রোজা শুরুর আগে অধিকাংশ নিত্যপণ্যেরদাম স্থিতিশীল থাকলেও পেঁয়াজ-রসুনের দাম বেড়েছে।সরবরাহ ঘাটতির কারণে শাক সবজির দামও কিছুটা বেড়েছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন।ভরা মৌসুমেই রাজধানীর বাজারে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দর।তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ধাপে ধাপে খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে প্রায় ১৫ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজির দাম এখন মানভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। এর সঙ্গে ভারতীয় পেঁয়াজের দরও কেজিতে ৫-৭ টাকা বেড়েছে।শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজ ১৪০ টাকা। সেই হিসাবে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৩৮ টাকা আর আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি পড়ছে ২৮ টাকা।ঠিক এক সপ্তাহ আগে কারওয়ান বাজারে কেজিপ্রতি দেশি পেঁয়াজ ছিল ৩৪ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ছিল ২৫ টাকা।
দেশে পেঁয়াজের ভালো উৎপাদন হওয়ার পরও ভরা মৌসুমে এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা তিনটি কারণ দেখাচ্ছেন। এগুলো হলো প্রথমত, বছরজুড়ে সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ কিনে মজুত করায় সৃষ্ট বাড়তি চাহিদা। দ্বিতীয়ত, কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ নিয়ে চাষিরা হাটে না আসায় সরবরাহে টান পড়া। তৃতীয়ত, ভারতে দাম কিছুটা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব।রাজধানীর কাজিপাড়া বাজারে বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৫০ টাকা। আকারে ছোট দেশি পেঁয়াজের দাম চাওয়া হয় ৪৫ টাকা। প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৩৫ টাকা। দুই-তিন সপ্তাহ আগেও এক কেজি দেশি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম ৩৫ টাকা ছিল। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজের দাম ৪০-৫০ টাকা, যা এক মাস আগের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি।কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানগুলোতে দেশি পেঁয়াজ প্রতি ৫ কেজি ২১০ টাকা, দেশি কিং নামের পেঁয়াজ ৫ কেজি ১৯০ টাকা ও ভারতীয় ছোট পেঁয়াজ ১৫০ টাকা।কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মুজিবুর রহমান বলেন, তিনি কিছুদিন আগেও প্রতি মণ দেশি পেঁয়াজ ১ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এখন কিনতেই হচ্ছে দেড় হাজার টাকায়। এ বছর পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তবে মৌসুমের শেষ দিকে বৃষ্টিতে আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ১৮ লাখ ৬৬ হাজার টন, যা আগের বছরের চেয়ে ১ লাখ ৩১ হাজার টন বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত অর্থবছরে ১০ লাখ ৪১ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ৩ লাখ ৪০ হাজার টন বেশি। সব মিলিয়ে গত অর্থবছরে পেঁয়াজের জোগান এসেছে ২৯ লাখ টন।পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে আড়তের মালিক নারায়ণ চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টি-বাদলে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। একই সময়ে চাহিদাও বেড়েছে। আবার ভারতের বাজারও বাড়তির দিকে। এসব কারণেই পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। অবশ্য তিনি বলেন, শ্যামবাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৫-৩৮ টাকা। এই দর এক সপ্তাহ আগের চেয়ে ৫-৭ টাকা বেশি।
এই বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা রাশেদুল ইসলাম বলেন, মাঝখানে কিছুদিন দাম স্থিতিশীল ছিল। এখন মোকামে দাম বাড়তে শুরু করেছে। পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা রসুনের দামও কেজিতে অন্তত ৩০ টাকা বেড়েছে। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ার কারণেই খুচরায় দাম বাড়তে শুরু করেছে বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। তবে দেশি রসুন আগের মতোই প্রতিকেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।দুই সপ্তাহ আগে চীনা রসুন প্রতিকেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও গত সপ্তাহে তা বেড়ে গিয়ে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়। চলতি সপ্তাহে চীনা রসুনের দাম প্রতিকেজি ১২০ টাকা।রসুনের মতো বিভিন্ন মানের আদার দামও গত দুই সপ্তাহে ৮০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতিকেজি ১৬০ টাকায় ঠেকলেও চলতি সপ্তাহে তা কমে আবার ১৪০ টাকায় নেমেছে। তবে আগের মতোই কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে শাক-সবজি।কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি পটল ৪০ টাকা, ঢেঁড়শ ২৫ টাকা, করল্লা ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঝিঙা ৪০ টাকা, শসা ২৫ টাকা, বেগুন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।রমজান মাস সামনে রেখে এবার ডাল-ছোলাসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে বলে মুদি দোকানিরা জানিয়েছেন। তবে গত এক সপ্তাহে চিনির দাম কিছুটা বেড়েছে।মুদি দোকানি কেএম আবুল বাশার বলেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির দাম কেজিতে অন্তত ৪ টাকা বেড়ে এখন ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকানে চিনি বিক্রি হচ্ছে এখন ৬০ টাকায়।বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০ টাকায়। এছাড়া ৬৪ টাকা ও ৬৫ টাকা দরেও ছোলা বিক্রি হচ্ছে। কাবলি বুট প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এছাড়া খেসারি ডাল কেজিপ্রতি ৫৫ টাকা, ডাবলি ৩৮ টাকা, মসুর ডাল ৫৫ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে বেঙ্গল ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম জানান, রোজাকে সামনে রেখে অধিকাংশ মুদিপণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। সোয়াবিন তেলের দাম আগের চেয়ে নিম্নগামী। প্রতি লিটার খোলা সোয়াবিন তেল ৮৭ টাকা, পাম তেল ৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চিনির ৫০ কেজির বস্তা এখন ২৬০০ টাকা থেকে ২৭০০ টাকার মধ্যে।রমজানে চাহিদার শীর্ষে থাকা খেজুরের দামও স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন আরেক বিক্রেতা হোসাইন আহমেদ।তিনি বলেন, বাজারে এখন সবচেয়ে ভালো মানের খেজুর বা মরিয়ম খেজুরের কেজি ৭৫০ টাকা, তিউনিশীয় খেজুর ৩৮০ টাকা, দাবাস খেজুর ২৪০ টাকা এবং খোলা খেজুর ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।