ড. কামাল হোসেন সংবিধান প্রণেতা কমিটির চেয়ারম্যান হয়েও নিজেই সংবিধান মানেন না বলে অভিযোগ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।রোববার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে রোববার সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নতুন যোগ দেয়া বিচারকদের ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।মন্ত্রী বলেন, সরকার সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন করবে- এর কোনো ব্যত্যয় হবে না।

মন্ত্রী পরিষদের অনুমোদন ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন সম্ভব নয় –এ কথা জানিয়েমন্ত্রী আরো বলেন, এই মুহূর্তে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের কোনো সম্ভাবনা নেই।অনুষ্ঠান শেষে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশটি চলমান সংসদ অধিবেশনে সংশোধন করা হবে কি না সে বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।সরকার সংবিধান লংঘন করছে ড. কামালের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী বলেন, সরকার নয় সংবিধান প্রণেতা হয়ে তিনি নিজেই সংবিধান লংঘন করেছেন।তিনি জানান, মইনুল হোসেনের বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করবে না উল্লেখ করে এই মুহূর্তে এ আইন সংশোধনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জানান আইনমন্ত্রী। আইনমন্ত্রী আরো বলেন, আমি বিজ্ঞ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনকে এ ধরনের বক্তব্যের জবাব দিতে পারতাম, কিন্তু আমার বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার অভ্যাস নাই। সেজন্য আমি তা করিনি। কিন্তু আমি অত্যন্ত সবিনয়ে বলব যে, আমরা সংবিধান লঙ্ঘন করি না। বরঞ্চ ড. কামাল হোসেন যে কনস্টিটিউশন ড্রাফটিং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন, তারা যে সংবিধান দিয়ে গেছেন তার অনেক কিছুই আজ ড. কামাল হোসেন অস্বীকার করছেন।

ব্যারিস্টার মইনুলের জামিন নিয়ে ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে। আমি বাধ্য হচ্ছি আজকে আইনটাকে পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য। সেটা হচ্ছে এই, যদি অন্য জেলায় মামলা থাকে। তার মানে হচ্ছে মামলাটি অন্য টেরিটরিয়াল জুরিশডিকশনে। সেই জেলা থেকে যদি অন্য জেলায় কোনো আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়, তাহলে যে জেলায় তাকে হাজির করা হয়েছে সেই জেলার বিজ্ঞ বিচারকের কিন্তু তার মামলাটা শোনার অধিকার নাই।তার কারণ হচ্ছে, যে তার কাছে মামলার নথিটা নাই। সেই কারণে তিনি দু’টো কাজ করতে পারেন। একটা হচ্ছে- তিনি আসামিকে যেই কোর্টে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, সেখানে পাঠিয়ে দিতে পারেন অথবা তিনি বলতে পারেন মামলার নথি (ফাইলটা) তার কাছে পাঠানোর জন্য। তার জন্য একটা প্রক্রিয়া আছে। কিন্তু আসামিকে সেই কোর্টে পাঠানোটাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে এখানে বিজ্ঞ বিচারক তার বিচারিক অধিক্ষেত্র এবং অভিজ্ঞতা এবং ন্যায় বিচারের স্বার্থে যেই পদক্ষেপ নিয়েছেন সেইটা আইনসঙ্গত পদক্ষেপ বলে আমার কাছে মনে হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, এটাও পরিষ্কার, দেখেন- বিচার বিভাগ কিন্তু স্বাধীন। যে যাই বলুক না কেন বিচার বিভাগ স্বাধীন। আমি প্রসিকিউশনকে আমার নির্দেশনা দিতে পারি। নির্দেশনাটা সব সময়ই আইনানুগ হতে হবে। প্রসিকিউশনের আইনজীবীরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আইনে যা আছে সে অনুযায়ী কিন্তু কাজ করবে। এক্ষেত্রে তার কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, সড়ক পরিবহন আইন যেটা আছে আমার মনে হয় সেটা সড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য সহায়ক হবে এবং চালকরা যদি সঠিকভাবে গাড়ি চালায় তাহলে তাদের জন্য সহায়ক হবে। এসময় চালকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আইনটা সঠিকভাবে না বুঝেই হয়তো তারা ধর্মঘট করেছেন। আইনে এমন কোনো প্রভিশন নেই যে, তারা অন্যায় না করা সত্বেও তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে। আমি তাদের আহ্বান জানাব যেন, যেন তারা এ আন্দোলনের পথ পরিহার করে।