ভোটের সময় সংসদ ভেঙে নির্দলীয় সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি তোলার পর এখন একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান নির্বাচন কমিশনে পুনর্গঠন চেয়েছেন বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদ।বিএনপি যাতে আগামী নির্বাচনে অংশ না নেয় সেজন্য সরকারের সব আয়োজন চলছে।যতই নির্বাচনের কাছাকাছি যাচ্ছি ততই মনে হয় সরকার আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সুষ্ঠু নির্বাচন রুখতে যত রকমের ষড়যন্ত্র করা যায় সেগুলো তারা করছে।

শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ একথা বলেন। নির্বাচন কমিশন সরকারের স্বার্থে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যত পদক্ষেপ নিচ্ছে সব সরকারি প্রার্থীদের বিজয়ী ও বিরোধীদের পরাজিত করার জন্য। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে মওদুদ বলেন, যে কমিশন আছে তাদের পক্ষে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা সম্ভব নয়। কারণ গাজীপুর ও খুলনায় সরকার সমর্থকরা প্রতিদিন নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছে। কিন্তু কমিশন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। সরকার দলীয় প্রার্থীদের সুবিধার জন্য নির্বাচন কমিশন অনেকগুলো আসনে সীমানা পুনঃনির্ধারণ করেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, খালেদা জিয়াকে বন্দি করে বিএনপির সব নেতাদের নামে মামলা দিয়ে তারা এমনভাবে এগুচ্ছে যাতে আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারি। এই ষড়যন্ত্র থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই। আগামী ডিসেম্বরে যে নির্বাচন হবে, সে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হবে। সে নির্বাচনে এই ষড়যন্ত্র করতে দেওয়া হবে না। তার আগে এই নির্বাচন কমিশনকে গণজোয়ারের মাধ্যমে ধংস করা হবে।

গত বছর দায়িত্ব নেওয়া কে এম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে গিয়ে তাদের আন্তরিকতার প্রশংসা করলেও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছিল বিএনপি।তবে শনিবার এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ তার নিজের সংসদীয় আসন সীমানা পরিবর্তনের বিরোধিতা করে সরাসরি ইসি পরিবর্তনের আওয়াজ তুললেন।তিনি বলেন, গত ৩০ এপ্রিল সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সংবিধানের ক্ষমতা অপপ্রয়োগ করে নির্বাচনী সীমানা নির্ধারণীর যে চূড়ান্ত সংশোধনী ছাপিয়েছে, এটা আমরা প্রত্যাখ্যান করি।আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, এই কমিশনের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভবপর নয়। সেজন্য জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই এই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।এই বছরের শেষ দিকে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তার আগেই গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন মওদুদ।

গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দুই সিটিতে আপনারা দেখতেই পারছেন যে, সরকার সমর্থিত প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা অব্যাহতভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলছেন। তাদের (ক্ষমতাসীন) কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের একটা দৃষ্টান্তও স্থাপন করতে পারেন নাই নির্বাচন কমিশন।সংসদীয় আসন সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাহেব, আমিসহ আমাদের অনেক নেতার এলাকা এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে করে আমরা নির্বাচনে যেতে চাইলেও যেতে না পারি। সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের সুবিধা সৃষ্টি করার জন্য এই নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ হয়েছে।

নিজের নির্বাচনী আসন নোয়াখালী-৫ এর বিষয়ে মওদুদ বলেন, এই আসন থেকে আমি ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। ১৯৭৯ সাল থেকে প্রায় ৩৯ বছর যাবৎ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বসুরহাট পৌরসভা, কবিরহাট উপজেলা, কবিরহাট পৌরসভা ও সদর পূর্বাঞ্চলের দুইটি ইউনিয়ন সমন্বয়ে এই সংসদীয় আসন।সদর পূর্বাঞ্চলের দুটি ইউনিয়ন ‘অশ্বদিয়া ও নেওয়াজপুর’ ইউনিয়নকে সরকারি দলের প্রভাবশালী প্রার্থী, যারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিনাভোটে নোয়াখালী-৪ ও ৫ আসনের সংসদ সদস্য লাভ করেছেন, তাদের সুবিধার্থে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে কেটে নোয়াখালী-৪ আসনের অধীনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নোয়াখালী-৫ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নোয়াখালী-৪ আসনে একই দলের একরামুল কবির চৌধুরী।মওদুদ বলেন,আমার এলাকার হাজার হাজার মানুষ গণস্বাক্ষর নিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের উচিৎ হবে এই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে অশ্বদিয়া ও নেওয়াজপুর ইউনিয়নসহ নোয়াখালী-৫ নির্বাচনী এলাকা অক্ষুন্ন রাখা।সংগঠনের উপদেষ্টা মোহাম্মদ মাসুকের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, সাবিহা নাজমুল, ফরিদ উদ্দিন, মোশাররফ হোসেন বক্তব্য রাখেন।