ভুটানে পাথর জাতীয় কিছু কাঁচামাল সহজলভ্য হওয়ায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ছোট বড় কারখানা। যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে বেঁচে আছেন প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক পরিবার। বন্দর ও ব্যবসায়ীরা জনান, প্রতিবেশী দেশ ভুটান থেকে শুল্কমুক্ত হয়ে ১৯৮৮ সাল থেকে দেশে আমদানি হচ্ছে জিপ সাম স্টোন ও লাইম স্টোনসহ ১৮টি পাথরজাত কাচাঁপণ্য। জীপসাম ও লাইম স্টোন গুঁড়ো করে তৈরী হয় জীপ সার, প্রসাধনী সামগ্রীর কাঁচামাল, পল্ট্রি ও ফিশ ফিড। ভুটানের এসব পাথর জাতীয় কাচাঁমাল দেশে আসছে বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে।

এসব পাথর গুঁড়ো করতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা বুড়িমারীতে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেন ৩০টি কারখানা। প্রতিটি কারখানা প্রতিষ্ঠায় কোটি টাকার উপরে মূলধন ব্যয় করতে হয়েছে মালিক পক্ষকে। এদিকে দেশের কিছু অসাধু ব্যক্তির সহযোগিতায় ভুটানের ব্যবসায়ীরা পাথর গুঁড়ো করার কৌশল আয়ত্ত করে তারাও গড়ে তুলেছেন এসব কারখানা। বিগত ২০১৩ সালে ভুটানের ব্যবসায়ীরা বড় পাথর না দিয়ে গুঁড়ো করা কাঁচামাল পাঠাতে শুরু করে। দৈনিক গড়ে প্রায় ৫০ ট্রাক কাঁচামাল আসত। পরবর্তীতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের চাপে তা কমে আসে। কিন্তু এখনও দৈনিক ৮/১০ ট্রাক ভুটানী কাঁচামাল আসছে। যার ফলে বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রতিষ্ঠিত কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে রাজধানী ঢাকায় গত ৫ নভেম্বর এনবিআর ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের যৌথ সম্মেলন হয়েছে। একটি কুচক্রী মহল বাণিজ্য মন্ত্রনালয় ও এনবিআর কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে ভুটানী কাঁচামাল আমদানির পায়রাতা চালাচ্ছে বলে দাবি করেন বুড়িমারী শিল্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান পরাগ।

বুড়িমারী এএম ট্রেডার্সের শ্রমিক আব্দুল জলিল ও মিজানুর রহমান জানান, এই কারখানায় নিয়মিত কাজ করে দৈনিক প্রায় ৫০০-৭০০ টাকা আয় হয় যা দিয়ে সংসার ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগানো সম্ভব হচ্ছে শ্রমিকদের। কারখানা বন্ধ হলে আবারো কর্মহীন হয়ে তাদের না খেয়ে মরতে হবে। দেশীয় এসব কারখানা ধ্বংস না করতে সরকারের নীতি-নির্ধারকদের প্রতি আহবান জানান তারা।

এসপি মিনারেল কারখানার মালিক আশিকুর রহমান পরাগ জানান, গুনগন মান যাচাই বাচাই করে দেশী কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারছেন পণ্য উৎপাদনকারী কারখানাগুলো। সেক্ষেত্রে পন্যের গুণগত মানও ঠিক থাকছে। কিন্তু দেশের কারখানা ধ্বংস করে বিদেশের কম মানের কাঁচামালে প্রস্তুত পণ্যের গুণগত মান কতটা ঠিক থাকবে তা ভেবে দেখা দরকার।

বুড়িমারী শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি তাহসিন এগ্রো’র মালিক হাবিবুর রহমান পবন জানান, কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কারখানা ধ্বংস করে বিদেশি কাঁচামাল আমদানি করলে দেশের অর্থনীতে বিরাট আঘাত হানবে। বেকার হয়ে পড়বে দেশের কয়েক হাজার শ্রমিক। এজন্য তিনি দেশের শিল্প কারখানা রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।