অবশেষে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে জমিসহ বাড়িঘর হারা ১৩০ পরিবার পেল তাঁদের স্বপ্নের ঠিকানা। এ পুনর্বাসন পল্লীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। শনিবার দুপুরে তিনি এ পল্লীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে এক সুধী সমাবেশে ১৭ মিনিট ভাষন দেন। এর আগে তিনি স্বপ্নের ঠিকানা পল্লীর পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। পল্লীতে একটি নারিকেল চারা রোপন করেন। ঘুরে দেখেন পুনর্বাসিত আবুল কালাম মাস্টার ও মাহফুজা বেগমের দুইটি ঘর। ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন। সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এশিয়া মহাদেশের এটি একটি নিদর্শন এই পুনর্বাসন পল্লী স্বপ্নের ঠিকানা। সরকারের হঠাৎ কোন উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে প্রকল্প চালুর আগেই পুনর্বাসন করা হলো। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া-মধুপাড়া মৌজায় নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড এর যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কাজে ২০১৬ সালে ১০০২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ফলে বসতভিটা হারায় ১৩০টি পরিবার। যাদেরকে আজ আধুনিক সুবিধা সংবলিত পল্লী স্বপ্নের ঠিকানার চাবি বুঝিয়ে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের ঠিকানা ছাড়াও পায়রা বন্দর এলাকার প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ পায়রা বন্দর শেখ হাসিনা ফোর লেন সড়ক, পায়রা সমুদ্র বন্দর মসজিদ, পায়রা বন্দরের মাল্টি পারপাস ভবন, অফিসার্স গেস্ট হাউস, পায়রা বন্দরের স্টাফ ডরমেটরি ভবন, কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজ, মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ ও আলহাজ জালাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের তিনটি ৪তলা নব-নির্মিত একাডেমিক ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

উদ্বোধন করেন পায়রা বন্দর প্রকল্প এলাকার সার্ভিস জেটির। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, সমুদ্র বন্দরের মূল চ্যানেল রাবনাবাদ পাড়ের চারিপাড়ায় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় ৬৫০ মিটার দীর্ঘ টার্মিনাল নির্মাণ কাজের। যেখানে সরাসরি মাদার ভেসেল পণ্য খালাশের সুযোগ পাবে। ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন দুটি কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ কাজের। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী পায়রা সমুদ্র বন্দরের ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের লালুয়া, চান্দুপাড়া (উত্তর), চান্দুপাড়া (দক্ষিণ), লেমুপাড়া, ধুলাসার ও লোন্দা মৌজায় জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ছয়টি পুনর্ব্াসন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এই অঞ্চলের মোট ২১ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মাহবুবুর রহমান এমপি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়ন করতে গিয়ে কোন মানুষের জীবন মানের যেন ক্ষতি না হয় তার ব্যবস্থা করেছি। আবেগপ্রবণ হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন। তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল দেশের প্রতিটি মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, খাদ্যনিরাপত্তা যেন পায়। প্রত্যেকের উন্নত জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের বাস্তবায়নে তিনি ও তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণাঞ্চল ছিল সবচেয়ে অবহেলিত। এই জনপদের যোগাযোগের উন্নয়নে যত সেতু তা আমরা করেছি। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করব ইনশাআল্লাহ। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল, প্রায় দশ বছরে বাংলাদেশকে বিশে^র কাছে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করা হয়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন চার গুন বাড়ানো হয়েছে। কোন লোডশেডিং নেই। বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পুর্ণ বাংলাদেশ গড়তে এই এলাকায় আরও একাধিক বিদ্যুত প্লান্ট করার উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান। এসময় পায়রা পোর্টের সামগ্রিক চিত্র ভিডিও দৃশ্য উপস্থাপন করেন পায়রা বন্দর কতৃপক্ষ।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০২১ সালে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে পুর্ণাঙ্গভাবে চালু করা হবে। টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ হলে ১০ মিটার নাব্যতার মাদার ভেসেল সরাসরি পন্যখালাশ করতে পারবে। ২০২৫ সালে বিশে^র মধ্যে একটি আধুনিক সমুদ্র বন্দরে পরিণত হবে পায়রা সমুদ্র বন্দর। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতার এক পর্যায়ে বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন করেছেন। মন্ত্রী বানিয়েছেন। যে কারনে দেশ পিছিয়ে গেছে। সেই দেশকে আমরা উন্নত দেশে পরিণত করতে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আগামি ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করার আশা করছি। পাশাপাশি ২০২০ সালে জাতির জনকের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের আশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মানে তার সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। নির্মাণ করা হবে গভীর সমুদ্র বন্দর। এজন্য সরকারের ধারাবাহিকতা থাকতে হবে বলে সকলকে সজাগ থাকার পরামর্শ দেন। এসময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ এমপি, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান এমপি, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, জাতীয় সংসদের চীফ হুইফ আসম ফিরোজ এমপি, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত ও জ¦ালানি উপদেষ্টা ডঃ তৌফিক এলাহি চৌধুরী বীর বিক্রম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, এমপি, সচিবসহ বিভাগীয় ও জেলা উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ ছয় শতাধিক সুধী অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে এক এক করে স্বপ্নের ঠিকানাবাসীর কাছে স্বপ্নের চাবি হস্তান্তর করেন।পরে তিনি তালতলীর জনসভায় অংশগ্রহণের জন্য কলাপাড়া ত্যাগ করেন।