জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করা জামিনের আবেদনের ওপর আগামী রোববার আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই দিন নির্ধারণ করেন।খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতে উপস্থিত হয়ে বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে নথি আসার বিষয়ে আদেশ দেওয়া হলেও ১৬ দিন পেরিয়ে গেছে। এখনো নথির বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।তখন আদালত বলেন, এ বিষয়ে রোববার আদেশ দেওয়া হবে।আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতে বলেন, বিচারিক আদালত থেকে ১৫ দিনের মধ্যে নথি আসার কথা, সেই সময় তো শেষ। আজ ১৬ দিন চলছে।

তখন বিচারক বলেন, ১৫ দিনের মধ্যে নথি পাঠাতে আমরা তো ২২ ফেব্র“য়ারি আদেশ দিয়েছিলাম। নথি এসেছে কি?জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, নথি এসেছে কি না জানি না। এখন উনার জামিন আবেদনটি আদেশের জন্য রাখা হোক।বিচারক তখন বিষয়টি রোববার আদেশের জন্য কার্যতালিকায় রাখার কথা বলেন।এই দুর্নীতি মামলার নথিপত্র আগামী রোববার হাই কোর্টে পাঠানো হবে বলে নিম্ন আদালতের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মী বুধবারই বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন।খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আমিনুল ইসলামও এদিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান গত ৮ ফেব্র“য়ারি এ মামলার রায়ে পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠান।

সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পেয়ে রায়ের ১০ দিন পর হাই কোর্টে আপিল করেন বিএনপি চেয়ারপারসন, সঙ্গে জামিনের আবেদনও করা হয়।খালেদার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাই কোর্ট তার অর্থদন্ড স্থগিত করলেও সে সময় জামিন প্রশ্নে সিদ্ধান্ত অপেক্ষমাণ রাখা হয়। হাই কোর্ট জানায়, নিম্ন আদালত থেকে এ মামলার নথি তলব করা হয়েছে। সেই নথি দেখার পরই জামিন বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে।বিএনপির দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় তাদের নেত্রীকে সাজা দেওয়া হয়েছে, এর উদ্দেশ্য খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে না দেওয়া। এ কারণে তারা খালেদার জামিনে মুক্তিও বিলম্বিত করতে চাইছে।অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দুদকের দায়ের করা এই মামলার রায় দিয়েছে আদালত। দুদক যেমন স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, তেমনি আদালতের উপরও সরকারের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ নেই। ফলে এ মামলা কিংবা রায়ের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এদিকে, বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বেঞ্চ সহকারী মোকাররম হোসেন জানিয়েছিলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ- দেওয়া মামলার মূল নথি হাইকোর্টে পাঠানো হচ্ছে। আগামী রোববার নিম্ন আদালত থেকে এই নথি হাইকোর্টে পাঠানো হবে।এর আগে গত ৮ ফেব্র“য়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদ- হয়। এরপর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়।

গত ২০ ফেব্র“য়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।এর পরেই গত ২২ ফেব্র“য়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় নিম্ন আদালতের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জামিন আবেদনের ওপর শুনানির জন্য ২৫ ফেব্র“য়ারি দিন ঠিক করেন। সেইসঙ্গে স্থগিত করেন খালেদা জিয়ার অর্থদন্ড।গত ২৫ ফেব্র“য়ারি বিকেলে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হয়। শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার মামলার নথি নিম্ন আদালত থেকে হাইকোর্টে এসে পৌঁছানোর পরই আদেশ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

এ মামলায় মোট আসামি ছয়জন। তার মধ্যে তিনজন পলাতক। এই তিনজন হলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেনÑমাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।