সেলিমা রহমান

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ ফেব্রুয়ারি: গুলশানের কার্যালয়ে নেতা-কর্মীদের খাবার ঢুকতে বাধা দেওয়ায় খালেদা জিয়া নিজেও খাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তার সঙ্গে থাকা বিএনপি নেতা সেলিমা রহমান।গত ৫ দিন ধরে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খাবার ঢুকতে বাধা দিচ্ছে পুলিশ। খাবার আনার সঙ্গে সঙ্গে ফটক থেকে পুলিশ গাড়িসহ তা নিয়ে যাচ্ছে।অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী-কর্মচারীদের জন্য দোকান থেকে আনা খাবারের প্যাকেট ঢুকতে না দিলেও খালেদা জিয়ার জন্য তার আত্মীয়দের আনা খাবার নিতে বাধা দিচ্ছে না পুলিশ।গত ৩ জানুয়ারি থেকে দলীয় চেয়ারপারসনের সঙ্গে কার্যালয়ে থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান রোববার সাংবাদিকদের বলেন, আজ পাঁচ দিন হল কার্যালয়ের নেতা-কর্মী-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খাবার খেতে পারছে না।

তাদের অভুক্ত রেখে ম্যাডাম খাবার কখনও খেতে পারেন না। এজন্য তিনিও অভুক্ত রয়েছেন। অফিসের ভেতরে অভুক্ত নেতা-কর্মীদের প্রতি সহমর্মিতা টওকাশ করতেই বেগম খালেদা জিয়া নিজের খাবার খাচ্ছেন না।৫ জানুয়ারি ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে গত ৩ জানুয়ারি বের হওয়ার সময় পুলিশের বাধা পেয়ে গুলশান ২ নম্বর সড়কের ৮৬ নম্বর সড়কের ওই বাড়িতে অবস্থান নেন খালেদা। অবরুদ্ধ অবস্থায় লাগাতার অবরোধের ডাক দিয়ে ওই কার্যালয়ে অবস্থান নেন তিনি।এর মধ্যে তার কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সংযোগও ২০ ঘণ্টার জন্য বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ইন্টারনেট ও কেবল টিভির সংযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কিছু দিন ঘেরাও করে রাখার পর এখন ওই কার্যালয়ের সামনে পুলিশি বেষ্টনি না থাকলেও এসবি সদস্যরা সেখানে ঢোকা-বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করছেন।গত বুধবার ওই কার্যালয়ে খাবার ঢুকতে বাধা দেয় পুলিশ। এরপর প্রতিদিনই খাবারভর্তি গাড়ি এলে পুলিশকে তা ফিরিয়ে দিতে দেখা যাচ্ছে; যদিও পুলিশ প্রধান বাধা দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।রোববার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে একজন রিকশাচালক গুলশান বিরিয়ানি হাউজের ৩০ প্যাকেট খাবার ও পানির বোতল নিয়ে ওই কার্যালয়ে এলে তাকে চলে যেতে বলেন সাদা পোশাকে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তা।

তখন কার্যালয়ের ফটকের ভেতরে অবস্থান করা কর্মীরা পুলিশ সদস্যকে প্রশ্ন করেন, কেন খাবার আনতে দিচ্ছেন না? তবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা কোনো জবাব দেননি। তিনি রিকশাচালককে দ্রুত চলে যেতে বলেন। রিকশাচালক খাবারের প্যাকেট ফুটপাতে ফেলে দ্রুত চলে যান।সাংবাদিকরা ওই পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলতে রাজি হননি। কেন খাবার যেতে দিচ্ছেন না- জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমি কিছু বলতে পারব না। সিনিয়র অফিসার বলতে পারবেন।এই সময় ভেতর থেকে বন্ধ ফটকের কাছে এসে সেলিমা রহমান পুলিশের আচরণের নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশকে বলছি, কার নির্দেশে খাবার ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা কি কারাগার? কারাগারেও তা খাবার দেওয়া হয়। ফাঁসির আসামিরাও খাবার পান।

একদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপি বলেছেন, খাবার ঢুকতে কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। অথচ প্রতিদিনই পুলিশ আমাদের খাবার ঢুকতে দিচ্ছে না। আমি জানতে চাই, কার নির্দেশে পুলিশ খাবার ঢুকতে বাধা দিচ্ছে। আমরা মনে করি, সরকার খাবার নিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে।গত কয়েকদিন ধরে খাবার ঢুকতে না দেওয়ায় কার্যালয়ের কর্মী-কর্মচারীরা প্রায় অভুক্ত বলে জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা। কর্মীরা জানান, বাধা দেওয়ার পর ভেতরে রান্নার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এতজনের খাবার তৈরি করা কঠিন। ফলে শুকনো খাবারের ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে তাদের।খালেদা জিয়ার সঙ্গে এই কার্যালয়ে সেলিমা ছাড়াও রয়েছেন তার উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ুম, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবদুল মজিদ, মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শাহেরুল কবির খান, শামসুদ্দিন দিদার। কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মী মিলিয়ে সেখানে মানুষের সংখ্যা অর্ধশতাধিক।খালেদা জিয়ার জন্য তার বোন সেলিনা ইসলাম, দুই ভাই সাঈদ এস্কান্দার ও শামীম এস্কান্দার এবং তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবালমান্দ বানুর বাসা থেকে খাবার আনা হচ্ছে। এছাড়া শুক্রবার সেলিমা রহমানের জন্য তার বাড়ি থেকে খাবার আনা হলে তা ঢুকতে বাধা দেয়নি পুলিশ।

এদিকে, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য আনা খাবার আবারও ফেরত পাঠিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।রোববার দুপুর সোয়া ২টার দিকে একটি রিকশায় করে বিরিয়ানির প্যাকেট ও পানির বোতল কার্যালয়ের গেটের সামনে আনা হয়। তখন সাদাপোশাকের লোকেরা খাবার ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে ফেরত পাঠান। চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অবস্থানরতরা জানান, ভেতরে অবস্থানকারী কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীরা অভুক্ত ছিলেন। তাই দুপুরের খাবার হিসেবে বিরিয়ানির প্যাকেটগুলো আনা হয়। খাবার আনতে না দেয়ায় চিড়া-মুড়ি খেয়েছেন তারা।প্রসঙ্গত,বুধবার রাত থেকে চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে শুকনা খাবার খেয়েই কার্যালয়ের কর্মচারী ও চেয়ারপারসনের নিরাপত্তারক্ষীরা দিন কাটাচ্ছেন।এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে এবার শুধু শুকনো খাবার নিয়ে ঢুকতে দিয়েছে পুলিশ।রোববার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে এ খাবার নিয়ে যাওয়া হয়।বিএনপির মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান,কার্যালয়ের স্টাফের মাধ্যমে ভেতরে পাঠানো হয়েছে।নাম প্রকাশ না করার শর্তে কার্যালয়ের সামনে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা দাবি করেন, শুধু শুকনো খাবারই নয়, ভাত, তরকারি সবজি, চা ইত্যাদি ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।এর আগে দুপুরে শহিদুল ইসলাম নামের এক রিকশাচালক গুলশান বিরিয়ানি হাউজ থেকে ৩০ প্যাকেট খাবার নিয়ে এলে পুলিশ তাকে কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেয়। পরে তিনি খাবারগুলো কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতে রেখে চলে যান। সেই খাবারগুলো বিকেলে দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে বলেও জানান শায়রুল কবির।অন্যদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশ করেছেন বাংলাদেশ নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত হোসেইন মোফতুগলু।

রোববার বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে তিনি কার্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন।সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে তিনি কার্যালয়ে প্রবেশ করেছেন। চলমান রাজনীতি ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি খালেদার সঙ্গে কথা বলতে পারেন বলেও সূত্র জানিয়েছে।এর আগে চেয়ারপরসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান সাক্ষাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় কূটনৈতিক হিসেবে হোসেইন মোফতুগলু গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করেছেন। এর আগে ১১ ফেব্র“য়ারি (বুধবার) ব্রিটিশ হাই কমিশনার রবার্ট উইলিংটন গিবসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।