tphb4s92-e1415444965786

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮নভেম্বর: দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ডাকা হরতাল কর্মসূচি জনজীবনে দুর্ভোগ তৈরি করা ছাড়াও অর্থনীতিতে হানছে চরম আঘাত৷ প্রতিটি হরতালে দেশের অর্থনীতি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে, ব্যবসা বাণিজ্যে ক্ষতি হচ্ছে শত শত কোটি টাকা৷ দেশের ব্যবসায়িদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স (ডিসিসিআই) হরতালের ক্ষতি সম্পর্কে একটি পরিসংখ্যান করেছে৷ সে হিসেবে বছরে ৪০ দিন হরতাল হলে ৬৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়৷ প্রতিদিন গড়ে ক্ষতি হয় ১৬০০ কোটি টাকা৷ডিসিসিআই তাদের পরিসংখ্যানে দেখিয়েছে, তৈরি পোশাক খাতে একদিনের হরতালে ৩৬০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়৷ রাজস্ব ক্ষতি হয় ২৫০ কোটি টাকা৷ ক্ষুদ্র ব্যবসা ও পাইকারি বাজার, শপিং মল, শো রুমের ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় ৬০০ কোটি টাকা৷ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা৷এছাড়া পরিমংখ্যানে ইন্সু্যরেন্স কোম্পানির ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১৫ কোটি টাকা৷ পর্যটন শিল্পের ক্ষতি ৫০ কোটি টাকা৷ স্টিল মিলস, সিরামিক, সিমেন্ট, রড, এডিবল অয়েল, কাগজসহ সব উত্‍পাদনকারী কারখানার একদিনের হরতালে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০০ কোটি টাকা৷ অপরদিকে একদিনের হরতালে শিক্ষা খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা৷

পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমই’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একদিনের হরতালে তাদের ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ১১০ কোটি টাকা৷ হরতালের কারণে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে তাদের ক্ষতি হয়েছে ৮০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা৷ শুধু ১৯৯৯ সালেই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা৷ এ হিসাবে প্রতি বছরে ক্ষতি হয়েছে ৮ হাজার ৩৮ কোটি টাকা৷হরতাল সম্পর্কে ব্যবসায়িদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো.হেলাল উদ্দিন জানান, রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি থাকবে এটা স্বাভাবিক৷ কিন্তু অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে এমন কর্মসূচি কখনও কাম্য নয়৷তিনি বলেন, আমাদের দেশ বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো এগিয়ে যাচ্ছে৷ যদি এই মুহূর্তে হরতালের মতো কর্মসূচির কারণে দেশ উন্নয়নে পিছিয়ে পড়ে তাহলে কখনও অর্থণীতির মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না৷ আর এজন্য আইন করে হরতাল বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বার বার আহবান জানানো হচ্ছে৷

এদিকে হরতালে সারা দেশের সঙ্গে পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকে৷ ফলে পরিবহন শিল্পে ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে৷ হরতালের ক্ষতি সম্পর্কে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ খান বাংলামেইলকে জানান, সারা দেশে ৩ লাখ গণপরিবহন চলাচল করছে৷ হরতালে জেলা শহরগুলোতে পরিবহন চলাচল করে৷ কিন্তু রাজধানী থেকে দূরপাল্লার কোনো পরিবহন চলাচল করে না৷ বন্ধ থাকা পরিবহনের সংখ্যা ৬০ শতাংশ৷ প্রতিটি পরিবহনে প্রতিদিন গড়ে ৮ হাজার টাকা আয় হলে হরতালের কারনে সে আয় হচ্ছে না৷সে হিসেবে প্রতিদিন পরিবহন ব্যবসায়িদের লোকসানের পরিমান দাঁড়ায় ১৪৪ কোটি টাকা৷

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গত বছর ৬ মাসে দেশে মোট ৫৫টি হরতাল-অবরোধ হয়েছে৷ এই সময়ে রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতি হয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা৷ ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮০ দিনের মধ্যে ওই হরতাল-অবরোধ হয়েছে৷ সিপিডি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে একদিনের হরতালে ক্ষতি হয় ৮৯১ কোটি টাকা৷হরতাল প্রসঙ্গে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট হাজী মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন,বেসরকারি হিসেব মতে বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিদিন ৬০০কোটি টাকা লেনদেন হয়৷ হরতালে অধিকাংশ দোকান খোলা থাকে কিন্তু দেশের বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে ক্রেতারা আসতে পারে না৷ ফলে হরতালে প্রতিদিন মোট লেনদেনের ৭৫ শতাংশ হয় না৷ এতে ব্যবসায়িরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়৷তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হরতাল বন্ধের জন্য কোর্টে রিট হয়েছিল৷ কিন্তু হরতাল নাকি গণতন্ত্রের ভাষা তাই সেই রিট খারিজ হয়েছে শুনেছি৷