কক্সবাজারের সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা দীর্ঘ ১১ মাস ৫ দিন পর জামিনে কারামুক্ত হলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে মুক্ত হন। এ সময় স্ত্রী হাসিনা আকতার, বোন ফাতেমা আকতার বেবি, সালমা আকতার, মেয়ে সোমাইয়া মোস্তফা, ছেলে শাহেদ মোস্তফা, সাজেদুল মোস্তফাসহ স্বজনেরা ফরিদকে বরণ করে নেন। ফরিদ মুক্তি পাচ্ছেন এমন খবরে বিকাল থেকে কারাগারের আশে পাশে জড়ো হন সহকর্মীরা। ফরিদুল মোস্তফার কারামুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন। এর আগে দুপুরে টেকনাফ থানায় দায়ের হওয়া মামলার শুনানি শেষে পরবর্তী ধার্য তারিখ পর্যন্ত ফরিদকে জামিন দেন যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতের বিচারক মাহমুদুল হাসান।
মামলার শুনানীতে অংশগ্রহণ করেন কক্সবাজার জেলা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী, সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুল মন্নান ও এডভোকেট রেজাউল করিম রেজা। মামলার বাদি ছিলেন টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা আবুুুল কালাম আজাদ। ঢাকার বাসা থেকে ধরে এনে সাজানো অস্ত্র, বিদেশি মদ ও ইয়াবার মামলা থেকে বুধবার তাকে জামিন দেন কক্সবাজার জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল।
মেজর (অব.) সিনহার হত্যা মামলার আসামী টেকনাফের বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ সর্বশেষ তিনটি মামলার তাকে আসামি বানিয়েছিলেন।
ফরিদুল মোস্তফা খানের পক্ষে নিযুক্ত প্রধান আইনজীবী মোহাম্মদ আবদুল মন্নান বলেন, পুলিশের সাজানো মামলা দু’টির শুনানি শেষে বুধবার তাকে জামিন দেন বিচারক। এই মামলা দুইটি ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টের ফরিদুল মোস্তফার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দায়ের করেছিল পুলিশ। এর আগে গত ১ মার্চ তাকে আরেক মামলায় জামিন প্রদান করেন একই আদালত।
তিনি আরো জানান, টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপের দালাল মৌলভী মুফিজ ও জহিরের গায়েবি চাঁদাবাজির মামলা থেকে গত ১৩ আগস্ট জামিন প্রদান করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রাজজ মোহাম্মদ ইসমাইল। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর টেকনাফ থানায় দায়েরকৃত মামলা থেকে ১৯ আগস্ট জামিন প্রদান করেন টেকনাফের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ। এ নিয়ে ফরিদুল মোস্তফার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ৬টি মামলারই জামিন হলো।
২০১৯ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুরের বাসা থেকে সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ার বাড়িতে তাকেসহ নিয়ে গিয়ে কথিত অভিযান চালানো হয়। ওই সময় গুলিসহ ২টি অস্ত্র, ৪ হাজার ইয়াবা ও বিপুল বিদেশী মদের বোতল উদ্ধার হয় বলে পুলিশ দাবী করে। যদিও পরিবারের দাবী, এসব নাটক। সম্পূর্ণ সাজানো।
গত বছরের ৩০ জুন ফরিদুল মোস্তফা খানের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় চাঁদাবাজি মামলা রুজু হয়। এরপর তাকে পুলিশ হন্য হয়ে খোঁজতে থাকে। আত্মরক্ষায় ঢাকায় আত্মগোপনে চলে যান ফরিদুল মোস্তফা।
সাংবাদিক ফরিদের পরিবারের দাবি, টেকনাফ থানা ও কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের একটি বিশেষ টিম মিরপুর থানার পুলিশের সহায়তায় ‘ওয়ারেন্ট’ দেখিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। আইন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারাগারে না পাঠিয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়।
