মহামারী করোনা ভাইরাসের সঙ্গে লড়ছে সারাবিশ্ব। জীবন বাঁচাতে মরিয়া সবাই। মহাশক্তিধর দেশগুলোয় চলছে লকডাউন। তবে বাসায় থেকে যেসব প্রতিষ্ঠানের কাজ অব্যাহত রাখা যায়, তারা বাসায় বসে কাজ করার সুযোগ দিয়েছে। ঠিক সেই সময় ১০৮ জনের চাকরিচ্যুত করেছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান শিওর ক্যাশ। অবশ্য এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে। করোনার প্রভাব মোকাবিলায় সারাদেশে যখন সাধারণ ছুটি চলছে, তখন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে (হোম কোয়ারেন্টিন) বাসায় থেকে কাজ করার নির্দেশনা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। পরে তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়।

কোম্পানির প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা শামীমা আহসান প্রথমে নোটিশ দেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে বাসায় থেকে অফিসের কাজ করার। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়ায় ৯ এপ্রিল পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকর থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি আরেকটি নোটিশে ১০৮ জনের চাকরিচ্যুত করার কথা জানান। তাদের বলা হয়েছে অফিস আইডি কার্ড, মোবাইল ফোন, সিমকার্ড, ল্যাপটপ, ব্যাগ জমা দিয়ে আর্থিক পাওনা বুঝে নিতে। ফলে মহামারী করোনার মধ্যে মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়েছে চাকরিচ্যুতদের।

চাকরিচ্যুত একজন জানান, আমাদের আয়ের একমাত্র পথ এই চাকরি। কোনো ধরনের অপরাধ না করেও অযৌক্তিকভাবে আমাদের চাকরি খাওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমাদের মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শুরু হবে মানবেতর জীবনযাপন। চাকরিচ্যুত আরেকজন জানান, প্রধানমন্ত্রী যখন ঘোষণা দিয়েছেন প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে সবাই উপকৃত হবেন, তখন শিওর ক্যাশ আমাদের চাকরিচ্যুত করা অপরাধের শামিল। অবিলম্বে আমাদের চাকরি ফিরিয়ে না দিলে আমরা করোনা ভাইরাসের ছুটির পর আন্দোলনে যাব। যেখানে বিকাশ, নগদ, রকেটের মতো কোম্পানিগুলো দেশের তৈরি পোশাক খাতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতনভাতা দিয়ে যাচ্ছে। কর্মীদের বাসায় থেকে অফিস করার সুযোগ দিয়েছে; সেখানে শিওর ক্যাশ উল্টো কর্মীদের চাকরিচ্যুত করেছে।

এটি অমানবিক বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, এভাবে চাকরিচ্যুত করা যায় না। চাকরিচ্যুতদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এ বিষয়ে শিওর ক্যাশের হেড অব মার্কেটিং কমিউনিকেশন মাশরুর হাসান মীম বলেন, দেশে আমাদের দুই কোটি গ্রাহকের সেবার মান বাড়াতে এবং প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকার জন্য আমাদের বিক্রয় বিভাগটির কিছু অবকাঠামোগত পরিবর্তন এনেছি। ফলে কিছু পদ বিলোপ করতে হয়েছে। ১০৮ কর্মী চাকরি হারিয়েছে। এটি দুর্ভাগ্যজনক যে এই দুঃসময়ে এটি ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, গত ছয়-সাত মাস ধরে আমরা শিওর ক্যাশের সামগ্রিক দক্ষতা বাড়াতে কাজ করছি। এর অংশ হিসেবে কোম্পানির নেতৃত্ব পর্যায়সহ বিভিন্ন বিভাগে বেশ কিছু লোকবল বাড়ানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। ফলে আগামীতে অভিজ্ঞ নেতৃত্ব ও লাগসই প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নত ও কার্যকর আর্থিক সেবা দিতে পারব।