19-11-16-pm_video-conferencing-with-ctg-division-6

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে প্রচার কার্যক্রম চালানোর জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অন্য কোনো দল ক্ষমতায় এলে দেশ পিছিয়ে পড়বে।বুধবার বার্তা সংস্থা বাসসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাঙ্গেরির বুদাপেস্টের ফোর সিজনস হোটেলে অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, কেবল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। অন্য কোনো দল ক্ষমতায় এলে দেশ পিছিয়ে পড়বে।অনেক ত্যাগস্বীকার করেছে, এ জন্যই আওয়ামী লীগ আন্তরিকভাবে দেশের উন্নয়ন চায়। দেশকে উন্নত করা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব এবং এটি আমরা অব্যাহত রাখব, ইনশা আল্লাহ।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া দল। যে দল দেশের স্বাধীনতা নিয়ে এসেছে, কেবল তারাই দেশের উন্নয়ন করতে পারে। অন্য কোনো দল তা পারবে না। এ সময় প্রবাসী বাংলাদেশিদের আগামী সাধারণ নির্বাচনের প্রচার কার্যক্রম শুরুর আহ্বান জানান তিনি।প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা যখন দেশে ফিরবেন, তখন গ্রামবাসীকে একটি প্রশ্ন করবেন, তারা উন্নয়ন চায়, নাকি উন্নয়ন চায় না।

সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা অনিল দাসগুপ্ত। অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় দেশ থেকে আসা আওয়ামী লীগ নেতারা বক্তব্য দেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। পানি সম্মেলন উপলক্ষে হাঙ্গেরিতে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশের পথে রওনা হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বুধবার স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ১০টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল সোয়া ৩টা) বুদাপেস্টের ফিরেন্স লিজৎ বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ ‘আকাশ প্রদীপ’ প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হয়।বিদায়ের সময় হাঙ্গেরির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম জানায়।

বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও হাঙ্গেরিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম আবু জাফর বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের প্রথম সরকারপ্রধান হিসেবে এই সফরে পানি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন শেখ হাসিনা। তাদের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্েয তিনটি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়।পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।গত রোববার সকালে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে বিকালে বুদাপেস্টে পৌঁছানোর কথা থাকলেও বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় তুর্কমেনিস্তানে জরুরি অবতরণ করতে হয়। সেখানে চার ঘণ্টা অনির্ধারিত যাত্রা বিরাতির পর বিমান সারিয়ে নিরাপদে বুদাপেস্টে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা।প্রধানমন্ত্রী হাঙ্গেরি যাওয়ার সময় ব্যবহার করা হয়েছিল বিমান বহরের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ ‘রাঙা প্রভাত’। দুই ইঞ্জিনের একটিতে ‘ফুয়েল প্রেশার’ হঠাৎ কমতে শুরু করায় তাৎক্ষণিকভাবে সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর হিসেবে আশখাবাতে বিমানটি জরুরি অবতরণ করানো হয় বলে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সেদিন জানিয়েছিলেন।ওই যান্ত্রিক ত্র“টির কারণ অনুসন্ধানে তিনটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ভিভিআইপি ফ্লাইট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার পরিচালককে করা হয়েছে সাময়িক বরখাস্ত। মেনন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার আগেই কমিটির অনুসন্ধান শেষ করে দায়ীদের শাস্তি দেওয়া হবে।বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানান, প্রধানমন্দ্রী এবার ফিরছেন বিমানেরই আরেকটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ, আকাশ প্রদীপে করে। মঙ্গলবার রাতেই রিয়াদ থকে বিমানটি বুদাপেস্টে পৌঁছায়।ফ্লাইট পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন ক্যাপ্টেন জামিল ও ক্যাপ্টেন তোফায়েল। এছাড়া ফার্স্ট অফিসার হিসেবে রয়েছেন আনিস ও আইজান।শাকিল বলেন, এটা একদম নতুন বিমান, দুই বছর আগে আনা হয়েছে। সব ধরনের পরীক্ষা সেরেই যাত্রা করেছে।প্রধানমন্ত্রী রোববার বুদাপেস্ট পৌঁছালে বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই সফরে তিনি অবস্থান করেন ফোর সিজনস হোটেল গ্রেশাম প্যালেসে।দানিয়ুব নদীর পাড়ে ওই হোটেলের সামনের রাস্তা, সেতু, হাঙ্গেরির জাতীয় সংসদের সামনের কসুথ স্কয়ার এবং হিরোজ স্কয়ার সাজানো হয় বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরি পতাকা দিয়ে। শেখ হাসিনার নিরাপত্তায় হোটেলে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।সফরের দ্বিতীয় দিন সোমবার প্রধানমন্ত্রী বুদাপেস্ট ওয়াটার সামিটে যোগ দেন। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্বজুড়ে পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি। ওইদিনই তিনি ‘সাসটেনেইবল ওয়াল্ড এক্সপো’ পরিদর্শন করেন।রাতে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী হ্যানোস আদেরের দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

সফরের তৃতীয় দিন কর্মব্যস্ত সময় কাটান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দিনের শুরুতে হিরোজ স্কয়ারে হাঙ্গেরির জাতীয় নেতা ও সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে কসুথ স্কয়ারে তাকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। হাঙ্গেরির সংসদে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর আরবানের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেন তিনি। পরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন দুই নেতা।দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর পানি ব্যবস্থাপনা ও কৃষি ক্ষেত্রে সহযোগিতার পাশাপাশি দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।আগামী বছর থেকে বাংলাদেশের শিক্ষর্থীদের জন্য চিকিৎসা, কৃষি এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় পূর্ণ বৃত্তি দিতেও সম্মত হয়েছে হাঙ্গেরি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল হাঙ্গেরি। ইউরোপের যে দেশগুলো স্বাধীনতার পর বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল, তাদের মধ্েয হাঙ্গেরি অন্যতম।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশে হাঙ্গেরির দূতাবাস বন্ধ করে দেয় সে দেশের সরকার। দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে ২০১৮ সালের মধ্যে ঢাকায় আবারও হাঙ্গেরির দূতাবাস খুলতে পারে বলে ঈঙ্গিত পাওয়া গেছে।বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির পুরনো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এই সফরের মধ্েয দিয়ে উজ্জীবিত হবে এবং তা সম্ভাবনার পূর্ণতায় পৌঁছাবে বলে বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।মঙ্গলবার দুপুরে শেখ হাসিনা পানি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে হাঙ্গেরির রাষ্ট্রপতির দেওয়া মধ্যাহ্ন ভোজেও যোগ দেন তিনি।বিকালে হাঙ্গেরি-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। পরে হোটেলে ফিরে সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।তিন দিনের সফর শেষে বুধবার মধ্যরাতের আগেই দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।