জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অধিবেশন শুরু হয়। করোনার কারণে এবারো মানা হবে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি। সবাই নিরাপদ দূরত্ব মেনে নিজ নিজ আসনে বসেছেন।করোনাকালের অন্যান্যবারের মতো এবারো তরুণদের সংসদে যাওয়ার জন্য উৎসাহীত করা হয়েছে। আর যেসব এমপি সংসদে যোগ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেককে করোনা টেস্ট করতে হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও এর বাইরে ছিলেন না। সবাইকে করোনা নেগেটিভ সনদ দেখিয়ে সংসদে ঢুকতে হয়েছে। অধিবেশন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকলেও বরাবরের মতো বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ অনুপস্থিত রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ থাকায় সংসদে যেতে পারছেন না।

অধিবেশনের শুরুতেই সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন দেওয়া হয়। তারা স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সংসদের বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। এরপর ১৩তম সংসদ অধিবেশন শুরুর পর যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তি মারা গেছেন তারা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব আনা হয়। চলতি সংসদের সংসদ সদস্য হওয়ায় আলী আশরাফকে নিয়ে সংসদে আলোচনা শুরু হয়েছে।

এরপর শোকপ্রস্তাব গ্রহণ শেষে মরহুমের বিদেহী আত্মার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করবেন উপস্থিত এমপিরা। মোনাজাত করা হবে মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে। পরে সংসদের রীতি অনুযায়ী অধিবেশন কিছুক্ষণ মুলতবি করা হবে।

সংসদের সচিব কে এম আব্দুস সালাম জানান, এরপর শুরু হবে প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও উত্তরপর্ব। প্রথম পর্বের ৩০ মিনিট প্রধানমন্ত্রীর উত্তরদানের জন্য নির্ধারিত। এরপর মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও উত্তর শুরু হবে। বুধবার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের প্রশ্নোত্তর রয়েছে। তবে স্পিকার চাইলে করোনার প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হতে পারে।

এছাড়াও জরুরি জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ (বিধি-৭১), জরুরি জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ (বিধি-৭১)-এর আওতায় প্রাপ্ত নোটিশসমূহ নিষ্পত্তি বিষয়গুলো কার্যতালিকায় রয়েছে। তবে স্পিকার চাইলে প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপন করতে পারেন। আর জরুরি জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণের বিষয়টি স্থগিত করতে পারেন।

এরপর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council (Amendment) Ordinance, 2021’ অধ্যাদেশটি সংসদে উপস্থাপন করবেন।

করোনার কারণে এবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদের বৈঠক বসবে। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় বসবে অধিবেশন। এছাড়াও ২ ও ৪ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় সংসদ অধিবেশন বসবে। করোনার কারণে তাড়াতাড়ি অধিবেশন শেষ করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এবারও সংসদে প্রবেশের অনুমতি পাচ্ছেন না সাংবাদিকরা। সংসদের একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

সংসদের যুগ্মসচিব মো. তারিক মাহমুদ জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে অধিবেশনের সময় সাংবাদিকদের পাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। জনস্বার্থে অধিবেশনের সব কার্যক্রম সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার হবে। সংসদ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনা পরীক্ষা করে সংসদ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অধিবেশনে যেতে হয়। অধিবেশনের কার্যদিবসের মধ্যে বিরতি রাখলে কেউ সংক্রমিত হতে পারেন। এজন্য শুক্রবারও সংসদের বৈঠক বসবে।

আসন্ন অধিবেশনটি হবে চলতি বছরের চতুর্থ অধিবেশন। গত ৩ জুলাই শেষ হয়েছিল সংসদের ১৩তম অধিবেশন, সেটি ছিল বাজেট অধিবেশন। করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত কয়েকটি অধিবেশন বসেছে। জাতীয় সংসদের এক অধিবেশন শেষ হওয়ার পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

এবারের অধিবেশনে নতুন তিনটি বিলসহ ১৫টি বিল নিষ্পত্তি হতে পারে। এর মধ্যে সংসদে উত্থাপিত বিলগুলো হলো— Bangladesh House Building Finance Corporation (Amendment) Bill 2021, ব্যাংকার বহিঃ সাক্ষ্য বিল ২০২১, বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটর ও ট্যুর গাইড (নিবন্ধন ও পরিচালন) বিল ২০২১, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বিল ২০২১, Medical Degree (Repeal) Bill 2021, Medical College (Governing bodies) Repeal Bill 2021, বাংলাদেশ জাতীয় আর্কাইভস বিল ২০২১, জাতীয় শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট বিল ২০২১, কুড়িগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিল ২০২১, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিল ২০২১ এবং গান্ধী আশ্রম (ট্রাস্টি বোর্ড) বিল ২০২১।

আর সংসদে উত্থাপনের অপেক্ষায় থাকা বিলগুলো হচ্ছে—বিরোধীদলীয় নেতা এবং উপনেতা (পারিতোষিক ও বিশেষ অধিকার) বিল ২০২১, বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (Special Security Force) বিল ২০২১, মহাসড়ক বিল ২০২১ এবং Bangladesh Legal Practitioners and Bar Council bill 2021.