তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস-বিডিআরের সদর দপ্তর পিলখানায় কথিত বিদ্রোহের নামে অর্ধশতাধিক সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের দণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়েছে। বাকি ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চ এক মতের ভিত্তিতে এই রায় ঘোষণা করেন।

বেঞ্চের অপর দুই বিচারক হচ্ছেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। এর আগে দ্বিতীয় দিনের রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরুর পর সোমবার সকাল ১০ টা ৫৩ মিনিটে বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার তার রায়ের পর্যবেক্ষণ পড়েন। এরপর বিচারপতি মো. শওকত হোসেন মূল রায় ঘোষণার জন্য দুপুর আড়াইটায় সময় নির্ধারণ করেন।

তার আগেরদিন রোববার সকাল ১০ টা ৫৫ মিনিটে বেঞ্চের নেতৃত্বদানকারী বিচারপতি মো. শওকত হোসেন প্রথমে রায়ের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তারপর বেঞ্চের অপর বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী তার রায়ের পর্যবেক্ষণ অংশ পড়া শেষ করলে ওইদিনের (রোববারের) রায়ের কার্যক্ররম শেষ হয়। এই মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকা মহানগর তৃতীয় বিশেষ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন।

এছাড়া, বিএনপির সাবেক সাংসদ নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু (প্রয়াত), স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ২৭৭ জনকে খালাস দেন বিচারিক আদালত।

এই রায়ের পর মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ‘ডেথ রেফারেন্স’ হাইকোর্টে আসে। সেই সঙ্গে আসামিরা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল ও জেল আপিল করেন। বিচারিক আদালতে খালাস পাওয়া ৬৯ জনের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

এরপর ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে এই মামলার শুনানি শুরু হয় গত ১৩ এপ্রিল। তিনশ’ ৭০ দিনের শুনানির পর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়। এরপর গত ২৬ ও ২৭ নভেম্বর চলমান রায় ঘোষণার ধারাবাহিকতায় সোমবার দুপুর ২ টা ৩৫ মিনিটে মামলার মূল রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে ‘পিলখানা ট্র্যাজেডি’তে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান।