বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর নিহতের প্রতিবাদে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে নেমে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে মানববন্ধন এবং গাড়িচাপায় শিক্ষার্থী হত্যার বিচার দাবি করেন।শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সিটি কলেজের সামনে একটি বাসে ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেন।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ফার্মগেট সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করে বিজ্ঞান কলেজ ও তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থীরা। রিমন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, সড়কে সব হত্যার বিচার করতে হবে। আমাদের নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা দিতে হবে।সরেজমিন দেখা যায়,রাজধানীর বাড্ডায় অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট ইউনির্ভাসিটির শিক্ষার্থীরা হাতিরঝিল সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করেছে। ইস্ট ওয়েস্টের শিক্ষার্থী সাদিক তারেক বলেন, কিছু দিন পরপর আমাদের বাসের চাকার নিচে পিষ্ট করে হত্যা করা হয়। এর কোনও বিচার হয় না। কেন বিচার হবে না আমরা তা জানতে চাই।এদিকে, তেজগাঁওয়ে নাবিস্কোর সামনে নিরাপদ সড়ক ও শিক্ষার্থীদের সড়কে গাড়িচাপা দিয়ে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। এ সময় সড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ করেন। সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হাসিব ও সজল বলেন, ‘আমরা যখনই প্রতিবাদ করি, তখন কেবল সান্ত¡না পাই। আমরা সড়কে সব হত্যার দৃশ্যমান বিচার প্রক্রিয়া দেখতে চাই।কাফরুল এলাকায় শহীদ স্মৃতি পুলিশ কলেজের শিক্ষার্থীরা দুপুরে রাস্তা অবরোধ করতে চাইলে তাদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জে এক ছাত্র আহত হয়েছেন।ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা দুপুর দেড়টার দিকে মিরপুর রোডে মানববন্ধন করেন। সড়ক অবরোধ করে তারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে স্লোগান দেন। তারা কলেজের সামনে হিমাচল পরিবহনের একটি গাড়িতে আগুন দেয়।

প্রসঙ্গত, রবিবার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ওরফে সজীব এবং একই কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মিম নিহত হন। এ সময় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। পথচারীরা সঙ্গে সঙ্গে আহতদের নিকটস্থ কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে গুরুতর আহত কয়েকজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে ভর্তি করা হয়।এ ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার (৩০ জলাই) রাজধানীর বিমানবন্দর সড়ক (হোটেল র‌্যাডিসনের সামনে) অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সকাল ১১টা থেকে এসব রাস্তায় অবস্থান নেন তারা। এ কারণে বনানী থেকে উত্তরা, উত্তরা থেকে বনানী ও কালশী হয়ে উত্তরা যাওয়ার সড়কগুলো অচল হয়ে পড়ে। এসব রাস্তার উভয় প্রান্তে তৈরি হয়েছে যানজট। প্রায় ছয়ঘণ্টা পর কলেজ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ, নিরাপদ সড়ক ও ঘাতক চালকদের দ্রুত বিচার ও ফাঁসির দাবিতে গাড়ি ভাঙচুর করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

অপরদিকে, উত্তরার জসীম উদ্দীন রোডে এনা ও বুশরা পরিবহনের দুটি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে গেলেও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের বাধা দেয়।মঙ্গলবার (৩১ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৩টায় উত্তরা হাউস বিল্ডিংয়ে বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাঁচটি বাস এবং একটি পিকআপ ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।এর আগে দুপুর ১২টা থেকে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। প্রায় কয়েকশ শিক্ষার্থীর সড়ক অবরোধের কারণে শাপলা চত্বরে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষোভ স্লোগানের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা একটি বাস ভাঙচুর করে।দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সাইন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে সিটি কলেজ এবং ধানমন্ডি আইডিয়ালসহ বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে মিরপুর রোড, নীলক্ষেত এবং শাহবাগ থেকে সাইন্সল্যাব এলাকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের অবরোধ ভেদ করে একটি বাস সাইন্সল্যাব মোড়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন বলেন, সাইন্সল্যাবে হিমাচল পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। ধানমন্ডি থানা থেকে ফোন পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।সকাল থেকে রাজধানীর ফার্মগেটের সড়কে অবরোধ করেন সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা।ফার্মগেট ওভারব্রিজের নিচে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা কারওয়ান বাজার থেকে বিজয় সরণির দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ ছিল। বেলা সাড়ে ১১টায় মিরপুর-১ নম্বর সড়কে অবস্থান নেন ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা দুটি বাসে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর চালান।এ ছাড়াও মিরপুর-১০ নম্বর চত্বরে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন।

দুপুর ১টা থেকে উত্তরার কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা উত্তরার জসীম উদ্দীন মোড়ে অবরোধ করে। এ সময় পুলিশ ও র‌্যাবের সঙ্গে তাদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অবরোধের ফলে উত্তরা-বিমানবন্দর সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকেল সাড়ে ৩টায় জসীম উদ্দীন রোড়ে উত্তরা ইউনির্ভাসিটি, মাইলস্টোন কলেজ, স্কলাসটির্কসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে এনা ও বুশরা পরিবহনের দুটি বাসে আগুন দেয়।ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রাসেল সিকদার জানান, জসীম উদ্দীন রোডে এনা ও বুশরা পরিবহনের দুটি বাসে শিক্ষার্থীদের আগুন দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়াসর সার্ভিসের দুটি টিম গেলেও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাদের বাধা দেয়।উল্লেখ্য, বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় রোববার দুপুর থেকেই উত্তাল ঢাকা শহর। সোমবার ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধের পর মঙ্গলবারও রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক নিজেদের দখলে নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।ওই ঘটনায় জাবালে নূরের তিন গাড়ির দুই চালক ও দুই হেলপারকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১।