লালমনিরহাট সদর উপজেলায় পাটক্ষেত থেকে জেলেখা বেগমের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় করা হত্যা মামলার রহস্য ৪৮ ঘন্টার মধ্যে উদঘাটন করেছে পুলিশ। পরকীয়া প্রেমের বলি হয় জুলেখা। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সকল আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে।

লালমনিরহাট সদর থানার গোকুন্ডা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের রতিপুর বসুনিয়া পাড়ায় মৃত মোফাজ্জল হোসেন মোফার ছেলে জনৈক মমিনুল ইসলাম (৩৫) এর পাটক্ষেত থেকে পড়নের বোরখা দিয়ে মুখমণ্ডল পেচানো এবং কপালে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন অবস্থায় গত ২৪শে জুন বিকাল ৩টার দিকে পুলিশ জেলেখা ওরফে জেলে (২৪) নামের একজন গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। ঐদিন রাতে মৃত জেলেখার মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।

এ ঘটনায় পুলিশ, সদর উপজেলার মন্ডল পাড়ার রতিনপুর গ্রামের শ্রী দীনেশচন্দ্র বর্মনের ছেলে শ্রী বিধান চন্দ্র (২৬) (পরকীয়া প্রেমিক) ও তিস্তার পাঙ্গাটারী এলাকার শ্রী সুদর্শন বর্মনের ছেলে সুকুমার চন্দ্র বর্মন ওরফে হরতাল (২১)কে গ্রেফতার করে। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা জেলেখাকে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে।

পুলিশ সুত্রে জানা যায়, প্রথম স্বামীর সহিত জেলেখার তালাক হলে ১৩/০৫/২০২১ তারিখে কুড়িগ্রাম জেলার মনজু নামক ব্যক্তির সাথে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। দ্বিতীয় বিয়ের পর জেলেখা জানতে পারে তার দ্বিতীয় স্বামী এর আগে আরও ৫টি বিয়ে করেছিল এবং সে ৬ষ্ঠ স্ত্রী। এ কারণে দ্বিতীয় স্বামীর সাথে ঘর সংসার না করে তার মায়ের বাড়িতে এসে বসবাস করতে থাকে।

এদিকে আসামিদের পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। মোবাইল ফোনে আসামী বিধান চন্দ্র রায়ের সহিত জেলেখার পরিচয়ের সুবাদে তাদের মধ্যে পরকীয়া প্রেমের কথাবার্তা চলতে থাকে। উক্ত আসামী বিধান চন্দ্র ও জেলেখার বাড়ি একই ইউনিয়নে পাশাপাশি গ্রামে।

সেই সুবাধে বিধানের স্ত্রী বাড়ীতে না থাকার সুযোগে গত ২১/০৬/২০২১ তারিখ রাত অনুমান সাড়ে ৯ টার দিকে জেলেখা তার বাড়ীতে আসে এবং রাত যাপন করে ভোরে চলে যায়। পরের দিন ২২শে জুন রাত ১০ টার দিকে জেলেখা সবার অজান্তে আবারো আসামী বিধানের বাড়ীতে এসে তার শয়ন ঘরে অবস্থান করে।এরপর ঐ দিন ভোরে জেলেখা আসামী বিধানকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে এবং তাহাকে বিয়ে করে ঢাকায় নিয়ে যাবে কিনা জানতে চায়।

এসময় আসামী বিধান পূর্বের ন্যায় তাহাকে বুঝানোর চেষ্টা করলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে জেলেখা আশপাশের লোকজনদেরকে ডাকাডাকি করার চেষ্টা করলে, সকাল অনুমান ৬ টার সময় আসামী বিধান তার ঘরে থাকা কাঠের ফালা দিয়ে জেলেখার মাথার পিছন দিকে আঘাত করে। এতে সে মাটিতে পড়ে গেলে আসামী বিধান তার ঘরে থাকা দাঁ এর ধারালো মাথা দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তার কপালে কোপ মারে এবং দাঁ এর পিঠ দিয়ে গলায় চেপে ধরে জেলেখাকে হত্যা করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

পরে তাহার লাশ খাটের নিচে রেখে আসামী বিধান চন্দ্র সকাল ৯ টার দিকে কাঠমিস্ত্রির কাজে যায়। কাজ শেষে তার কর্মচারী গ্রেফতারকৃত ২নং আসামী শ্রী সুকুমার চন্দ্র বর্মন ওরফে হরতাল (২১) কে নিয়ে তার বাড়ীতে আসে। অতপর তারা দুজনে মিলে জেলেখার লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে পরদিন ২৩/০৬/২১ তারিখে রাত অনুমান সাড়ে ১১ টার দিকে পার্শ্ববর্তী পাটক্ষেতে ফেলে আসে।

গ্রেফতারকৃত আসামী বিধান চন্দ্র রায়ের দেখানো ও সনাক্ত মতে, তাহার বসত বাড়ী হতে হত্যা কাজে ব্যবহৃত একটি লোহার তৈরী ধারালো দাঁ ও একটি কাঠের ফালা, মৃতার জুলেখার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, স্যান্ডেলসহ মামলার সংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার করা হয়। আসামীরা স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করিলে, বিজ্ঞ আদালত ২৭/০৬/২০২১ তারিখ, ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারামতে আসামীদ্বয়ের স্বীকারোক্তি মূলক’ জবানবন্দি রেকর্ড করেন।