দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মিঠা পানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর শাখা খালে (গচ্ছাখালি) ফের মিলল বিশ্বে অতি বিপন্ন জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণী মৃত শুশুক। বিশেষজ্ঞ মহল বেশ কয়েকটি কারণে গত ১৮ দিনে তিনটি বিগত ৩ মাসে হালদা নদীর প্রায় ১৬টি শুশুকের মৃত্যু নিশ্চিত করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপরে টনক নড়েনি। দু:খজনক হলেও সত্যি যে, তাদের কাছে এসব শুশুকের মৃত্যুর কারণ এখনও পর্যন্ত অজ্ঞাত। নিশ্চিত করতে পারেনি এসব শুশুকের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। এতে করে শূন্য হতে চলছে হালদা নদীর পরিবেশ নিদের্শক বিশ্বের অতি বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণী শুশুকের সংখ্যা। এভাবে যদি নদীর পরিবেশ নিদের্শক প্রজাতি শুশুকসহ নানা জীববৈচিত্র গুলো বিলুপ্ত হতে থাকে তাহলে হালদা নদীতে এক সময় মাছের অভয়ারন্য থাকবে কিনা এবং নদীর পরিবেশ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞমহল।

গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের কান্তর আলী চৌধুরী হাটের উত্তর পার্শ্বে ১নং ওয়ার্ডস্থ স্লুইস গেইট এলাকার হালদা নদীর গচ্ছাখলি শাখা খালে মৃত অবস্থায় একটি শুশুক স্থানীয় বাসিন্দারা দেখতে পায় বলে জানান ওই এলাকার আমির মোহাম্মদ তালুকদার বাড়ির মঞ্জুরুল হাসান নাঈম। তিনি জানান, এভাবে বিগত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ এ রকমের মৃত প্রাণী হালদা পাড়ে দেখা যায়। প্রায় ৭০-৮০ কেজি ওজনের শুশুকটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ছয় ফুট এবং প্রস্তে আড়াই ফুট হতে পারে। তবে জোয়ারের পানিতে হালদা নদী থেকে ভেসে আসা এ প্রাণীটিতে ইতিমধ্যে পচন ধরে ফোলে গেছে। ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর রাবার ড্যাম ও অপরদিকে শীত মৌসুমে নদীর পানির স্তর কমে যাওয়া এবং তার উপর সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এক শ্রেণির অসাধু মহল হালদা নদী থেকে অবাধে ড্রেজার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে বালি উত্তোলনকারী করে আসছে। এসব ড্রেজার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকার প্রপেলারের আঘাতে মিঠা পানির বিশ্বের অতি বিপন্ন স্তন্যপায়ী প্রাণি শুশুকের মত হালদা নদীতে থাকা জীববৈচিত্রের অকাল মৃত্যু হচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞমহল। তবে এনিয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কোন তৎপরতা চোখে পড়ছে না। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) লাল তালিকাভুক্ত বিশ্বে¦ অতি বিপন্ন প্রজাতির এ জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণিগুলো এভাবে মারা যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া। হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্বে থাকা এ শিক্ষকের সাথে আলাপকালে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, বিশ্বে অতি বিপন্ন স্তন্যপায়ী স্বাদু পানির একটি প্রাণি শুশুক। এ প্রাণিকে ২৫-৩০ বছর আগেও বাংলাদেশের নদীগুলোতে অনেক দেখা যেত। কিন্তু এখন আর ওই প্রাণিটাকে দেখা যায় না। দিন দিন এদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। তাই ১৯৯৬ সাল থেকে বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় নাম উঠে গেছে শুশুকের। এটি নদীর পরিবেশ নিদের্শক প্রজাতি।

তিনি আরো জানান, বিশ্বের উন্নত দেশে এ জাতীয় শুশুক সংরক্ষণের জন্য সরকারি ভাবে নানা উদ্যেগ গ্রহন করা হয়ে থাকে। এ জলজ স্তন্যপায়ি প্রাণী অন্যান্য মাছের মত ডিম ছাড়ে না। এ গুলো বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চা গুলো মার দুধ পান করে বেঁচে থাকে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রায় ১২শ’টি শুশুক আছে। যার মধ্যে হালদায় আছে মাত্র ২০০-২৫০টি। এসব শুশুক ড্রেজারের আঘাত মোটেও সহ্য করতে পারেনা। তবে বিগত তিন মাসে বালি উত্তোলনকারী ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ড্রেজারের আঘাতে হালদা নদীর প্রায় ১৬টি শুশুক মারা গেছে। পরিবেশ উপযোগী হলে এসব শুশুক হালদা নদীতে থাকবে। অন্যথায় পরিবেশ যখন প্রতিকুল হবে শুশুক এ নদীতে থাকবে না।এ ব্যাপারে কার্যকারী কোন পদক্ষেপ গ্রহন করছে কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ মমিনুল হক মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, এসব প্রাণীর মৃতুর কারণ এখনও পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। তবে বিষয়টি সর্ম্পকে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এতটুকু কাজ সম্পন্ন করে তারা তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে বলে তিনি জানান। এদিকে হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজহারুল আলম এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা সংবাদ পেয়েছি। এটি উদ্ধারের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।