৭৬ রানের আরো লিড থাকায়। বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়ায় ৪২৪ রান।

ইতিহাস বলে বরাবরই দ্বিতীয় ইনিংসে প্রত্যাশিত ব্যাটিং করতে পারেনি বাংলাদেশ। তার ওপর ৪২৪ রানের বিশাল টার্গেট টপকে যাওয়া ব্যাপারটি মহাকঠিণ মুশফিকের দলের জন্য। তবে, শেষ দিনের তিন সেশনে হিসেবে ধৈর্যশীল ক্রিকেট খেললে এ টেস্ট ড্র অসম্ভব কিছুই না।