দামুড়হুদায় ভৈরব নদী্িট প্রভাবশালী দখলে

দৈনিকবার্তা-চুয়াডাঙ্গা, ১৭এপ্রিল : স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে নিচু জমিতে শতশত বিঘা ধানের আবাদ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এক সময়ের প্রমত্তা ভৈরব নদী শুকিয়ে গেছে। দুই তীরের পাশাপাশি পুরো নদী দখল করে ধানসহ নানা ফসলের আবাদ করা হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, ভারত থেকে এ নদী মেহেরপুর জেলার কাথুলি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মেহেরপুর জেলা অতিক্রম করে ভৈরব নদী চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার সুবলপুরে এসে মাথাভাঙ্গা নদী র সঙ্গে মিশেছে। মুঘল আমলে দামুড়হুদা উপজেলার এই ভৈরব নদী কে ঘিরে গড়ে উঠেছিলো ব্যবসা-বাণিজ্যে। কলকাতাসহ ভারতের বিভিন্ন শহর থেকে নৌকায় করে মালামাল আসতো কার্পাসডাঙ্গা ও দামুড়হুদায়।

১৯২৬ সালে বিপ্লবী হেমন্ত কুমার ও মহিম সরকারের আমন্ত্রণে কবি কাজী নজরুল ইসলাম কোলকাতার আমহার্ষ্ট স্ট্রিট থেকে সপরিবারে এই ভৈরব নদী ী পথে এ কার্পাসডাঙ্গায় আসেন এবং টানা দু মাস অবস্থান করেন। সে সময় ভারতবর্ষে চলছিলো ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন। আন্দোলনের হাওয়া বইছিলো কার্পাসডাঙ্গাতেও। সে সময়ে কবি নজরুল কার্পাসডাঙ্গায় গঠন করেছিলেন শ্রমিক প্রজা কৃষক পাটি। মূলত স্বদেশী আন্দোলনের নেতাদের উৎসাহ দিতেই পার্টির পক্ষে কবি সপরিবারে কার্পাসডাঙ্গায় আসেন। এখানকার জীবনযাত্রা ও পরিবেশ তার সাহিত্যকর্ম মৃত্যুক্ষুধা, পদ্মগোখরো এবং লিচুচোর কবিতাসহ অসংখ্য গান লিখতে সহায়ক হয়েছিলো। র্কাসডাঙ্গায় অবস্থানকালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম এ ভৈরব নদী ীর পারে বসে লেখালেখি করতেন। বর্ষা মৌসুম ছাড়া ভৈরব নদী ীটি এখন মৃত প্রায়। নজরুল গবেষকদের মতে, কবি ওই সময় কার্পাসডাঙ্গার ভৈরব নদী ীর তীরে বসেই সাহিত্যের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রচনা করেছেন। প্রসঙ্গত, ১৯২৬ ও ১৯২৭ সালে কবি তার জীবদ্দশায় এ কার্পাসডাঙ্গায় একাধিকবার আসেন এবং দীর্ঘসময় অবস্থান করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, নদের দুতীর ঘিরে দখলদাররা মাটি ভরাট করেছে। সেখানে এখন ধানসহ নানা ফসল আবাদ করছে তারা। ভৈরব নদের বর্তমান অবস্থা দেখে নতুন প্রজন্মের কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না, একসময় এই নদের বুকে জাহাজ চলতো, পালতোলা নৌকা চলে যেতো কলতাকায়। দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম জানান, নদী টি বর্তমানে আর নেই। অবৈধ দখলদাররা দুতীর দখল করে তাতে মাটি ভরাট করে সেখানে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ করে নদী টি ফসলি জমিতে পরিণত করেছে।এ ব্যাপারে মাহবুল হক নামে স্থানীয় এক দখলদারের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, নদীতে পানি না থাকায় অন্যান্যদের মতো আমিও দু-চার বিঘা জমি আবাদ করেছি। সবাই করছে তাই আমিও করেছি।পানি উন্নয়নের বোর্ডের জায়গায় কীভাবে চাষবাদ হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে কোমরপুর গ্রামের আরেক দখলদার আমির হামজা বলেন, আমি অবৈধ দখল করিনি। নদী ীর তীরে আমার জমি আছে। সেই জমির সঙ্গে কিছু জায়গা ফাঁকা থাকায় আমি চাষাবাদ করছি।

এ ব্যাপারে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদুর রহমান বলেন, কয়েকটি জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী ীটি সংস্কার ও খনন একান্ত প্রয়োজন। পানি না থাকায় খালি জায়গা পাওয়ায় এক শ্রেণীর দখলদার নদী ীর জায়গা দখল করছে। তিনি বলেন, ভৈরবকে বাঁচাতে বিভিন্ন সময়ে অবৈধ দখলদারদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে দখলদারদের জরিমানা করা হয়েছে তার পরও তাদেরকে থামানো যাচ্ছে না। এর জন্য প্রয়োজন গণ সচেনতা।