Ctg-photo-ajm-nasir-2

দৈনিকবার্তা-চট্টগ্রাম, ২৩ মার্চ: চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে লড়তে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। সোমবার দুপুর দু’টায় নগরীর লাভলেইনস্থ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় থেকে তিনি মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন।নির্বাচন কার্যালয় থেকে বের হয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের আ জ ম নাছির বলেন, আমি জনকল্যাণে রাজনীতি করি। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতদিন অল্প পরিসরে কাজ করলেও এখন জনগণের জন্য বৃহৎ পরিসরে কাজ করার সুযোগ এসেছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে নেত্রী আমাকে সে সুযোগ করে দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, ‘জনকল্যাণের এ অঙ্গীকারকে ধারণ করে দলের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা আর মানুষের ভালোবাসায় নিয়ে নির্বাচনের মাঠে বিজয় ছিনিয়ে আনবো। রাজনীতির মাঠে অনেকদিন ধরে কাজ করছি। মানুষের সেবা করে তাদের মন জয় করেছি। তাই নির্বাচনে জয় আমদের হবেই। আজ যেভাবে মানুষের জন্য কাজ করছি, নির্বাচনের জয়ী হয়ে একইভাবে বৃহত্তর পরিসরে কাজ করতে চাই। চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাছির সোমবার বেলা সোয়া ২টার দিকে নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক সার্ভার স্টেশনে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেনের কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।তার সঙ্গে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা শফর আলী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আলী আব্বাস, বিসিবির সাবেক পরিচালক সিরাজুদ্দিন মো. আলমগীর, আওয়ামী লীগ নেতা নোমান আল মাহমুদ।

তার আগে সকালে নাছির চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দলের নেতাদের নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। এতে চট্টগ্রাম নগরসহ উত্তর, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মেয়র পদে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামও ছিলেন নাছিরের অনুষ্ঠানে, যারা দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন।গত শুক্রবার গণভবনে এক বৈঠকে চট্টগ্রামে মেয়র প্রার্থী হিসেবে রাজনীতিক-ক্রীড়া সংগঠক নাছিরের নাম চূড়ান্ত করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় নির্বাচনী কর্মকর্তার কক্ষে আ জ ম নাছিরসহ নয় থেকে দশ জন ঢোকেন। এদের মধ্যে তিনজন বর্তমান কাউন্সিলর আঞ্জুমান আরা, রেখা আলম চৌধুরী ও বিজয় কিষাণ চৌধুরী।

ক্ষমতাসীন দলের নেতা নাছিরের সঙ্গে কয়েকটি গাড়ি ও মোটর সাইকেল নিয়ে গিয়েছিলেন তার অনুসারীরা। তবে তারা ভেতরে ঢোকেননি।রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, পাঁচজনের বেশি লোক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের বিধান নেই। উনার (নাছির) সঙ্গে কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। আর বেশিরভাগ তো আপনাদের (মিডিয়া) লোক।

তিনি জানান, পাঁচজনের বেশি লোক যাতে নির্বাচন কার্যালয়ে ঢুকতে না পারে সে বিষয়ে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে কেউ বাইরে এসে থাকলে সে ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ নেই।মনোনয়নপত্র কেনার আগে নাছিরের সংবাদ সম্মেলনে দীর্ঘদিন পরে এক মঞ্চে দেখা যায় চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাদের।আর নেতাদের পাশেরেখে নাছির বলেছেন, মহানগর আওয়ামী লীগ অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বিভেদহীন এবং শক্তিশালী। বিজয় ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই।

বেলা ১১টা ২০ মিনিটে মঞ্চে আসেন নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ইসহাক মিয়া। তার সঙ্গে ছিলেন সাংসদ আফসারুল আমীন, উত্তর জেলার সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, দক্ষিণের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, নগর কমিটির সহ-সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সুনীল কুমার সরকার, খোরশেদ আলম সুজন, নঈম উদ্দিন চৌধুরী, ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলতাফ হোসেন বাচ্চু ও জহিরুল আলম দোভাষ, কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম ও সাংসদ এম এ লতিফ।ঢাকায় অবস্থান করায় নগরীর সাবেক সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়। এর প্রায় ২০ মিনিট পর অনুষ্ঠানস্থলে ঢোকেন তিন বারের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী, যিনি এবার দলের সমর্থন না পেয়ে নাছিরের পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দিলেও তার সমর্থকরা এখনও নাখোশ।

মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমার বয়স হয়ে গেছে। দলকে ঐক্যবদ্ধ করে রেখেছি। কারও মনে ক্ষোভ থাকলে সেই ক্ষোভ প্রশমিত করেই কাজ করব।মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে ও মোসলেম উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান নাছির, যাতে মেয়র হলে তিনি কী কী করবেন, তা তুলে ধরা হয়। নাছিরের বক্তব্যের পর মহিউদ্দিন কয়েক মিনিটের সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে চাইলেও দুটির বেশি প্রশ্নের উত্তর দেননি তিনি।নাছির তাকে মেয়র পদে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়ায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি চট্টগ্রামের প্রবীণ নেতা মহিউদ্দিনেরও প্রশংসা করেন।

নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নিজের ভাবনা তুলে ধরে নাছির বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পিত ব্যবহারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম হয়ে উঠতে পারে সর্বাধুনিক মেগাসিটি। দুঃখজনক হল, চট্টগ্রাম তার সম্পদ ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু পথ বেছে নিতে পারেনি।পরিকল্পিত নগরায়নের প্রতিফলন না ঘটায় শহরের জীবনযাত্রা উপভোগ্য না হয়ে দুর্ভোগের হয়ে থমকে আছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থার পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখি। চট্টগ্রামকে মেগাসিটিতে পরিণত করতে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের দিক-নির্দেশনার কথাও তুলে ধরেন নাছির।চট্টগ্রামকে ঘিরে বঙ্গবন্ধুকন্যার লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে আমরা ভূমিকা রাখতে চাই। সবার সহযোগিতায় শহরকে নতুন রূপে সাজাতে চাই।নির্বাচিত হলে নগরবাসীর পরামর্শে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরশনের কাজ চালানোর প্রতিশ্র“তিও দেন নাছির।

জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবেন বলেও জানান তিনি।নগরীর খালগুলো পরিকল্পিতভাবে খনন করা হবে। সর্বশেষ অনুমোদন পাওয়া বহদ্দারহাট থেকে চাক্তাই পর্যন্ত নতুন খাল খনন করা হবে। বিভিন্ন খালের মুখে লাগানো হবে স্লুইস গেট।তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা দিতে পুরো নগরীকে ওয়াইফাই জোনের আওতায় আনার ইচ্ছার কথাও জানান নাছির, যিনি মনে করেন তরুণ প্রজন্মই তার প্রধান শক্তি। ওয়ার্ড ভিত্তিক কাউন্সিলর ও শ্রেণি- পেশার মানুষকে নিয়ে টাস্কফোর্স গঠন, অনুন্নত ওয়ার্ডের অগ্রাধিকার ভিত্তিক উন্নয়ন, বাকলিয়ায় এক্সেস সড়ক নির্মাণ, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ এলাকায় সড়ক প্রশস্ত করা, মিয়াখান নগর-কালামিয়া বাজার সড়ক সম্প্রসারণ, ওয়ার্ড পর্যায়ে ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে ট্রেড লাইসেন্স প্রদান এবং শাহ আমানত বিমান বন্দরকে বাস্তবিক অর্থে আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে পরিণত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।নাছির বলেন, করের বিষয়ে এলাকাভিত্তিক নগরবাসীর মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মাতৃসদনগুলো পুনরায় চালু ও জেনারেল হাসপাতালের আধুনিকায়ন করা এবং উন্নত প্রযুক্তি মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজানো হবে।

শুধু আশ্বাসের ফুলঝুড়ি নয়, বাস্তবিক কর্ম পরিকল্পনা দিয়ে নগরবাসীর আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটাতে চাই। মোদ্দা কথা, নগরবাসীর পরামর্শেই চলবে সিটি কর্পোরেশন।সভায় প্রতিশ্র“তি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, উনি এখনও প্রার্থী হননি। এখানে একটা গ্রে লাইন আছে। যদি উনি প্রতিশ্র“তি দিয়ে থাকেন এবং তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়, তাহলে সে বিষয়টি নির্বাচন কমিশন দেখবে।মতবিনিময় সভা শেষের দেড় ঘণ্টা পরই মনোনয়নপত্র কিনতে যান নাছির।