মুসা বিন শমসের

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ ডিসেম্বর: অবৈধ সম্পদের খোঁজে আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন৷কমিশনের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচাযর্্য জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে মুসার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়৷কমিশনের জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী তাকে জেরা করেন৷ দুদকের তলবে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সেগুনবাগিচায় কমিশন কার্যালয়ে উপস্থিত হন মুসা বিন শমসের৷তাকে হাজির হতে বলে গত ৪ ডিসেম্বর গুলশানের বাসা ও বনানীর ব্যবসায়িক কার্যালয়ে চিঠি পাঠায় দুদক৷দুদকের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মুসার অবৈধ সম্পদ রয়েছে কিনা তা অনুসন্ধানের জন্যই এই জিজ্ঞাসাবাদ৷জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সুইসব্যাংকে জব্দ হওয়া সাত বিলিয়ন ডলার অবমুক্ত হলে পদ্মাসেতুতে বিনিয়োগ করবেন বলে জানান আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের৷ বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান৷অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে সকাল পৌনে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদক উপ-পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী৷ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, পদ্মাসেতুতে বিনিয়োগ শুধু আমার নয়, আমার বাবারও স্বপ্ন ছিলো৷ পদ্মাসেতু গোয়ালন্দ থেকে আরিচা, নগরবাড়ী-এখানে অ্যাঙ্গেল একটা ব্রিজ হবে৷ তিন বিলিয়ন ডলার লাগবে এতে৷ আমার অর্থ অবমুক্ত হলে এতে বিনিয়োগের পাশাপাশি, সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ও বৃদ্ধদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে স্বপের বাংলাদেশ গড়বো৷ সুইস ব্যাংকে মুসা বিন শমসেরের সাত বিলিয়ন ডলার রয়েছে এমন তথ্য দিয়ে চলতি বছর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সাময়িকী ‘বজনেস এশিয়া সংবাদ প্রকাশ করে৷ বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৫১ হাজার কোটি টাকা৷বিজনেস এশিয়ার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে মুসার সম্পদ যাছাই ও অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক৷ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মুসা বিন শমশের আরও বলেন, এটা সবাই বুঝতে পারবে যে, এ পরিমাণ টাকা বাংলাদেশ থেকে অর্জন করা সম্ভব নয়৷ যা উপার্জন করেছি বিদেশিই করেছি৷ আমি দেশ থেকে কোনো টাকা বিদেশে পাচার করি নি৷ দুদকের অনুসন্ধানেই তা বেরিয়ে আসবে৷অবৈধ সম্পদ ও অর্থ পাচারের অভিযোগের বিষয় তিনি বলেন, প্রত্যেকটি গল্পের পেছনে একটি ইতিহাস থাকে৷ ধৈর্য ধরেন৷ সব জানতে পারবেন৷ আমার সম্পর্কে বলা হয়েছে, আমি ৫১ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছি৷ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট৷ দুদকের অনুসন্ধানে এটা বেরিয়ে আসবে৷ তিনি বলেন, এ টাকা (৫১ হাজার কোটি টাকা) কেউ দেশে অর্জন করতে পারেনি৷ আগামী ৫০ বছরে এদেশে কেউ অর্জন করতে পারবেও না৷ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হলেও দুই ঘন্টা আগেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে দুদকে হাজির হন তিনি৷ প্রায় তিন ঘন্টা দুদক তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে৷দুদক সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে মুসা বিন শমসের তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন৷ বাংলাদেশ থেকে কোনো টাকা তিনি পাচার করেননি বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান৷ ১৯৫০ সালের ১৫ অক্টোবর ফরিদপুরে জন্ম নেওয়া মুসা ড্যাটকো গ্রুপের মাধ্যমে জনশক্তি রপ্তানি করেন৷ তবে তার পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো অস্ত্র ব্যবসার কথাই আগে এনেছে৷ ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী টনি ব্লেয়ারের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য ৫০ লাখ পাউন্ড অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি৷ এরপরই বেশ আলোচনায় আসেন বাংলাদেশের এ ব্যবসায়ী৷বাণিজ্য সাময়িকী বিজনেস এশিয়ার সামপ্রতিক একটি প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে গত ৩ নভেম্বর কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে মুসা বিন শমসেরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়৷ সুইস ব্যাংকে এই ব্যবসায়ীর সাত বিলিয়ন ডলার রয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়৷ কমিশনের জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক শিবলীকে বিষয়টি অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয় দুদক৷বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রিন্স হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মুসা বিন শমসের আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই৷মুসার বড় ছেলে ববি হাজ্জাজ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন৷
১৯৫০ সালের ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্ম নেয়া মুসা ড্যাটকো গ্রুপের মাধ্যমে জনশক্তি রপ্তানির ব্যবসা শুরু করেন৷ তবে তার পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো অস্ত্র ব্যবসার কথাই আগে আনে৷১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী টনি ব্লেয়ারের নির্বাচনী প্রচারের জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আলোচনায় আসেন বাংলাদেশের এই ব্যবসায়ী৷ এর আগে একটি দৈনিকে সুইস ব্যাংকে মুসা বিন শমসেরের ৫১ হাজার কোটি টাকা থাকার খবর ছাপা হওয়ার পর ২০১১ সালের এপ্রিলে একবার তার সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন৷ কিন্তু পরে সেই প্রক্রিয়া আর এগোয়নি৷