কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার অফিসটি বর্তমান দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সরকারি কোন ধরণের নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করেই চলছে এর কার্যক্রম। দলিল লেখক সমিতির অন্তরালে চলছে লাখ লাখ টাকা উপার্জনের মহোৎসব। প্রতিষ্ঠানটিতে ক্রেতা-বিক্রেতারা জমি রেজিস্ট্রারী করতে এসে সরকারি ফি বাদে গুণতে হচ্ছে আরও ৪/৫ গুণ অর্থ। কোন ধরনের নিয়ম-নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে যেভাবে পারছে দলিল লেখকরা সমিতির নামে ইচ্ছেমত ফি আদায় করছে। মনে হচ্ছে যেন এসব দেখার কেউ নেই।

সরেজমিনে ৩১জুলাই মঙ্গলবার গিয়ে জানা যায়, সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে মাস্টার রোলের কর্মচারী রামকৃষ্ণ সরকার (৫৫) দলিল প্রতি টিপ বাবদ ৫০/৮০ টাকা উত্তোলন করছে। তার কাছে এই অর্থ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আজ নতুন কিছু না, আমি ২০ বছর ধরে এই অফিসে এটি আদায় করে আসছি। উপজেলা পরিষদের মসজিদের নামে দলিল প্রতি ২০ টাকা দেয়া হয় এবং বাকি অর্থ আমি রাখি। অপর দিকে দেখা যায়, দলিল লেখক সমিতির সহসভাপতি মাহমুদ মোল্লার নিকট হলফ নামা সরকারি ফি ২০০ টাকা হলেও প্রতিটি হলফ নামা ১০০০ টাকা করে গ্রহণ করছে, পাশাপাশি রেজিস্ট্রারীর পূর্বে তার নিকট কাউন্টার ফি বাবদ সর্বনিম্ন ৪৫০০ টাকা হতে দলিলের টাকার শ্রেণিভেদে ৭০০০ টাকা পর্যন্ত জমা প্রদান পূর্বক রেজিস্ট্রারী করতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এদিকে ক্রেতারা পূর্বের রেজিস্ট্রারীকৃত মুল দলিল উত্তোলন শ্রেণিভেদে সরকারি ফি সর্বনিম্ন ৫০ টাকা হতে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা হলেও তা নেয়া হচ্ছে ২০০০/২৫০০ টাকা পর্যন্ত। জাবেদা ফি সরকারি শ্রেণিভেদে সর্বনিম্ন ৭৫০/৮৫০ টাকা হলেও অফিসের নকল নবিশরা তা আদায় করছে ১৫৫০ টাকা।
৩১ জুলাই মঙ্গলবার বিকেলে লালমনিরহাট সদরের পঞ্চগ্রাম ইউপির বাসিন্দা আব্দুল মজিদ (৬০) ২০১০ সনে রেজিস্ট্রারীকৃত জমির মুল দলিল নিতে রাজারহাটের জনৈক ডিড রাইটারের নিকট আসলে তিনি দলিল উত্তোলন পূর্বক ২৫০০ টাকা দাবী করলে তার নিকট ওই অর্থ না থাকায় দলিল উত্তোলন না করে বাড়ি ফিরে যেতে দেখা গেছে। এসব বিষয়ে রাজারহাট সাব-রেজিস্ট্রার (অতিঃ দাঃ) মো. আরিফুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব অনিয়মের বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। পরদিন তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে বসার কথা জানিয়ে পাশ কাটিয়ে যান। গত ১ আগষ্ট বুধবার কুড়িগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার (ডি আর ও) মো. আনোয়ার হোসেন মিয়ার ০১৭১১-৯৭৪২৫১ নম্বরের মুঠোফোনে এসব অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোনে তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, কোন বিষয়ে জানতে হলে সরাসরি আসেন। রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহ: রাশেদুল হক প্রধানের নিকট এ বিষয়ে কথা হলে তিনি জানান, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসটি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ হওয়ায় সরাসরি আমি হস্তক্ষেপ করতে পারছি না। লিখিত অভিযোগ পেলে এডিসি (রাজস্ব) মহোদয় বরাবর রিপোর্ট প্রদান করবো। তিনি আরও জানান, বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার রাজারহাটে দায়িত্ব পাওয়ার ৩ মাস অতিবাহিত হলেও এ পর্যন্ত আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত পর্যন্ত করেননি। রাজারহাট দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, হলফ নামার সরকারি ফি বাদে উদ্বৃত্ত অর্থ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের কাজে চাঁদা হিসাবে দিয়ে আসছি, ওদিকে কাউন্টার ফির অর্থ প্রতি মাসে সমিতির ৬৫ জন সদস্যের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়ে থাকে। রাজারহাট সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে ৪০০/৪৫০টি দলিল রেজিস্ট্রারী হয়ে থাকে। শুধুমাত্র প্রতি মাসে হলফ নামায় সরকারি ফি বাদে দলিল লেখক সমিতি ৪ হতে সাড়ে ৪ লাখ টাকা ক্রেতাদের নিকট হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া দলিল লেখক সমিতি কাউন্টার ফি বাবদ প্রতি মাসে কমপক্ষে ২০ হতে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। দলিল লেখক সমিতির জনৈক এক নেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি জানিয়েছেন শ্রেণি ভেদে প্রতি মাসে উদ্বৃত্ত জমাকৃত অর্থ ভাগবাটোয়ারা হয়ে থাকে। সবমিলিয়ে রাজারহাট সাব-রেজিস্ট্রার অফিসটিতে বর্তমান হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে।