4bhj959554c56b1idz_620C350

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩০ নভেম্বর ২০১৫: নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে জামিন দিয়েছেন বিচারিক আদালত। একইসঙ্গে আগামী ২৮ ডিসেম্বর এ মামলার অভিযোগ (চার্জ) গঠনের শুনানির দিন ধার্য করে ওইদিন খালেদাকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার হাইকোর্টের আদেশে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান মামলাটির প্রধান আসামি খালেদা। শুনানি শেষে তার জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন ঢাকার বিশেষ জজ-৯ আমিনুল ইসলামের আদালত। বেলা বারটা ২৫ মিনিট থেকে ৩৫ মিনিট পর্যন্ত আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

জামিনের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন খালেদার প্রধান আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাকে সহায়তা করছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবদিন মেজবাহ, অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলমসহ বিএনপির আইনজীবী নেতারা।দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল। বেলা সোয়া বারটার দিকে আদালতের এজলাসকক্ষে আসেন খালেদা। এর আগে সকাল সোয়া এগারটার দিকে রাজধানীর গুলশানের বাসভবন থেকে রওনা হন তিনি।মাত্র দশ মিনিটের শুনানি শেষে বিচারক এম আমিনুল ইসলাম জামিন মঞ্জুর করে এ মামলায় আসামিদের উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠনের জন্য ২৮ ডিসেম্বর দিন ঠিক করে দেন।

সোমবার বেলা ১১টা ১৬ মিনিটে গুলশানের বাসা থেকে রওনা হয়ে বেলা সোয়া ১২টায় পুরান ঢাকায় আদালত প্রাঙ্গণে পৌঁছান খালেদা।খন্দকার মাহবুব হোসেন, মাহবুব উদ্দিন খোকন ও নিতাই রায় চৌধুরীসহ আইনজীবীরা আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন।খালেদা পৌঁছানোর পরপরই রেবতি ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে খালেদার জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়।রাষ্ট্রপক্ষে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন মোশাররফ হোসেন কাজল ও মীর আব্দুস সালাম।

জামিনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে খন্দকার মাহবুব শুনানিতে বলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ। আগে থেকেই তিনি জামিনে ছিলেন। কখনো জামিনের অপব্যবহার করেননি।অন্যদিকে এর বিরোধিতা করে কাজল বলেন, আসামির জামিনের মেয়াদ শেষ। শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের সম্পদের হেফাজতকারী হওয়া সত্বেও প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি ও অন্য আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।সাদা শাড়ি পরিহিত খালেদাকে শুনানির সময় বসার জন্য চেয়ার দেওয়া হয়েছিল। দশ মিনিট দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক বিএনপিনেত্রীকে জামিন দিয়ে দেন। এদিকে খালেদার আত্মসমর্পণকে ঘিরে সকাল থেকেই পুরান ঢাকার আদালত পাড়ার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ও আশেপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয় দেড় শতাধিক পুলিশ ও র‌্যাব।আদালত ফটকে আর্চওয়ে বসানোর পাশাপাশি কর্মচারী ও জনসাধারণকে প্রয়োজনে তল্লাশি করেন পুলিশ সদস্যরা। আশপাশের সড়কগুলোতে যান চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খালেদা গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলা দায়ের করে দুদক। পরের বছর ৫ মে খালেদাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।এতে অভিযোগ করা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে তুলে দেওয়ার মাধ্যমে আসামিরা রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি করেছেন।মামলা হওয়ার পর খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতে গেলে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই দুর্নীতির এই মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে হাই কোর্ট, সেই সঙ্গে দেওয়া হয় রুল।মামলা দায়ের কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। ২০০৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এ মামলায় জামিন পান খালেদা।প্রায় সাত বছর পর চলতি বছর শুরুতে রুল নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলাটি সচল করার উদ্যোগ নেয় দুদক। খালেদার আবেদনে রুলের ওপর শুনানি করে গত ১৮ জুন রায় দেয় হাই কোর্ট।খালেদার করা আবেদন খারিজ করে মামলার ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়া হয় ওই রায়ে। সেই সঙ্গে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়।

খালেদা জিয়া ছাড়া এ মামলার বাকি আসামিরা হলেন- চার দলীয় জোট সরকারের আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, তখনকার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, বিতর্কিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া (সিলভার সেলিম) এবং নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

গত ১৮ জুন খালেদার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম বিচারিক আদালতে চলবে বলে রায় দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ। মামলাটি বাতিলে খালেদার রিট আবেদন ও এ সংক্রান্ত রুল খারিজ এবং বিচারিক কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে দুই মাসের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তবে তার জামিনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে নিম্ন আদালতকে বলেছেন উচ্চ আদালত।নাইকো ছাড়াও গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা দু’টিও বিচারিক আদালতে চলবে বলে চূড়ান্ত রায় দিয়ে খালেদাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এসব দুর্নীতি মামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা বাতিলের আবেদন জানিয়ে পৃথক পৃথক রিট করেছিলেন খালেদা জিয়া। এসব রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি মামলাগুলোর কার্যক্রম স্থগিত ও রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। কয়েক বছর ধরে স্থগিত থাকার পর মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নিয়ে রুল নিষ্পত্তির আবেদন জানায় দুদক। পরে পৃথক পৃথক শুনানি শেষে মামলা তিনটি সচলের রায় দেন হাইকোর্ট।এসব মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া।কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি করেন।২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান।এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই নাইকো দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত ও রুল জারি করেন আদালত। পরে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়।