26-04-15-PM_Press Conference-10

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৬ এপ্রিল: দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিটি নির্বাচনে প্রতিশোধ নেয়ার কথা বলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাবমূর্তি নষ্ট করার কারণে যদি জনগণ প্রতিশোধ নেয় তাহলে তিনি কোথায় যাবেন সেটাও ভেবে দেখা উচিত বলেও জানান তিনিসিটি নির্বাচনে নীরব প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বক্তব্যের প্রতুত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলেছেন, কিসের প্রতিশোধ? কে কার প্রতিশোধ নেবে?সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় হয়ে যাওয়া আফ্রো-এশীয় সম্মেলনের বিষয়ে রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী।রোববারের প্রেস কনফারেন্স খালেদা জিয়া সুলিখিত বক্তব্য পাঠ করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া চমৎকারভাবে মিথ্যার ফুলঝুরি ছড়িয়ে গেছেন।সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীকে বিজয়ীর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া মানুষ পুড়িয়ে এখন ভোট চান কোন মুখে? জনগণ তার এ আহ্বানে সাড়া দেবে না।

হরতাল-অবরোধে ঘটিত নাশকতা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দগ্ধ মানুষের পাশে দাঁড়াননি খালেদা জিয়া, কোনো সহানুভুতি জানান নি তিনি। অবরোধ- হরতাল দিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটিয়েছেন তিনি।হরতাল-অবরোধ ডেকে দেশের মানুষকে ৯২ দিন নরকে রেখেছে খালেদা জিয়া— উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষ পুড়িয়ে হত্যার হুকুমদাতাদের এবং অর্থযোগানদাতাদের বিচার করা হবে।নির্বাচনে পরাজিত হলে সরকারের কিছু যায় আসেনা উল্লেখ করে এসময় খালেদা জিয়াকে জনগণের বেঈমানের সঙ্গেও তুলনা করেন শেখ হাসিনা।নীলনকশা করে কিভাবে নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায় তা খালেদা জিয়ার থেকে ভাল আর কে জানে? এ মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আজকের সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যার ফুলঝুড়ি ছুটিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের ভুয়া বিবৃতি এবং ভারতের বিজেপি প্রধান অমিত শাহের ফোনালাপের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তার মিথ্যাচারের কথা কী বলব দেশের ভেতরে তো মিথ্যাচার করেই যাচ্ছেন, বিদেশিদেরও ছাড় দেননি। মিথ্যা কথা উনি চমৎকারভাবেই বলতে পারেন।গণমাধ্যম খালেদার অপকর্ম তুলে ধরে না মন্তব্য করে তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার চালালেও তা গণমাধ্যমে আসেনি বলে সমালোচনাও করেন শেখ হাসিনা।এ সময় সাংবাদিকের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে কে বিশ্বাস করবে? সমঝোতার সম্ভাবনার কথা তিনি অসম্ভব বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই নেপালে ভূমিকম্পে হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করে তাদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নেপালে ঘটিত ভূমিকম্পে তাদের পাশে থাকবে থাকবো।সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার সম্মেলনে অংশ গ্রহণের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেন তিনি। বৈঠকে নারী ক্ষমতায়নে শিক্ষা প্রযুক্তি জলবায়ু ভূমিকা উল্লেখ করে সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে বাণিজ্য, জ্বালানির বিষয়ে আলোচনা হয়। দুই দেশের বিভিন্ন সহযোগিতার বিষয় চিহ্নিত করে সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেই। চীনের রাষ্ট্রপতিকে বিনিয়োগের আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। সহিংসতার জন্য খালেদা জিয়াকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার নির্দেশে কত মায়ের কোল খালি হয়েছে। এখন যদি জনগণ প্রতিশোধ নেয় তবে তা কার ওপর নেবে সেটা তার ভেবে দেখা উচিত।প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, সহিংসতার সে সব ঘটনা আপনারাও ভুলে যেতে পারেন কিন্তু জনগণ ভুলবে না।তিনি যখনই ক্ষমতায় এসেছেন জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছেন।তিনি বলেন, খালেদা জিয়া মানুষ খুন করে, মানুষকে পুড়িয়ে যখন মানুষকেই প্রতিশোধ নিতে বলেন এর চেয়ে হাস্যকর আর কিছুই নেই।এ সময় তিনি সাংবাদিকদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠনের পরে যেভাবে দেশকে বিশ্বের কাছে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছি, তার আগে দেশের কি অবস্থা ছিল ?

খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন যেভাবে মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ভাঙচুর, ধর্ষণ হয়েছে তা নজিরবিহীন।তার আমলে দুর্নীতির কারণে বিনিয়োগ বন্ধ ছিলো। বাংলাদেশে কেউ আসতে ভয় পেত। আমাদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। তার ছেলে যে দুর্নীতিবাজ তা আমেরিকার ফেডারেল কোর্টের রায়ে ও সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে।তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার আমলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তির এমন অবস্থা হয়েছিলো যে ১/১১ এসেছিল। হাওয়া ভবনে কমিশন না দিলে ব্যবসা হয়নি। বিদেশি বিনিয়োগ চলে গেছে।চার দলীয় সরকার মানব পাচারে জড়িত ছিলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ তারা সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে মানব পাচার করেছে। যার খেসারত দিয়েছে দেশের মানুষ।খালেদা জিয়া ক্রমাগত মিথ্যাচার করছেন অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ তিনি মিথ্যাচার করেই যাচ্ছেন। বিজেপি নেতা অমিত শাহ’র টেলিফোন নিয়ে, আমেরিকার ৬জন কংগ্রেসম্যানের বিবৃতি নিয়ে মিথ্যাচার তার প্রমাণ।দেশের বিদ্যুৎ খাতে তার সরকারের অবদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বিদ্যুত উৎপাদন বাড়িয়েছি আর তার ছেলে দুর্নীতি করার জন্য বানালো খামবা লিমিটেড।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার আগে রাস্তাঘাট ছিলো ভাঙাচোরা। সেসবের উন্নয়ন করেছি। সরকারে আসার পর মানুষের পানির অভাব দূর করেছি। হাতিরঝিল, ফ্লাইওভার করেছি। তারা কি করেছে?।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কে কার প্রতিশোধ নেবে। এত মায়ের কোল খালি হলো। মায়ের সামনে বাবা-মেয়ে পুড়ে মরেছে। দেশের মানুষ প্রতিশোধ নিলে কার ওপর নেবে তা তাদের ভাবা দরকার।সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাস পুড়িয়ে আবার ওই মার্কায় ভোট চাইছেন। ওনার লজ্জা থাকা উচিৎ ছিলো।খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে অর্থ নিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা বলেছেন অর্থ নিয়ে ভোট দেবেন না। ক্ষমতায় থাকতে অর্থ নিয়েছেন এটা উনি ভাল বুঝেন।বিএনপির সিটি নির্বাচনে না আসার ঘোষণা দিয়েও এখন অংশ নেয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতা যদি সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন দেশ চালাবেন কি করে! যখন ক্ষমতায় এসেছেন মানুষের জীবন বিষিয়ে তুলেছেন। তার স্বামীও বঙ্গবন্ধু ও শিশু রাসেলকে হত্যার জন্য দায়ী।খালেদা জিয়া ভদ্রতা জানেন না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের আগে আমি ফোন করেছিলাম। আমার জীবনে এমন মুখ ঝামটা খাইনি। ছেলে মারা যাওয়ার পরে আমি গেলাম সান্ত্বনা জানাতে। কিন্তু গেটে তালা দেওয়া। পৃথিবীতে কেউ যদি মৃত বাড়িতে সান্ত্বনা জানাতে যায়, তাহলে কি গেটে তালা দেওয়া থাকে। আমি ঢুকতে পারলাম না। দলের বড় নেতারা ছিল। এটুকু ভদ্রতা কী তারা দেখাতে পারতো না। তিনি না হয় ইনজেকশন নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন, অন্তত পক্ষে বসাতেও তো পারতো। এরপর কি করে সমঝোতা করবেন।

সহিংসতায় জড়িত থাকার ব্যাপারে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না ? এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা হুকুম দিয়েছে অর্থ যোগান দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। আইন কাউকে ক্ষমা করে না। খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে যেভাবে মানুষ পোড়ালো আমি জানি না পৃথিবীর ইতিহাসে এমন হয়েছে কি না। গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখনক্ষমতায় আসি তার আগে কোনো প্রাইভেট চ্যানেল ছিল না। আওয়ামী লীগ দিয়েছে।তিনি এ সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ২০ এপ্রিল খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরে থাকা সিএসএফএর গাড়ির নিচে চাপা পড়ে সাধারণ মানুষ আহত হয়। সংবাদমাধ্যমে আমি যে উন্নয়ন করালাম সেটা গুরুত্ব পেল না। কিন্তু তিনি মানুষ খুন করলেন তার ছবি বড় বড় করে ছাপালেন। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্র ব্যবহার করছে কিন্তু গণমাধ্যম তা দেখায়নি। বাসে আগুন দেওয়ার সময় তো লাল কালি দিয়ে দেখাননি এটা বিএনপি নেতা, জামায়াত নেতা। কিন্তু কারওয়ান বাজার লিখলেন এটা ছাত্রলীগের, ওটা যুবলীগের।কারওয়ান বাজারের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হরতালের কারণে যাদের ব্যবসা মন্দ হয়েছে, রাস্তায় বের হতে পারেননি। তারাই খালেদা জিয়াকে কালো পতাকা দেখিয়েছেন।খালেদা জিয়া নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি নির্বাচনের আচরণবিধি মালা তিনি মানেননি। ১৯৩টি মোটরসাইকেল ও ৯৬টি মাইক্রোবাস নিয়ে আইন ভঙ্গ করে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন। গণমাধ্যম কেন তখন কোনো কথা বলেনি ?

দেশের সম্ভাব্য ভূমিকম্প নিয়ে সরকারের প্রস্তুতি কী এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমিকম্প নিয়ে আমাদের সরকারের আগে তেমন কোনো প্রস্তুতি ছিল না। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাকে প্রশ্ন করতেন, তিনি কি করেছেন। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার আসার পরে ১৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ভূমিকম্প হলে তারা উদ্ধার করবে। আগে ছয় তলার বেশি উপরে আগুন লাগলে তা নেভানো যেত না। আমরা কয়েকশ’ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনেছি। আমাদের পক্ষ থেকে যতটা করা হয়েছে, অতীতে কোনো সরকার তা করেনি।ভূমিকম্প প্রতিরোধে দায় একার সরকারের নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধানমন্ডিতে আগে ছয়তলা করার অনুমোদন থাকলেও বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৫ তলা পর্যন্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।এর আগে লিখিত বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নেপালের ভূমিকম্পের ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে বলেন বাংলাদেশ নেপালের পাশে আছে। এর পর জাকার্তায় অনুষ্ঠিত আফ্রো এশীয় সম্মেলনে অংশ নিয়ে দেশের পক্ষে অর্জিত সাফল্যের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।