1410087185

দৈনিকবার্তা-ঢাকা ,৭ সেপ্টেম্বর: নৌযানের সঠিক নকশা প্রণয়নে পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মালিকদের অধিক মুনাফা করার প্রবণতা বেশিরভাগ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী৷ রোববার সকালে সচিবালয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন৷ এ সময় তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিব ও বিভিন্ন দপ্তরের ঊধর্্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ নৌপথকে দুর্ঘটনামুক্ত করতে নৌযানের নকশা প্রণয়নে প্রযুক্তিগত বুদ্ধি কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মালিকদের অধিক মুনাফা করার প্রবণতা বেশিরভাগ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছোট খাট বাতাসে লঞ্চ ডুবে যাবে এটা তো হতে পারে না৷ সেদিকে লক্ষ্য রেখে ডিজাইনটা এমন হওয়া উচিত্‍ যাতে যেকোন অবস্থায় এটা ভাসমান থাকতে পারে৷আমাদের যত নৌযান আছে; এগুলো তৈরি করার সময় সঠিক ডিজাইন করা উচিত্‍৷ ঝড় এলে কিভাবে নদীতে টিকে থাকবে মাথায় না রেখে, শুধু পয়সার কথা মাথায় রেখে বেশি করে কেবিন বানানো, বেশি করে যাত্রী নেয়া; এগুলো করতে যেয়েই কিন্তু অ্যাঙ্েিডন্ট হয়৷এ জন্য নৌযানের সঠিক নকশা নিশ্চিত করার পাশপাশি চালকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন তিনি৷

সমপ্রতি মাওয়ায় ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ লঞ্চের উদাহরণ টেনে শেখ হাসিনা বলেন,ওই ঘটনা খুবই দুঃখজনক৷ চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে অথচ মানুষগুলো বাঁচতে পারছে না৷ নিশ্চয়ই সেখানে কোন লাইফবয়া ছিল না, নিজেদের রক্ষার কোন ব্যবস্থা ছিল না৷

ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে নৌপথকে কাজে লাগানোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শুধু ঢাকাভিত্তিক বা চট্টগ্রামভিত্তিক না, সমগ্র বাংলাদেশভিত্তিক আমরা শিল্প-কলকারখানা গড়ে তুলতে চাই৷ উত্‍পাদিত পণ্যের বাজারজাত বা রপ্তানি করতে হলে অথবা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিতে হলে নদী পথই হলো সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ৷ অল্প খরচে, নিরাপদে পণ্য পরিবহন করা যাবে৷

বাংলাদেশের অবস্থান ব-দ্বীপে হওয়ায় পলি অপসারণ করে নাব্যতা ধরে রাখার জন্য প্রতিটা নদীতেই ক্যাপিটাল ডেজিং করারও নির্দেশ দেন তিনি৷ এ সময় শেখ হাসিনা তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচিরও কথাও তুলে ধরেন৷তিনি জানান, তার সরকারের সময় আট লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং এবং চার লাখ ঘনমিটার খনন কাজ শেষ হয়েছে৷ ৫৩টি নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৩৬টি নদীর খনন কাজ চলছে ৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে তার সরকারের সময় পশুর নদী খনন করে মংলা বন্দরকে সচল করা হয়েছিল৷ কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে মংলা বন্দর বন্ধ হয়ে যায়৷ বর্তমানে মংলা বন্দরকে আবার সচল করা হয়েছে৷নদী দূষণ ও দখল রোধে ব্যবস্থা নিতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যেন নদীর পাড় দখল করে সেগুলো অপব্যবহার না করে সেটা দেখতে হবে৷ আর দূষণটাও৷ বুড়িগঙ্গায় যাওয়ার পর আমার কান্নাই পাচ্ছিলো যে, এই বুড়িগঙ্গা দিয়ে বহুবার স্টিমারে যাতায়াত করেছি৷ সেই নদী মরে পচা দুর্গন্ধ বের হচ্ছে৷ এটা আমাদের জন্য সত্যিই দুঃখজনক এবং কষ্টকর৷বুড়িগঙ্গার মত অবস্থা যেন অন্য নদীগুলোর না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতেও বলেন তিনি৷শেখ হাসিনা জানান, ঢাকার চারপাশের বালু, তুরাগ, বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর নাব্যতা বাড়ানো ও দূষণমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে৷ নেভিগেশন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেভিগেশনটা ঠিকমতো হচ্ছে কি না, নেভিগেশনে যারা আছে তারা দক্ষ কি না তা দেখতে হবে৷ তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে৷ নৌপথে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করার নির্দেশ দেন তিনি৷

বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, নদীর পলি অপসারণ করে নাব্যতা ধরে রাখার জন্য প্রতিটা নদীতেই ক্যাপিটাল ড্রেজিং করতে হবে৷ এরপর প্রতি বছরই নৌপথ সচল রাখতে মেইটেইন্যান্স ড্রেজিং করতে হবে৷

নদীর পাড় রক্ষা, নদী দখল বন্ধ, নদী দূষণ রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,দেশের প্রতিটি শহরের পাশের নদীগুলো রক্ষা করতে হবে, দূষণ ঠেকাতে হবে৷ প্রয়োজনে নদীদূষণ রোধে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করতে হবে৷বুড়িগঙ্গার মতো অবস্থা যেন অন্য নদীগুলোর না হয় সেজন্য এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে৷

নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরো উন্নত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ভৌগলিক অবস্থার কারণে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে একটা সেতুবন্ধ রচনা করতে পারে৷ সেই সুযোগটা আমাদের কাজে লাগাতে হবে৷ সমস্ত বিশ্বে পণ্য পরিবহন এ অঞ্চল থেকেই বেশি হয়৷ কাজেই এখানে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বেশি৷ সেদিকটা মাথায় রেখে আমাদের নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে হবে৷বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন৷ পরিদর্শনে এসে প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই নৌমন্ত্রণালয়ের অটোমেশন ও ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন৷ এ ব্যবস্থার মাধ্যমে এখন থেকে নৌমন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে নিয়মিত পারস্পরিক যোগাযোগ করা সম্ভব হবে৷

উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে মংলা ও মেরিন একাডেমির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন৷ নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানসহ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন৷