টেষ্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের পরিণতি হারের বৃত্তেই আগে গেছে। দক্ষিণ আাফ্রিকা সফর থেকে শুরু করে লঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে হোম সিরিজেও ২-০ ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ। এবার ক্যারিবিয়ান দ্বীপে আরেকটি সিরিজ হারের গল্প তৈরি হতে অল্প কিছু সময় বাকী। ইনিংষ হার এড়াতে হলে এখনও বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে ৪২টি রান যোগ করতে হবে। ক্রিজে সোহান-মিরাজের ৭ম জুটি, দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৪ রানে পেছনে থাকা বাংলাদেশের স্কোর ১৩২/৬।

বাংলাদেশের টপ অর্ডার যেন ব্যাটিং করাটাই ভূলে গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা দেখিয়েছে কিভাবে ব্যাট করতে হয়। ১ম টেষ্টে কোনক্রমে ইনিংস হারের লজ্জা থেকে রেহাই পেলেও এবার হয়তো ইনিংস হারের লজ্জা থেকে রেহাই পাওয়াটা সহজ হবে না সাকিব বাহিনীর জন্য। ১ম টেষ্টের ফলাফল এসেছে সোয়া তিন দিনে, এবার হয়তো একটু বাড়তে পারে বা কমেও যেতে পারে। সোমবার সোহান-মিরাজের ৭ম জুটি ৪২ রান যোগ করতে পারলে ইনিংস হারের লজ্জা থেকে রেহাই পারে সাকিবরা। নয় তো . . . .।

চলতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে দ্বিতীয় টেষ্টে টপ হেরে আগে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ এবার ১০৩ রানের বদলে একটু এগিয়ে গিয়ে ২৩৪ রানে অলাআউট। জবাব দিতে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে ১৩২ রান করে চাপে পড়লেও ৫ম ও ৬ষ্ঠ জুটির কল্যাণে ৪০৮ রানে পৌছে যায়।

১৭৪ রানে পেছনে থেকে সোমবার মধ্য রাতে (বাংলাদেশ সময়) দ্বিতীয় বার ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। কিন্তু কে জানত ব্যাটিংয়ের এমন লজ্জাজনক দৃশ্য দেখতে হবে! ওপেনার তামিমের নামের পাশে ৪ রান যোগ হল। এবার পর তামিম পেসার কেমার রোচের বলে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন। ১ম ইনিংসে কোন উইকেট না পাওয়া কেমার রোজ এবার টাইগারদের সামনে যমদূত হয়ে হাজির হলেন। টপ অর্ডারের তিন জনকে সাঁজঘরের পথ দেখিয়ে রোচ মুলত বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের কোমড় ভেঙ্গে দেন। বাকী কাজটা সেরে দেন বোলার জোসেফ।

তামিমের পর আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়কেও রোচ ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন ব্যক্তিগত ১৩ রানে। তবে তৃতীয় ব্যাটম্যান শান্তকে আটকাতে পারলেন না রোচ। তবে শান্তর সঙ্গী ৮ বছর পর টেষ্টে ফেরা আনামুল হক বিজয়কে মাত্র ৪ রান যোগ করার পর এলবি’র ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশ দলের উপর ঝড় বইয়ে দিলেন কেমার রোচ। স্কোর তখন ৩২/৩!

মিডল অর্ডারে শান্তর সঙ্গে যোগ দেয়া লিটন টেকার চেষ্টা বিফল করে দিলেন সীল্যাস। লিটন ১৯ রানে এলবি’র ফাঁদে কাটা গেলেন। ১৭৪ রানের লিডের সীমানা পাড়ি দিতে শান্তর সঙ্গে যোগ দিলেন অধিনায়ক সাকিব, স্কোরের দিকে তাকালে মাথায় হাত দেয়া ছাড়া গতি নেই, ৫৭ রানে ৪ উইকেট!

৩২ বল খেলে সাকিব সেট হবার চেষ্টা করছেন আর শান্ত ৯১ বল খেলে ৪২ রানে সেট ব্যাটসম্যান। ৫ম উইকেটে কিছু হবে হয়তো এমনই যখন ভাবনা তখনই ৪২ রানে থাকা শান্তকে জোসেফ ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন।

কিন্তু ক্রিজে সাকিব ছিলেন, পরের দিকে নূরুল হাসান আর মিরাজও ছিলেন। তাই একটা চিন্তা ছিল হয়তো একটা জুটি গড়লেও গড়তে পারে। হতাশ করে দিয়ে ১৯ রানে থাকা সাকিব জোসেফের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসের কফিনে নিশ্চিত হারের পেরেক-টা গেঁথে দিল।

তখনও বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে ৪২ রান দূরে। টেষ্টের ৪র্থ দিনের সকালে (আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা) সোহান-মিরাজের জুটি ৪২ রান পার করে দিয়ে আরো কিছু রান যোগও করে তাহলেও এই টেষ্ট সাড়ে তিন দিনের বেশি যাবে না। এর মানে বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে টেষ্ট সিরিজে হারলেও তারচেয়ে বড় কথা দুই টেষ্টের একটিতেও সাকিব বাহিনী ৫ম দিনে পা রাখতে পারেনি।

২১ বছর পরও বাংলাদেশ টেষ্টে খেলতে নেমে সোযা তিন দিন আর সাড়ে তিন দিনে টেষ্টে হারের স্বাদ গ্রহণ করছে, এটাই সবচেয়ে কষ্টদায়ক বিষয়।