ফেনী-১ (ছাগলনাইয়া-ফুলগাজী-পরশুরাম) আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার। নৌকা প্রতীকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তিনি। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আপেল প্রতীকে নির্বাচন করছেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ঢাকাস্থ ফেনী সমিতির সভাপতি শেখ আবদুল্লাহ। অভিযোগ উঠেছে, মহাজোট প্রার্থী শিরীন আখতারের পক্ষে কাজ করছেন না এ আসনের তিন উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহর পক্ষে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।নির্বাচনের কয়েকদিন বাকি থাকলেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শিরীন আখতারের পক্ষে প্রচারের জন্য এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ভাবে কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি। এজেন্টের বিষয়েও কারও সঙ্গে আলাপ করা হচ্ছে না। মহাজোট প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভোট চাইতেও দেখা যাচ্ছে না।গত ১৩ ডিসেম্বর ছাগলনাইয়া শহীদ মিনার থেকে শিরীন আখতারের পক্ষে মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। এতে আওয়ামী লীগের কয়েকশ’ নেতাকর্মী অংশ নেন। এ ছাড়া অংশ নেন জাসদের হাজার খানেক কর্মী-সমর্থক। এর পরদিন থেকেই তিন উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহর পক্ষে প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ ও ভোটের প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। এ নিয়ে শিরীন আখতার আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করতে চাইলেও তারা সাড়া দেননি। এ পরিস্থিতিতে শিরীন আখতার গত তিন দিন ঢাকায় অবস্থান করেও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে ফেনীতে কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি।এদিকে গতকাল শুক্রবার সকালে ফেনী-১ আসন নিয়ে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ফেনী সদরে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান বি.কম, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ ১৬টি ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও তিন উপজেলার চেয়ারম্যান এবং ১৫টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিশদ আলোচনার পর নেতাকর্মীরা বিগত সময়ে ফেনী-১ আসনের বর্তমান এমপি ও মহাজোট প্রার্থী শিরীন আখতারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্বের বিষয়টি তুলে ধরে নেতিবাচক মতামত দেন। এক পর্যায়ে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের আপত্তির কারণে নীতিনির্ধারকরা স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহর পক্ষে আপেল প্রতীকে কাজ করার সিদ্ধান্ত দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলীম বলেন, আপেলের পক্ষে ভোট করার নীতিগত সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাদলের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলও কোনো মন্তব্য করেন নি।ছাগলনাইয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মো. মোস্তফা জানান, ফেনীতে বৈঠকে স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহর আপেল মার্কার পক্ষে ভোট করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, বৈঠকে তিনিসহ নেতাকর্মীরা জানান, শিরীন আখতার তিন হাজার ভোটও পাবেন না। কেউ তাকে মেনে নেয়নি। এ অবস্থায় নৌকার এ আসনটি হারানোর আশঙ্কায় শেখ আবদুল্লাহকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন।

ছাগলনাইয়া পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ওমর ফারুকও একই মন্তব্য করেন।এ ব্যাপারে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহমানকে ফোন করা হলেও তিনি কথা বলেননি। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার নাসিম চৌধুরীও ফোনের সংযোগ কেটে দেন।স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহ বলেন, শিরীন আখতার এলাকায় জনবিচ্ছিন্ন। আওয়ামী লীগের কোনো স্তরের নেতাকর্মী তার সঙ্গে না থাকায় তিনি একা হয়ে গেছেন। শেখ আবদুল্লাহ আরও বলেন, সবাই তাকে সমর্থন দিয়েছেন। শিরীন আখতারও শনিবার (আজ) সংবাদ সম্মেলন করে তাকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেবেন।শেখ আবদুল্লাহর এ বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে শিরীন আখতার বলেন, ডাহা মিথ্যা বলছেন শেখ আবদুল্লাহ। তিনি (শিরীন) আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী। সরে যাওয়ার বা কাউকে সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কেউ থাকুক, না থাকুক; তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট করবেন।