ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি তাদের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।এছাড়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো ভারতে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে চায় বাংলাদেশ। বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা সংক্রান্ত মঙ্গলবার যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির পঞ্চদশ সভায় এসব প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। সিলেটের একটি হোটেলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।সভায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ভারতের বিদ্যুৎ সচিব শ্রী অজয় কুমার ভাল্লা। সভায় ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া এবং যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে দুই দেশের গঠিত টেকনিক্যাল কমিটি পরীক্ষা করে দেখবে। ওয়ার্কিং গ্র“প এবং স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায়। দুই দেশের মধ্যে তাই বিদ্যুৎ আমদানি রফতানির বিষয়ে তারা একমত। এখন টেকনিক্যাল কমিটি খতিয়ে দেখবে।

তিনি বলেন,গরমের সময় বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি থাকলেও শীতকালে অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে থাকে। বিশেষ করে সরকারিগুলো। কারণ বেসরকারিগুলো বসিয়ে রাখলে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। এসময় ভারতে বিদ্যুৎ রফতানি করতে পারে বাংলাদেশ।সভায় বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের সিডি, ট্যাক্স ভ্যাট থেকে অব্যাহতি প্রদান, রাজনৈতিক কারণে বা ভারতীয় আইন পরিবর্তনজনিত আর্থিক সমস্যা উদ্ভব হলে তা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে দুই দেশ নীতিগতভাবে একমত প্রকাশ করেছে।তবে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রের অনুমতি চাইবে ভারতের প্রতিনিধিদল।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে,প্রথমবার যখন বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করেছিল তখন বাংলাদেশকে কোনও কর দিতে হয়নি। পরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানি বৃদ্ধি করলে ভারত করারোপ করে। তখন থেকেই বাংলাদেশ এর বিরোধিতা করে আসছিল। বৈঠকে কর প্রত্যাহারের বিষয়টি উত্থাপন করা হলে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা করে কর অব্যহতির বিষয়ে একমত হন।

ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা কেন্দ্রের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে চূড়ান্ত করবে। কেন্দ্র এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেবে বলে তারা আশা প্রকাশ করে। মোহাম্মদ হোসাইন জানান, কর অব্যহতির ক্ষেত্রে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। আর ভারতে সাধারণত আমদানির ক্ষেত্রে কর অব্যহতি দেয় না। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি তারা বিবেচনা করবে বলে সভায় তারা আশ্বাস দিয়েছে।

ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি বৈঠকে আলোচনা হয়। ভারত সরকারের নীতির কারণে এতদিন বাংলাদেশ প্রতিবেশী কোনও দেশ থেকে বিদ্যুৎ আনার ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগ সফল হচ্ছিল না। এ নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতকে নীতি পরিবর্তন করার আহ্বান জানিয়ে আসছিল। আজকের বৈঠকে বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হলে ভারতের প্রতিনিধিরা জানায়, এ সংক্রান্ত আগের নীতিটি পরিবর্তন করা হচ্ছে। নতুন নীতিতে দ্বিপক্ষীয় নীতি পরিবর্তন করে ত্রিপক্ষীয় বা বহুপাক্ষিক নীতি করছে তারা। এ সংক্রান্ত নীতির খসড়া করা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করেই নীতিটি চূড়ান্ত করা হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে। খসড়াটি বাংলাদেশের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় সভায়।

এছাড়া সভায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে বিরাজমান বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় ভেড়ামারা ও ত্রিপুরা ইন্টারকানেকশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ আমদানির বর্তমান অবস্থা, ভেড়ামারা ইন্টারকানেকশনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির অগ্রগতি, এইচভিডিসি দ্বিতীয় ব্লক নির্মাণের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদু্যুৎ আমদানি, সূর্যমনি-কুমিল্ললা নর্থ লিংকের মাধ্যমে জি টু জি-এর আওতায় এনটিপিসি’র বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে আরও ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি, প্রস্তাবিত কাটিহার-পার্বতীপুর-বড়পুকুরিয়া-বরানগর ৭৬৫ কেভি গ্রিড ইন্টারকানেকশন, বহরমপুর-ভেড়ামারা ৪০০ কেভি দ্বিতীয় ট্রান্সমিশন লাইন ও সূর্যমনি-কুমিল্লা নর্থ লিংকের মাধ্যমে আরও বিদ্যুৎ আমদানির জন্য কুমিল্লায় ব্যাক টু ব্যাক এইচভিডিসি সাব- স্টেশন নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়। পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) সাইফুল হাসান চৌধুরী বলেন, স্টিয়ারিং কমিটির সভায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ভারতীয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে অংশগ্রহণ, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে ভারতে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ও বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের ভারতের বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে অংশগ্রহণের বিষয় পর্যালোচনা ছাড়াও জিএমআর কর্তৃক নেপালে উৎপাদিত জল বিদ্যুৎ ভারতের এনভিভিএনএর মাধ্যমে বাংলাদেশে আমদানি, ভুটানের হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্টে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের যৌথ বিনিয়োগ ও এই প্রজেক্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আমদানিসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হয়।এছাড়া সভায় রামপালে বাস্তবায়নাধীন মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি বিষয়ে ও আলোচনা হয়। সভায় এ প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ ও বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।