ওগো রাব্বুলআলআমিন! সমস্ত প্রশংসা তোমার জন্য, তুমি বিশ্বজগতের মালিক, পরম দয়ালু ও করুণাময়।তোমাকে আমার ভালোবাসা দিতে, আমার মনের সব কথা বলিতে তোমার দরবারে হাত তুলেছি।আমার এ মনের কথা তোমার কাছে যাচ্ছে না কেন কিছুতেই?

আজ বুধবার সকাল ৭টা,সবাই বাসা থেকে যার যার কাজে চলে গেলো। আমি আমার কাজ শুরু করলাম, বেশ কয়েকজনকে টেলিফোন করা, রান্নাঘরের কিছু কাজ সেরে একটু নিরিবিলি ভাবে বসতেই মনে হোল নামাজের পাটিতে বসে একটু রাব্বুল আল আমিনকে তাঁর সমস্ত সাহায্যের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই ও প্রশংসা করি। এমন আশা নিয়ে বসিনি তো কোনদিন এর আগে! বসে গেলাম ধ্যানে। সিজদা দিয়েছি, কপাল জায়নামাজের পার্টিতে।সময় পার হয়ে যাচ্ছে আমি সিজদার ওপর আছি।আমার সারা শরীরে কোন নড়াচড়া নেই, আমি নিস্তব্ধ, নিরবে সিজদায় মগ্ন। চোখ বন্ধ করে পড়ে আছি। কী শুরু করব? কী ভাবব? আমার ভিতরের এবং বাইরের প্রকৌশল ও দক্ষতা সব কিছু এত এলোমেলো হয়ে আছে যে আমি মুহুর্তকে কোনরকম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিনে। হাজারো চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে এবং তাও এলোমেলোভাবে। কোত্থেকে এবং কীভাবে শুরু করব? কোনটাকে বাদ দিব কিছুই বুঝতে পারছিনে! মাঝে মধ্যে সেই অদৃশ্য বিশ্বাসের কাছে করুণা, রহমত ও সাহায্যের জন্য কাঁন্না -কাটি করছি কিন্তু কিছুতেই রাব্বুল আল আমিনের সাথে ইন্ট্রাকশন তৈরি করতে পারছিনে। আমি সিজদার ওপর আছি। আমি ভিতরের জগত ছেড়ে পুরোপুরিভাবে বাইরের জগতে চলে যাচ্ছি ।আমার মনকে ঠেকানোর বা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আমার নেই। আমি আর আমি নেই। আমি আমাকেই পরিচালনা করতে পারছি নে।

কম্পিউটারে যখন অনেক তথ্য জমা হয় এবং যন্ত্রের যদি ভাল ধারণক্ষমতা না থাকে তখন হয় তা আপগ্রেড করতে হয় বা অনেক তথ্য ডিলিট করতে হয় বা নতুন একটি কিনে রিপ্লেসমেন্ট বা প্রতিস্থাপন করতে হয়, কিন্তু এই মুহুর্তে আমি তো কিছুই করতে পারছিনে! জীবনে যা ঘটেছে যেন একের পর এক মুহুর্তের মধ্যে আসা যাওয়া করছে, যার যা খুশি করছে! আইন,নিয়ম-কানুন,ধৈর্য কিছুই দেখাচ্ছে না বা মানছে না।আমি শুধু আমাকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।আমি লজ্জা এবং ঘৃনাবোধ করছি আমাকে নিয়ে। কীভাবে এটা হতে পারে ? এদিকে মুখস্ত সকল সুরা এবং নামাজের যেসব নিয়ম কানুন রয়েছে তা আমি দিব্যি পড়ে যাচ্ছি, কিন্তু যাঁর স্বান্নিধ্যে আমি আমার মুহুর্তটি উৎসর্গ করার জন্য বসেছি এই নামাজের পাটিতে তাঁকে ১০০% সময় দিতে আমার মন প্রান কেন যেন বাধার সৃষ্টি করছে! আমি যে নামাজ পড়তে বসলাম তাঁর সামনে দাড়াতে দিলো না আমার জীবনের সমস্ত ঘটনাগুলো! কেন তারা আমাকে এতটুকু সময় দিচ্ছে না? মন খারাপ হয়ে গেলো, নামাজ শেষ করে বসে ভাবছি, আমার ভাবনা থেকে কিছু কথা। আমার এই সময়টুকু আমি দৃঢ়তার সাথে বেছে নিয়েছি যে, যা কিছুই ঘটুক না কেন মুহুর্তটি আমি নিয়ন্ত্রন করতে চাই পরম করুনাময়ের জন্য এবং নিজেকে ১০০% উৎসর্গ করতে চাই। কিন্তু শত চেষ্টা করেও আমি তা পারলাম না, পারলাম না তা কিছুতেই। আমার ধ্যানে,জ্ঞানে,মনে ও প্রানে মুহুর্তটি এলোমেলো হয়ে আছে , একে নিয়ন্ত্রনে না আনতে পারলে তো হবেনা কোন লাভ! “হেয়ার এন্ড নাও কনসেপ্ট “ কীভাবে ব্যাবহার করা সম্ভব?

নিজেকেই যদি নিয়ন্ত্রনে আনতে না পারি তাহলে কীভাবে অন্যকে নিয়ন্ত্রন করব? ভালো মন্দ যাই ঘটুক না কেনো জীবনে সেই জন্ম থেকে শুরু করে মনের এবং বিবেকের সব স্মৃতি, তা হোক না ভালো বা মন্দ সব মনের মধ্যে জড়িয়ে রয়েছে, একে ডিলিট করতে পারছিনে। ইচ্ছে করছে খারাপ গুলোকে যদি অগত্যা ডিলিট করতে পারতাম! আমি বড় বিপদে এবং চিন্তার মধ্যে আছি,তাই আমার প্রশ্ন? আছে কি কেও যে এর সমাধান জানে? পেতে পারি কি তেমন কোন সমাধান? না কি এই সমাধান খুঁজতে শেষে সন্যাসী বা গুরু হতে হবে? নাকি “সিম্পলি জাস্ট গিভ আপ” করে সমাজ ধর্ম ত্যাগ করে পালিয়ে বেড়াব? এটা কি সম্ভব, আমাদের কর্মের ফলাফল অন্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বা জাস্ট ডাস্টবিনে গিয়ে ফেলে আসা? যেমনটি প্রতিদিন ব্যাগ ভরে নোংরা জড় করে ফেলি? আমাদের বাহ্যিক জীবনের সব নোংরামি যেমন ডাস্টবিনে আমরা নিজেরা বা কাজের লোক দিয়ে প্রতিদিন ফেলছি এবং তা কর্মরত কর্তৃপক্ষ এসে নিয়ে যাচ্ছে এবং ডাস্টবিন খালি করছে ভরে গেলে। আমরা আবার তাকে নোংরায় ভরছি, এমন নয় যে নোংরার শেষ হচ্ছে। যা কিছু করছি, – রান্না করা থেকে শুরু করে নানা ধরনের কাজ করা যাই করি না কেন,আবর্জনা বা ময়লা হচ্ছে এবং আমরা পরিস্কার করছি নানা ভাবে।গায়ে ময়লা? সাবান দিয়ে পরিস্কার করছি, দাঁতে ময়লা? ব্রাস করছি, কাপড়ে ময়লা? ধোপার কাছে দিয়ে পরিষ্কার করাচ্ছি। ঘরে ময়লা? লোকদিয়ে বা নিজেরা পরিষ্কার করছি। মনে ময়লা? কী করছি? কী পদ্ধতি ব্যাবহার করছি? নামাজে সিজদা দিয়ে তা পরিস্কার করতে চেস্টা করছি? কিন্ত পরিষ্কার করতে পারছি কি? বাহ্যিক জীবনে যেমন একটি উদাহরন – “একটি দুঃর্গন্ধ বা নোংরা জিনিস “ বিছানায় দেখছি বা তার জঘন্য দুঃর্গন্ধ পাচ্ছি, তা যদি পরিষ্কার না করি পারব কি ঠিকমত ঘুমাতে? তেমনটি হয়েছে আমাদের বেলাতে, নামাজের বেলাতে, হাজারো এলোমেলো সমস্যা, নোংরামি, মনের ভিতরের কলুষতা জমা হয়ে আছে এত বছর ধরে কেউ নেই যে পরিষ্কার করছে! ও নোংরা কোটি কোটি টাকা খরচ করলেও বা কেউকে দিয়েও তা পরিষ্কার করা সম্ভব নয়। ওটা আমাদের নিজেদেরকেই পরিষ্কার করতে হবে। আমার এই “হেয়ার এন্ড নাও কনসেপ্টের” সন্ধান পেতে হলে আমাকে এখন জানতে হবে এবং জানতে হলে শিখতে হবে। কী শিখতে হবে? ভালো মন্দের পার্থক্য। “সুণার বেটার”, যত তাড়াতাডি সম্ভব তত ভালো। ভেতরের ময়লা পরিষ্কার করার জন্য আমাকে,আমাদের বিবেককে, পারিপার্শিকতাকে,অভিভাবককে, সমাজকে,সবাইকে একত্রিত হয়ে সঠিক পথে চলা,সত্য কথা বলার জন্য বেষ্ট প্রাক্টিস শুরু করতে হবে। নইলে হাজারো চেষ্টা করলে কাজ হবে না যতই আমরা মন্দিরে বা মসজিদে বসে বা সিজদায় ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করি,- পাওয়া যাবে না মহান শ্রষ্টার সান্নিধ্য,কারন মনের আবর্জনা সারাক্ষন আসা যাওয়া করছে আমাদের ধ্যানে ও জ্ঞানে।একে দুর করতে হলে দরকার তৈরি করা একটি সুন্দর মন আর তা পেতে হলে শিখ
তে হবে ভালোবাসা এবং ভার্তৃত্ববোধ। ভালোলাগাতে হবে ভালোকে যা শুধু নিজের জন্য নয় সবার জন্য ভালো। তৈরি করতে হবে ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা আর তা পেতে হলে তৈরি করতে হবে ভালোবাসার ওপর বিশেষায়িত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়, কোথায়? মনের মাঝে।

রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে।
Rahman.Mridha@ownit.nu