মিয়ানমারের সঙ্গে বাড়াবাড়ি নয়,ধৈর্য্য ধরে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা।সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মিয়ানমার থেকে চাল আমদানির প্রসঙ্গ উঠলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা জানান।তেজগাঁও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক মন্ত্রিপরিষদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ কথা জানিয়েছেন।জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে যোগদানকালে মিয়ানমারের প্রতিনিধি রোহিঙ্গা ইস্যুতে নানাভাবে উস্কানি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ আলোচনার সময় তিনি বলেন, বাড়াবাড়ি বা ঝগড়াঝাটি করে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। ধৈর্য ধরে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।মন্ত্রিপরিষদের একজন সদস্য বলেন, সভায় মিয়ানমার সফরে গিয়ে এক লাখ টন চাল কেনার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করছিলেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি করা কি ঠিক হচ্ছে? কারণ তারা ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম ও বর্বর ঘটনা ঘটিয়েছে।

পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার বর্বর ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটা ঠিক। কিন্তু বাড়াবাড়ি বা ঝগড়াঝাটি করে সমস্যার সমাধান করা যাবে না। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আমরা বাড়াবাড়ি করলে বিশ্ব জনমত আমাদের পক্ষে থাকতো না। আমাদের লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো।উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এখন ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক খুবই খারাপ। কিন্তু তারপরও এর মধ্যেই তাদের ব্যবসা বাণিজ্য চলছে। আমরা কারও উস্কানিতে পা দেবো না। আমি যখন জাতিসংঘে ছিলাম তখন মিয়ানমারের প্রতিনিধি নানাভাবে আমাকে উস্কানি দিয়েছে। আমরা বাড়াবাড়ি করিনি। আমরা বাড়াবাড়ি করলে সেখানে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো।সূত্র জানায়, বৈঠকে চাল গম আমদানির বিষয় নিয়ে আলোচনা ওঠে। এ সময় মিয়ানমার থেকে চাল আমদানির প্রসঙ্গটি আসে। তখন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন মিয়ানমার তো বর্বর ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা সেখান থেকে চাল আনছি। অর্থমন্ত্রী এ কথা বলার পর প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা ঠিক, তবে বাড়াবাড়ি, ঝগড়া করে তো সমস্যার সমাধান করা যাবে না। ধৈর্য্য ধারণ করে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে হবে। যদি আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করতাম তাহলে বিশ্বজনমত আমাদের পক্ষে থাকতো না। বিশ্ব জনমত আমাদের পক্ষে আছে। আমরা কারো উস্কানিতে পা দেবো না। আমাদের মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। কূটনৈতিক তৎপরতাও চলবে, মিয়ানমারের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যও চলবে। ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ রাখা যাবে না।তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সম্পর্ক চলছে। কিন্তু তাদের মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্যও চলছে। আমরা কূটনৈতিকভাবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করবো এটাই আমাদের লক্ষ্য। আমি যখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ছিলাম তখন মিয়ানমার উস্কানি দিয়েছে। আমরা তাতে কান দেইনি। আমরা বাড়াবাড়ি করলে হয়তো পরিস্থিতি অন্য রকম হতো।সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে খাদ্যের কোনো সমস্যা হবে না। প্রচুর চাল, গম আমদানি হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেসরকারিভাবে ১৯ লাখ মেট্রিক টনের বেশি চাল গম আমদানি হয়েছে। সরকারিভাবে ৭/৮ লাখ মেট্রিক টন চাল-গম আমদানি হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টন চাল-গম আমদানি হবে। খাদ্যের সমস্যা নেই।