অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার গেজেট আগামী সপ্তাহে প্রকাশ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, শৃঙ্খলা বিধিটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) চলে গেছে বলে আমি জানি। আমি আশা করছি, আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে এ গেজেট প্রকাশ হবে।বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের দীর্ঘ টানাপড়েনের পর আইনমন্ত্রীর কাছ থেকে গেজেট প্রকাশের সম্ভাব্য নতুন এই সময় জানানো হল।সর্বশেষ গত ৩ ডিসেম্বর এক আদেশে গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
সরকারের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এর আগে শৃঙ্খলা বিধিমালার যে খসড়া সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হয়েছিল, গত ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি সিনহা।শৃঙ্খলাবিধির সেই খসড়া নিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে বিচারপতি সিনহা ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর দেশ ছাড়ার পর ছুটি শেষে ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন।এরপর বিচারকদের চাকরিবিধির এ বিষয়টি আপিল বিভাগে উঠলে দুই দফায় ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। গত ১৬ নভেম্বর দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞার সঙ্গে বৈঠক করে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ওই খসড়া নিয়ে মতপার্থক্য দূর হয়েছে।মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়।
ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত।মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে গতবছর ২৮ আগাস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ।এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে।এরপর দফায় দফায় সময় দেওয়া হলেও সরকারের সঙ্গে আদালতের মতপার্থক্যের কারণে ওই বিধিমালা গেজেট প্রকাশের বিষয়টি ঝুলে থাকে।