নির্বাচন না করার জন্য কাউকে জেলে নেবো না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আপনিতো এমনিতেই সব জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। নির্বাচনতো পরের ব্যাপার। নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা না হলে ২০১৪ সালের মতো কোনো নির্বাচন দেশের মানুষ মেনে নেবে না।
বৃহস্পতিবার (৩ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বক্তৃতা করছিলেন বিএনপি মহাসচিব। ‘বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিউজে) একাংশ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সাম্প্রতিক সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর নিয়ে বুধবার (২ মে) গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন পার্টি নির্বাচন করবে আর কোন পার্টি করবে না, সেটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। একজনের দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর আমরা তো আর চাপিয়ে দিতে পারি না যে, তোমাদের নির্বাচন করতেই হবে, না করলে তোমাদের ধরে নিয়ে যাবো জেলে। এটা বলবো? না কী বলবো? এর জবাবে ফখরুল বলেন, আপনিতো এমনিতেই সব জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। নির্বাচনতো দরকার নেই। নির্বাচন করা না করাতো পরের ব্যাপার, তার আগেইতো সব জেলে দিচ্ছেন।আওয়ামী লীগ আবারও ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন করতে চাইছে দাবি করে তাদের সে পথে না যেতে সতর্ক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।নির্দলীয় সরকারের অধীনে না হওয়ায় চার বছর আগে অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। ৫ জানুয়ারির ওই ভোট ঠেকানোর ঘোষণাও দিয়েছিল তারা।অন্যদিকে অধিকাংশ দলের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় বারের মতো ক্ষমতায়।একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও বিএনপির একই দাবি রয়েছে। সেই সঙ্গে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও তুলেছে তারা। এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কোনো উদ্যোগ তিনি নেবেন না।
ফখরুল প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, যে সমস্যা আছে, সেই সমস্যার সমাধান করেন, সঙ্কটের সমাধান করেন। তারপর নির্বাচনে যান। কিছুই না করে যদি নির্বাচনে যান, তাহলে নির্বাচন কী হবে? যা হবার তাই হবে। যেটা করেছেন ২০১৪ সালে, তাই হবে।আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এভাবে তো এবার নির্বাচন হবে না। কতবার জেলে দেবেন, কতজনকে মারবেন, কতজনকে গুম করবেন- করতে পারেন। এবার এই ধরনের নির্বাচন এদেশের মানুষ মেনে নেবে না,বলেন বিএনপি মহাসচিব।নির্বাচনকালীন ‘নিরপেক্ষ সরকার’ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সংসদ ভেঙে দেওয়া ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করার দাবি আবারও জানান তিনি। সেইসঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও তিনি জানান।গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকা-ের সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, কালকে রাতেও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজকে সারা শহরে পুলিশ দিয়ে দিয়েছে, খুলনার বাইরের কেউ সেখানে গেলে তাকে ধরা হবে। নির্বাচনের কোন আইনে আছে, কোথায় আছে?গাজীপুর প্রথম দিন আমরা বলেছি যে, এসপিকে সরাতে হবে। এই এসপি হচ্ছে চিহ্নিত আওয়ামী লীগার। এখানে কোথায় গণতন্ত্র, কীসের নির্বাচন?ইসির সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, সরকার এমন একটা মেরুদ-বিহীন নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছে; আমি যখন তাদের ফোন করি তারা বললেন ‘না না সব ঠিক আছে’। কী ঠিক আছে?মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে বিএনপি সমর্থিত ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভা হয়।ফখরুল বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা তথা মুক্ত গণমাধ্যম নিশ্চিত করতে হলে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।সভায় আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন,বাংলাদেশের গণমাধ্যম দুই ভাগে বিভক্ত। একটি অংশ হচ্ছে যারা স্ব-আরোপিত সেন্সরশিপ আরোপ করে কোনোমতে টিকে আছেন। দ্বিতীয়টি দালাল গণমাধ্যম। এই দালাল গণমাধ্যমের কাজ হচ্ছে বর্তমান ফ্যাসিস্ট যে সরকার আছে তাদের তোষামোদ করা, সরকারি প্রচারযন্ত্র হিসেবে কাজ করা এবং বিনিময়ে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাওয়া। এই দুই গণমাধ্যমের বাইরে বাংলাদেশে আর কোনো গণমাধ্যমের অস্তিত্ব নাই।ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে আইন করা হয়েছিল। এবার একাদশ নির্বাচনের আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য এই আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে দেওয়া। এর বিরুদ্ধে আজকে সাংবাদিক সমাজকে সোচ্চার হতে হবে, প্রতিবাদ জানাতে হবে। ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, এখন বাংলাদেশের কথা বলার অধিকার নেই, জনসভা করার অধিকার নেই, বিচার পাওয়ার অধিকার নেই। একদল ছাড়া আর কেউ কথা বলতে পারবে না, জনসভা করতে পারবে না, কোনো কিছুই করতে পারবে না।এখন বাকশালের শাসনই বিরাজ করছে। পক্ষে বলে ঠিক আছে, না বললে ফ্যাসিবাদের নিপীড়ন-নির্যাতন। আজকে গণমাধ্যমের কাছে যে পুঞ্জিভুত তথ্য রয়েছে তা তাদের প্রকাশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।ডিইউজের সহসভাপতি শাহিন হাসনাতের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মো. শহীদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান বক্তব্য রাখেন।