লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে মহাকাশে সদ্য উৎক্ষেপিত বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট’ এর মালিকানা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিএনপি।এর মালিকানা ‘দুই ব্যক্তির কাছে চলে গেছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর; তবে তাদের পরিচয় তিনি প্রকাশ করেননি।শনিবার (১২ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স হলে এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি একথা বলেন।খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং ডা. সামীউল আলম সুধীনের উপর হামলায় প্রতিবাদে বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখেন ফখরুল।দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আলোচনা করুন, দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন, তার সঙ্গে কথা বলুন, নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করুন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।সেনাবাহিনী মোতায়েন করুন, যাতে মানুষ নিরাপদে নির্ভয়ে ভোট দিতে যেতে পারে, সঠিক রায় পাওয়া যায় সেই ব্যবস্থা করুন।তাহলে অবশ্যই এই দেশে গণতন্ত্রের সুবাতাস বইবে। মানুষ স্বস্তি ফিরে পাবে।জনগণই এদেশের মালিক।সেই জনগণের যেটা চাহিদা সেটা পূরণের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এই দেশের মানুষ আপনাদের ক্ষমা করবে না।মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যারা দেশ স্বাধীনের জন্য যুদ্ধ করেছিলাম তারা সত্যিকার একটি শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করেছিলাম। আজ এই সময়ে এসে একদম তার উল্টোটা দেখতে পাচ্ছি। একটা অশান্তিময়, অগণতান্ত্রিক চরম স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বসবাস করছি।খালেদা জিয়াকে তিনমাস ধরে মিথ্যা সাজানো মামলায় আটকে রাখা হয়েছে এবং জামিন পাওয়ার আইনগত অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ৯ মে সুপ্রিম কোর্টে যখন শুনানি হচ্ছিল তখন অ্যাটর্নি জেনারেলকে একজন বিচারক জিজ্ঞাসা করলেন, ডিফেন্সের আইনজীবীরা চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, এমন একটি মামলা দেখান যে মামলায় হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন, আর চেম্বার জজ ও সুপ্রিম কোর্ট সেটাকে আটকে দিয়েছেন। তারা পারেননি।শনিবার ভোররাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে সফলভাবে উৎক্ষেপণ ঘটে বাণিজ্যিক কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু-১’ এর। এর মধ্য দিয়ে মহাকাশে পা রাখল বাংলাদেশ।মহাকাশে বাংলাদেশের এই সাফল্যে বিএনপির নীরবতা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের প্রশ্ন উত্থাপনের মধ্যে এনিয়ে কথা বলেন ফখরুল।বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওটার (বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট) মালিকানা চলে গেছে, জানেন তো। এই স্যাটেলাইটের মালিকানা চলে গেছে দু‘জন লোকের হাতে এবং সেখান থেকে আপনাদেরকে কিনে নিতে হবে।বিটিআরসির অধীনে নেওয়া প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের মাধ্যমে উৎক্ষেপিত এই উপগ্রহের মাধ্যমে বিপুল রাজস্ব আয়ের আশা করছে সরকার।তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলছেন, এই যোগাযোগ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মূলত তিন ধরনের সেবা পাওয়া সম্ভব। এগুলো হল- সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ ও ডেটা কমিউনিকেশন।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে এবং বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হবে।এই প্রকল্পের মোট ব্যয়ের প্রায় ৪৪ শতাংশ জোগান দেওয়া হয় সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। এক হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয় এইচএসবিসি থেকে।স্যাটেলাইট মহাকাশে কাজ শুরু করার তিন মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে এটি পরিচালনায় গঠিত কোম্পানি বিসিএসসিএল। পুঁজিবাজারে এই কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার পরিকল্পনার কথাও ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে।স্যাটেলাইটের মালিকানার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহের কথা জানালেও তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু না বলে ফখরুল বলেন, এটা আগে ঘুরক, আবর্তন করুক পৃথিবী, পরিক্রমা করুক, তখন দেখা যাবে।আলোচনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের অন্য দেশের সঙ্গে চুক্তি করার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ফখরুল।ভারতের সঙ্গে পাঁচটি প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের খবর গণমাধ্যমে দেখার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এই চুক্তি করার অধিকারটা তাকে (প্রধানমন্ত্রী) কে দিয়েছে? কারণ এই পার্লামেন্ট তো নির্বাচিত নয়। জনগণের পক্ষে যত চুক্তি করেন আপনি, সেই চুক্তি তো জনগণের চুক্তি নয়।২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছে বিএনপি; যারা ওই ভোট বর্জন করেছিল।ফখরুল বলেন, সব চুক্তিগুলো আমরা দেখব। যেমন মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করেছে, একটা লোকও (রোহিঙ্গা) যেতে পারেনি। যেটা আমার সবচেয়ে বেশি দরকার, সেই তিস্তার পানি চুক্তি এখন পর্যন্ত হয়নি।বিএসএমএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়ার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন ড্যাবের মহাসচিব এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আখতার হোসেন খান, শেরে বাংলানগর কৃষি বিশ্ববিদ্যলয়ের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি সেলিম ভুঁইয়া, এ্যাবের প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু।