শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মো. মোতালেব হোসেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চমান সহকারী নাসিরউদ্দিন সাময়িক বরখাস্ত হচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার কর্মকর্তারাএ কথা জানান।ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে মোতালেব হোসেন ও নাসিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তাঁরা গ্রেপ্তার আছেন।শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন জানান, গ্রেপ্তার হওয়া দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে।মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, পিও মোতালেব হোসেনকে মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হবে। আর নাসিরউদ্দিনকে প্রেষণ-প্রত্যাহার করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে সাময়িক বরখাস্তের জন্য বলা হচ্ছে।নাসিরউদ্দিন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মচারী ছিলেন। কিন্তু তিনি প্রেষণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কাজ করতেন।

ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে মোতালেব হোসেন, নাসিরউদ্দিন ও লেকহেড স্কুলের পরিচালক খালেক হাসান মতিনের বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার রাতে বনানী থানায় মামলা করেন ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলাম মৃধা।গত রোববার রাতে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকাসহ নাসিরউদ্দিনকে গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মোতালেবকে একই সময়ে বছিলা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই দিন রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেছিলেন, টাকাসহ গ্রেপ্তার নাসিরউদ্দিনের সঙ্গে যোগসূত্র থাকায় মোতালেবকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।ঢাকা মহানগর ডিবি গতকাল সোমবার জানায়, জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে বন্ধ রাজধানীর লেকহেড গ্রামার স্কুল ঘুষের বিনিময়ে চালু করে দিতে চেয়েছিলেন মোতালেব হোসেন ও নাসিরউদ্দিন। এ জন্য তাঁরা স্কুলটির মালিকের কাছ থেকে ঘুষও নিয়েছিলেন। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে, ঘুষের মামলায় গ্রেপ্তার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মী এবং ঢাকার লেকহেড গ্রামার স্কুলের এক পরিচালকের জামিন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠিয়ে আদালত।

শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মোতালেব হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিন এবং লেকহেড গ্রামার স্কুলের অন্যতম মালিক খালেদ হাসান মতিনকে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করা হলে মহানগর হাকিম জিয়ারুল ইসলাম এই আদেশ দেন।ওই তিনজনের মধ্যে মোতালেব ও মতিনকে গত শনিবার এবং নাসির গত বৃহস্পতিবার থেকে নিখোঁজ জানিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছিল। পরে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে রোববার বলা হয়, তিনজনই তাদের হেফাজতে আছে।গ্রেপ্তারের সময় নাসিরের কাছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।সোমবার রাতে ঢাকার বনানী থানায় ওই তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন ডিবির এসআই মনিরুল ইসলাম মৃধা। জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে বন্ধ লেকহেড স্কুল খুলে দেওয়ার জন্য মতিনের কাছ থেকে মোতালেব ও নাসির ঘুষ নিয়েছিলেন বলে সেখানে অভিযোগ করা হয়। জামিন আবেদনের শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি বলেন, ফৌজদারি দ-বিধির ১৬১, ১৬২ ও ১৬৫ ধারায় দায়ের করা এ মামলা জামিনযোগ্য।তিনি যুক্তি দেন, বন্ধ করে দেওয়া লেকহেড গ্রামার স্কুল খোলার জন্য আসামিরা ঘুষ লেনদেন করেছিলেন বলে অভিযোগ করা হেয়েছে এ মামলায়। কিন্তু তার আগেই হাই কোর্ট ওই স্কুল খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। সুতরাং তাদের জামিন দেওয়া যায়। আর বাংলাদেশ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের মহাসচিব নাসিরের জামিন আবেদনের যুক্তিতে বলা হয়, ১৯ জানুয়ারি অফিসের পিকনিক সামনে রেখে যে কুপন বিক্রি হয়েছিল, তার টাকা ছিল নাসিরের কাছে। ১৮ জানুয়ারি আটকের সময় তার কাছে সেই টাকাই পেয়েছে পুলিশ।অন্যদিকে জামিন আবেদনের বিরোধিতায় দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, এ মামলা নিয়ে তদন্ত চলছে এবং অভিযোগপত্রে আসামিদের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ যুক্ত হতে পারে। তাদের এখন জামিন দেওয়া হলে তাতে তদন্তের বিঘœ ঘটতে পারে। শুনানি শেষে বিচারক জামিন নাকচ করে তিন আসামির সবাইকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।