bardhoman-blust

দৈনিকবার্তা-ঢাকা-সংবাদ ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে সেখানবার পত্র-পত্রিকায় বিস্তার রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে। এ ঘটনায় কাউসার ছাড়াও আরো তিন বাংলাদেশি জেএমবি নেতাকে দায়ী করছে ভারতীয় পুলিশ। তারা হলো হাতকাটা নাসিরুল্লা, সাকিব এবং সাজি। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা। প্রকাশিত খবরে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি কর্মকর্তাদের দাবি, এই চার জেএমবি ক্যাডার পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড়ের মতো বিভিন্ন আস্তানা থেকে বিস্ফোরক ও বোমার চালান পাঠাতো বাংলাদেশে। ঢাকায় শেখ হাসিনা সরকারের হাত এড়িয়ে বিস্ফোরক তৈরির কাজ হাসিল করতেই এ রাজ্যে বছরের পর বছর বসে থেকে জঙ্গি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল তারা। ওই বিস্ফোরকের একটা অংশ ভারতে নাশকতার কাজে ব্যবহার করাও জঙ্গিদের উদ্দেশ্য ছিল বলে তাদের সন্দেহ।

jmb-1বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে বছর সাতেক আগে এ দেশে ঢোকা শাকিল আহমেদ অষ্টমীর দিন খাগড়াগড়ের আস্তানায় বিস্ফোরণে মারা যায়। সিআইডির হাতে ধরা পড়ে আহত আব্দুল হাকিম, তার স্ত্রী আলিমা বিবি এবং শাকিলের স্ত্রী রাজিয়া ওরফে গুলশানা বিবি। তাদের জেরা করেই সিআইডি জেনেছে, খাগড়াগড়ে শাকিল যে বোমা তৈরি করতো, কওসার তার কয়েকজন সহযোগীর মাধ্যমে তা পৌঁছে দিত বেলডাঙার বড়ুয়া মোড়ের এক আস্তানায় সাকিবের কাছে। আর কওসরকে এই কাজে সাহায্য করতো হাতকাটা নাসিরুল্লা। সাকিব সেই বোমা পৌঁছে দিতো লালগোলায় বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা অন্য একটি আস্তানায়। যেখান থেকে জামায়াত ক্যাডার সাজিদ তা চালান করত সীমান্তপারের রাজশাহি কিংবা সাতক্ষীরায়। এভাবেই এপারে তৈরি হওয়া অস্ত্রে মজবুত হচ্ছিল ‘জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ’ বা জেএমবি-র ভাণ্ডার।

এই চার জনের পাশাপাশি মহম্মদ ইউসুফ নামে আর এক বাংলাদেশি জিএমবি নেতার নামও সিআইডি তদন্তে উঠে এসেছে। সিআইডি সূত্র জানাচ্ছে, এ রাজ্যে জেএমবির শাখা সংগঠন বিস্তার, জঙ্গিদের নিয়োগ করে অস্ত্র প্রশিক্ষণ এবং ধর্মশিক্ষা দেওয়ার কাজ ছিল ইউসুফের। এখানেও তার সহকারী ছিল হাতকাটা নাসিরুল্লা। সিআইডি-র দাবি, জেরার মুখে শাকিলের স্ত্রী রাজিয়া জানিয়েছে, জেএমবির লক্ষ্য, জেহাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে জামাতের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আর সেই জেহাদের জন্য চাই বিস্ফোরক, বোমা। বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের তৎপরতায় নিষিদ্ধ জেএমবির বোমা তৈরির কার্যক্রম গত দু’তিন বছর ধরে কার্যত বন্ধ। তাই ওই জঙ্গি সংগঠনের বেশ কিছু ক্যাডার রাজ্যে ঢুকে পড়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহের যোগান দিচ্ছিল। খাগড়াগড় ছিল সে রকমই একটি বোমা তৈরির কেন্দ্র। রাজিয়া জানিয়েছে ‘আমার স্বামী বলত, সুদিন আসবে। আবার দেশে ফিরব। জেহাদ করতে হবে। সে জন্যই এখন এই কাজ করছি।’ সিআইডি কর্মকর্তারা তার কাছে জানতে চান, বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। তা হলে ওখানে কার বিরুদ্ধে জেহাদ হবে? আলিমারা জানায়, “জামাতের সরকার আনতে জেহাদই করতে হবে।” গোয়েন্দারা জেনেছেন, বাংলাদেশ থেকে টাকাপয়সা এলেও বোমার রসদ জোগাড় করতে হতো ভারত থেকেই। বর্ধমানে ঘাঁটি তৈরির অন্যতম কারণ সেটাই। কারণ, বর্ধমানের কাছেই ঝাড়খণ্ডের খনি এলাকা ও কলকাতা। শাকিল, কওসরের নিয়মিত রানিগঞ্জ-আসানসোলে যাতায়াত ছিল। হাকিমের বাড়ি বীরভূমের দেউচা পাথরখাদান এলাকায়। খাদানে বিস্ফোরণের জন্য সর্বত্রই জিলেটিন স্টিকের বহুল ব্যবহার রয়েছে। ফলে বিস্ফোরক জোগাড় করা তেমন কঠিন ছিল না।