ফেনীর কাজিরবাগে তৈরী হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্ক। পার্কটিতে বিনোদন কেন্দ্রের পাশাপাশি থাকছে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির উদ্ভিদসহ বন্য প্রাণী। আর শহর থেকে প্রায় ৫ কি. মি. দূরে নির্মল পরিবেশে পার্কটি হওয়ায় এরই মধ্যে দর্শনার্থীরা ভিড় জমাতে শুরু করেছে। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে কাজিরবাগে বন বিভাগের নার্সারীতে শুরু হওয়া পার্কের নির্মাণ কাজ চলতি মাসে শেষ হচ্ছে। ফেনী সদর উপজেলার কাজিরবাগ এলাকায় বন বিভাগের পাঁচ একর জায়গায় মনোরম পরিবেশে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে সবুজ শ্যামল দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্ক। প্রকল্পটি চালু হলে বিনোদন-জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ-পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হবে। ফেনী ছাড়াও নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা হবে। জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ইকোট্যুরিজমের উন্নয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এই এলাকাটি হয়ে উঠতে পারে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় স্থান।

সূত্র জানিয়েছে, পার্ক এলাকায় শাল, সেগুন, গর্জন, জাম, মেহগনি, লিচু, একাশিয়া, অর্জুন, আমলকি, বহেরা, হরিতকি, বাঁশ ও বেত গাছ বিদ্যমান রয়েছে। পর্যাপ্ত পরিবেশের অভাবে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এ এলাকার শিয়াল, সজারু, বেজি, বনবিড়াল, কাঠবিড়ালি, বানর, টিয়া, তোতা, ঘু ঘু, ময়না, গুই সাপ, বাদুড়, মাছ রাঙ্গা, কাক, শালিক, কাকাতুয়া, চড়–ই, বন মোরগ, রাজহাঁস ইত্যাদি রয়েছে পার্কটিতে।এ এলাকায় পার্শ্ববর্তী ভারত সীমান্ত থেকে হনুমান ও বানরের আগমন ঘটে নিয়মিত। এসব পশুপাখির বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরি করতে পারলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বিরল ও বিলুপ্ত প্রজাতির বৃক্ষ পরিচর্যার বিশাল সুযোগ তৈরি হবে। এজন্য ময়ুরের খাঁচা, বানরের শেড, সজারুর খাঁচাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির খাঁচা তৈরি, পানির ফোয়ারা নির্মাণ, গভীর নলকূপ স্থাপন এবং অফিস অবকাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। পার্কটিতে রঙিন পানির ঝর্ণাসহ লেকে থাকছে নৌকা ভ্রমনের ব্যবস্থা। দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য রয়েছে ওয়ার্কওয়ে, বাহারী রকমের ফুল ও ফলের বাগান, বসার সীট, ওয়াচ টাওয়ারসহ তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন মুর‌্যাল ও শিশুদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন আইটেম। এদিকে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক বন বিভাগের তত্বাবধানে পার্কটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ১ জুলাই জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রায় বিরল ও বিলুপ্ত প্রজাতির বিভিন্ন গাছ নিয়ে এ পার্কে এসে রিসার্চ কাজ চালাতে পারবে বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তারা।

পার্ক দেখতে আসা ফেনী পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের ছাত্র মুহিবুল ইসলাম বলেন, শহরের বাইরে হওয়া পার্কটিতে দর্শনার্থীদের নিরাপদে নিবিঘেœ আনন্দ উপভোগ করতে এজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে মাদকসেবী বা বখাটেরা কোন রকম পরিবেশ বিনষ্ট করতে না পারে।ফেনী কম্পিউটার ইনষ্টিটিউট এর ছাত্র আলী আশরাফ বলেন, আশাপাশের জেলায় ইকোপার্ক না থাকায় ওইসব জেলার লোকজন আনন্দ-বিনোদন ও জীববৈচিত্র্য দর্শনে এই ইকোপার্কে আসবে। তবে এখানো আরো নতুন নতুন সংযোজন মানুষকে আকৃষ্ট করবে। স্থানীয় শহীদুল হক বলেন, পার্কের প্রবেশ ফি যেন সকলের জন্য রিজোনেবল হয়। যাতে সব শ্রেণির দর্শনার্থীরা প্রবেশ করে আনন্দ উপভোগ করতে পারে। ফেনী সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা তপন কুমার দেবনাথ বলেন, বিলুপ্ত ও বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ সংরক্ষণ, বিভিন্ন পশু পাখির আবাসস্থল সৃষ্টি করা, চিত্ত বিনোদনের জন্য শোভাবর্ধনকারী ও মনোরম ফুলের বাগান তৈরি, পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ ও মৎস্য সংরক্ষন, শিশু-কিশোরদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা করছে এই ইকোপার্ক।সহকারী বন সংরক্ষক আবুল কাশেম ভূঞা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস করা ও জলবায়ু পরিবর্তন সহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতে এবং ইকোট্যুরিজমের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করতে এই ইকোপার্ক স্থাপন করা হচ্ছে।শুভপুর চেক স্টেশন কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র ভৌমিক বলেন, প্রাকৃতিক ও জীব-বৈচিত্র্যেও সমৃদ্ধকরণে ইকো পার্ক এলাকায় বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় বৃক্ষরোপণ ও শোভাবর্ধণকারী বৃক্ষসহ পশুপাখির খাবার উপযোগী বনজ ও ফলজ বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে কার্বণ সিকোয়েষ্ট্রেশান করবে পার্কটি।দাগনভূঞা রেঞ্জ কর্মকর্তা আবু তারেক খোন্দকার বলেন, জনসাধারণের বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র উন্নয়ন, স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও আয়ের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে ভূমিকা রাখবে ইকোপার্ক।সামাজিক বন বিভাগের ফেনীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস.এম কায়সার জানান, প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ হয়েছে। আগামী মাসে পার্কটি উদ্বোধন হবে ও সর্ব সাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে। তিনি আরো জানান, শহরের কোলাহল ছেড়ে, খোলা আকাশের নিচে, সবুজে ঘেরা মনোরম পরিবেশের ইকোপার্কটি ফেনীসহ আশপাশের মানুষের বিনোদনের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে।