স্বাধীনতা বিরোধীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশের জন্য ঢাকায় একটি ঘৃণাস্তম্ভ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানালেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি জানান, ঘৃণা স্তম্ভ নির্মাণে এরইমধ্যে স্থাপত্য অধিদফতরের মাধ্যমে স্থাপত্য নকশার খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।

স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বেগম উম্মে রাজিয়া কাজলের প্রশ্নের লিখিত জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।সংসদে মন্ত্রীর দেওয়া তথ্যানুযায়ী শীঘ্রই নকশাটি চূড়ান্ত করা হবে এবং প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। তবে রাজাকারদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে বেসরকারিভাবে জনগণের কাজে লাগানোর কোনো পরিকল্পনা নেই।সরকারি দলের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণ পরিচয়পত্র প্রদর্শন পূর্বক রেলওয়েতে প্রথম শ্রেণীতে বিনা ভাড়ায় যাত্রায়াতের সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিমানের অভ্যন্তরীণ প্রতিরুটে (যাতায়াত) বছরে একবার এবং আন্তর্জাতিক যে কোনো রুটে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন।

এছাড়া বিনা ভাড়ায় বিআরটিসি বাসে, বিআইডব্লিউটিএর জলযানে প্রথম শ্রেণী বিনা ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারেন। একইসঙ্গে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল ও হোটেলে স্ব-পরিবারে সর্বোচ্চ ২ রাত বিনা ভাড়ায় বছরে একবার থাকার সুবিধা পেয়ে থাকেন।ফ্লাইট সেইফটি অডিটে বাংলাদেশের ব্যাপক সাফল্য সাবেক বিমানমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খানের প্রশ্নের জবাবে বর্তমান বিমানমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল জানান, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা (আইসিএও) কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন সময়ের অডিটে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৭ সালে আইসিএও কর্তৃক পরিচালিত অডিটে ফ্লাইট এ্যান্ড রেগুলেশনস বিষয়ে বাংলাদেশ ৭৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ ইফেকটিভ ইমপ্লিমেনটেশন অর্জন করেছে, যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।মন্ত্রী জানান, এ অর্জনের ফলে বাংলাদেশ ফ্লাইট সেইফটি ওভারসাইট বিষয়ে পৃথিবীর প্রথম সারির দেশগুলোর মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। বাংলাদেশের এই যুগান্তকারী সাফল্যে আইসিএও বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে এবং সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ আইসিএও কাউন্সিল প্রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট এ্যাওয়ার্ড ঘোষণা করেছে, যা বাংলাদেশের এভিয়েশন সেক্টরের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মাননা এবং ঐতিহাসিক অর্জন।

এদিকে, বর্তমান সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কৃষি খাতকে গতিশীল করার জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে চলেছে। এর ফলে বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতি থেকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সরকারের কৃষি বান্ধব নীতি গ্রহণ এবং তা যথাযথ বাস্তবায়নের ফলেই বর্তমান সরকারের সময়ে কৃষি উৎপাদনে অসামান্য সফলতা অর্জিত হয়েছে।মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে ন্যাপের মিসেস আমিনা আহমেদের প্রশ্নের লিখিত জবাবে এ তথ্য জানান কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী। তিনি জানান, চাল, গম, ভুট্টাসহ সকল প্রকার ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কৃষি উন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়েছে। এর ফলে কৃষি উন্নয়নে ধারাবাহিক সফলতাও পাওয়া যাচ্ছে।জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী জানান, বর্তমানে সারাদেশে মোট আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫৫৬ হেক্টর। মোট সেচকৃত জমির পরিমাণ ৭৪ লাখ ৪৮ হাজার ১০০ হেক্টর। অর্থাৎ সেচের আওতার বাহিরের কৃষিজমি সমূহ সেচের আওতায় আনার জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন জায়গায়- রাবার ড্যাম, ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণাগার স্থাপন, সেচ যন্ত্রপাতি সহজলভ্যকরণ ইত্যাদির মাধ্যমে সেচের আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনুর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ নিশ্চিত করার জন্য কৃষক পরিবারকে ২ কোটি ৫ লাখ ৪৪ হাজার ২০৮টি কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণ করা হয়। এর মধ্যে কৃষকের মাঝে ১ কোটি ৯১ লাখ ৮১ হাজার ৪৬৭টি ও কৃষাণীর মাঝে ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৬৪১টি কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণ করা হয় এবং সরকারের বিশেষ সুবিধায় কৃষি উপকরণ কার্ডের মাধ্যমে খোলা সচল ১০ টাকার ব্যাংক একাউন্টের সংখ্যা ৯২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৯০টি। যার মাধ্যমে কৃষকগণ ফসফ উৎপাদনের ঋণ এবং কৃষি উপকরণ সহায়তা পেয়ে থাকেন। সরকারি দলের বজলুল হক হারুনের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী জানান, কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বারি উদ্ভাবিত প্রযুক্তিসমূহ কৃষক পর্যায়ে দ্রুত পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ই-কৃষি চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রযুক্তিসমূহের তথ্য কৃষক পর্যায়ে সহজলভ্য করার জন্য মোবাইল অ্যাপস কৃষি প্রযুক্তি ভান্ডার তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাপসের মাধ্যমে বারি উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্বন্ধে কৃষকরা সহজে জানতে পারে এবং ভোক্তাদের প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।