কানাডায় প্রবাসীদের এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী ও খুনিদের মদদদাতারা ক্ষমতায় ফিরলে বাংলাদেশ রসাতলে যাবে।টরন্টোর ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্যে দেশের উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার গুরুত্বের বিষয়টিও প্রবাসীদের কাছে তুলে ধরেন তিনি।

কানাডার কেবেকে জি সেভেন আউটরিচ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর রোববার টরন্টোয় যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে মেট্রো কনভেনশন সেন্টারে কানাডা আওয়ামী লীগের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে উন্নয়ন হয় না। ওই স্বাধীনতা বিরোধী, ওই খুনিদের মদদদানকারী ক্ষমতায় আসলে আবার দেশ রসাতলে যাবে।আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে বলেই জি সেভেন আউটরিচ সম্মেলনে বাংলাদেশকে দাওয়াত করেছে।

এই উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগের আবারও ক্ষমতায় থাকার গুরুত্ব প্রবাসীদের বোঝান শেখ হাসিনা।বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারাটা আজকে শুরু হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে যে উন্নয়ন হচ্ছে, গ্রাম পর্যন্ত যে উন্নয়ন হচ্ছে, এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নেতিবাচক কর্মকা-ের কথাও প্রবাসীদের সামনে তুলে ধরেন তিনি।অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছি। আন্দোলন-সংগ্রাম করে নির্বাচনের সুষ্ঠু ধারা প্রতিষ্ঠিত করেছি।
এই বছরের শেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি যেন অব্যাহত থাকে, সবাইকে সে বিষয়টা দেখতে হবে।২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনসহ প্রায় স্থানীয় সরকার পর্যায়ে প্রায় ছয় হাজার নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি তুলে দরে তিনি বলেন, বিভিন্ন নির্বাচনে তাদের (বিএনপি) প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে। আমরা তো জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে যাইনি।খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়া যে সরকারের নয়, আদালতের বিষয়, তা প্রবাসীদের বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, অপরাধীদের একদিন না একদিন সাজা পেতে হয়। আর এতিমের টাকা মেরে খাওয়া আল্লাহও পছন্দ করেন না।আমি তো গ্রেপ্তার করিনি। আদালত সাজা দিয়েছে। বিএনপির এত বড় বড় আইনজীবী, তারা তো প্রমাণ করতে পারেনি যে খালেদা জিয়া নির্দোষ।

২০১৫ সালের প্রথম দিকে বিএনপির লাগাতার কর্মসূচিতে নাশকতায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি যদি রাজনৈতিক ভাবে গ্রেপ্তার করতাম, তবে যখন সন্ত্রাস করেছে, মানুষ খুন করেছে, তখনই গ্রেপ্তার করতে পারতাম।খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের মৃত্যুর পর সমবেদনা জানাতে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় ঢুকতে বাধা পাওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি চাইলে ওই দিন বাইরে থেকে আরও দুটো তালা মেরে পুলিশ পাহারা বসিয়ে আসতে পারতাম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডাদেশ পাওয়া পলাতক আসামি নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরাতে বাংলাদেশ সরকার কানাডার আদালতে আইনি লড়াই চালাবে। এজন্য কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকেও নূর চৌধুরীকে ফেরত দিতে কানাডার প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

কানাডার প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে জি-সেভেন আউটরিচ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার (৮ জুন) দুপুরে কুইবেকে পৌঁছান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্বের আরও ১২ জন নেতাকে আউটরিচ অধিবেশনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সম্মেলনে যোগ দেওয়া শেষে রবিবার (১০ জুন) বিকেলে টরন্টোতে কানাডা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন তিনি। টরন্টোতে মেট্রো কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর করতে চাই। তারা বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ।যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রাশেদ চৌধুরী এবং পাকিস্তানে পলাতক রশিদ ও ডালিমসহ বঙ্গবন্ধুর সব খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়ারও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

সাবেক সেনা কর্মকর্তা নূর চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর ১২ খুনির একজন। ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ছাড়ার পর কূটনীতিক হিসেবে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করেন। নূর তার কূটনীতিক পাসপোর্ট নিয়েই হংকং থেকে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে একই বছর তিনি কানাডায় প্রবেশ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সাল পরবর্তী শাসকরা কেবল দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই বাধাগ্রস্ত করেননি, দেশের অর্থনীতি, স্বাধীনতা যুদ্ধের স্পৃহা ও দেশের সব গৌরব ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি বলেন, তার সরকার নির্দিষ্ট কোনও গোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করছে না, বরং দেশের সর্বস্তরের জনগণের জন্য বিশেষ করে গ্রাম এলাকার উন্নয়নে কাজ করছে। আর লোকজন এখন তার সুবিধা ভোগ করছে।বহুদলীয় গণতন্ত্র’র নামে জিয়াউর রহমান দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কলুষিত করেছেন বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগ সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শুদ্ধতা আনতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। ‘গত সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি, সেটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু তাদের ভুল সিদ্ধান্তের জন্য জনগণকে মাশুল গুনতে হবে কেন। কেনইবা তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে নিষ্পাপ জনগণকে জীবন্ত পুড়ে মরতে হবে’- প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।

রবিবার (১০ জুন) কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকেও নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানান শেখ হাসিনা। ট্রুডো তাকে বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ নিয়ে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীকে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠাতে ট্রুডোর ব্যক্তিগত পদক্ষেপ কামনা করেন। ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নূর চৌধুরী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী। সে একজন আত্মস্বীকৃত হত্যাকারী এবং বাংলাদেশের আইনে দোষী সাব্যস্ত। ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধের জবাবে ট্রুডো তার প্রতি সমবেদনা জানান। শেখ হাসিনাকে ট্রুডো বলেন, এটা আপনার জন্য কতটা কষ্টদায়ক তা আমি বুঝতে পারছি।

কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোহাম্মদ মাহমুদ মিয়ার সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফও বক্তব্য রাখেন।